woman suffering from summer heat. গর্ভাবস্থায় গরমে স্বস্তি পাবেন যেভাবে

গ্রীষ্মের উত্তাপ সবার জন্যই কষ্টকর, তবে গর্ভবতীর জন্য একটু বেশি কষ্টকর। কারণ গর্ভাবস্থার কারণে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এর সাথে গরম আবহাওয়াজনিত অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিরিক্ত তাপ যোগ হয়, যেটা গর্ভবতীর জন্য বেশ অসহনীয়। বর্তমান গরমের উত্তাপের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো অধিক আর্দ্রতা, যেটা গরমের বোধকে (Real feel) অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। 

শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং বর্ধিত তাপমাত্রার সাথে যখন গ্রীষ্মের খরতাপ যোগ হয়ে গর্ভবতীর অসুস্থ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক না। এজন্য দরকার অতিরিক্ত সর্তকতা।

গর্ভবতীর শরীরে তাপমাত্রা যদি ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে, তবে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ এ সময় হিটস্ট্রোক, গরম জনিত অবসন্নতা ও পানিশূন্যতার মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

পানিশূন্যতা ব্রাক্সটন হিক্স বা ফলস পেইনের একটি কারণ। এছাড়া ওই কারণে মাথা ঘুরানো, চোখে ঝাপসা দেখা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তৈরি হতে পারে। 

পানিশূন্যতা বা গরম জনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে গেলে এর থেকে অসময়ে প্রসববেদনা (early labor) বা প্লাসেন্টা স্থানচ্যুত (placenta abruption) হয়ে যাওয়ার মত জটিলতা তৈরি হতে পারে।

কীভাবে এই কঠিন সময় পাড়ি দিবেন, তা আলোচনা করা যাক।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট পানি পানের গুরুত্ব আপনি এর মাঝেই জানেন। এই গরমে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হবে। শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া এই অতিরিক্ত পানি ফেরত দেয়া আবশ্যক।

তাই বাসার বাইরে গেলে সাথে সাথে পানি রাখুন, যাতে তৃষ্ণার্ত হলেই চুমুক দিতে পারেন। শুধু পানি খেতে ভালো না লাগলে বিভিন্ন রকমের ফলের জুস সাথে রাখতে পারেন। 

পানি পানের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পানি পান করা অথবা একেবারেই পান না করা, দুটো থেকেই বিরত থাকুন। এরকম প্রান্তিক (extreme) আচরণের কারণে ওয়াটার ইন্টক্সিকেশন (water intoxicatoin) নামে এক ধরনের অবস্থা তৈরি হয়। তখন শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মাংসপেশীতে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা হয় এবং বিপদজনক ক্ষেত্রে গর্ভবতী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

ঠান্ডায় থাকা

গর্ভাবস্থার কারণেই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। সাথে গ্রীষ্মের গরম আপনাকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে বাসাতেই থাকুন। বাসায় এয়ার কন্ডিশনার থাকলে সেটা ব্যবহার করুন অথবা ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় ঘাড়ে কপালে বা মাথায় দিন। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 

সাঁতার কাটা

শরীর ঠান্ডা করার জন্য সাঁতার কার্যকর। সাঁতারের আরেকটি ভালো দিক হলো পানিতে থাকার সময় পেটের সন্তানের অতিরিক্ত ওজন আপনাকে বহন করতে হবে না। কিছু সময়ের জন্য আপনি পিঠ ব্যথা সহ অন্যান্য অস্বস্তি থেকে মুক্ত থাকবেন। 

উপযোগী জামা পরিধান

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম থেকে স্তন এবং তলপেটে এক ধরনের র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। এজন্য সুতি কাপড়ের তৈরি অথবা একটু ঢিলেঢালা জামা গর্ভবতীর জন্য আরামদায়ক।

পা ফোলার সমস্যা

যদি আপনার গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার (১৪ থেকে ২৬ সপ্তাহ) গ্রীষ্মকালে পড়ে যায়, তাহলে পা ফুলে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে পারেন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ফিজিওলজিক এডেমা বলে। এ থেকে পরিত্রাণের কিছু টিপস তুলে ধরা হলো

  • দিনের বেলা ৩০ থেকে ৬০ মিনিট শুয়ে থাকুন। এটা হতে পারে সারাদিনের কাজের শেষে অথবা দুপুরবেলা খাবারের পর।
  • এ সময় পায়ের নিচে বালিশ বা কম্বল দিয়ে পা উপরের দিকে রাখুন।
  • হাঁটার সময় আরামদায়ক জুতা পড়ুন। স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বড় জুতা বেছে নিন।
  • দিনের মধ্যভাগের উচ্চ তাপমাত্রা এড়িয়ে অন্য সময় একটু হাঁটাহাঁটি করুন।
  • হাতের আংটি বেশি আঁটসাঁট মনে হলে খুলে রাখুন। 

যা করবেন না

  • আঁটসাঁট জামা পরিধান থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে কোমরের কাছে।
  • একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
  • খাদ্যতালিকা থেকে লবন কমিয়ে ফেলুন, তবে একেবারে বাদ দিবেন না। লবণে আয়োডাইড রয়েছে, যেটা গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য বেশ উপকারী।
  • শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় বা ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ নিয়ে আসে এরকম ওষুধ বা মাদক থেকে দূরে থাকুন। অতিরিক্ত পানি বের হয়ে গেলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় যেটা গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য বিপদের কারণ।

আপনি যদি এসমস্ত টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন, তাহলে গরম জনিত জটিলতা এড়িয়ে অনাগত সন্তান নিয়ে নানারকম পরিকল্পনায় আনন্দদায়ক সময় কাটাতে পারেন। 

তথ্যসূত্র

১. ওয়েবএমডি
২. আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা