সিরিজ ইনডেক্স
১. ১ম পর্ব
২. ২য় পর্ব
৩. ৩য় পর্ব

দৌলা এবং চাইল্ড বার্থ এডুকেটর হিসেবে আমানি বার্থ থেকে সার্টিফিকেট প্রাপ্তির পর সরাসরি বার্থ দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মাদ্রাসার গার্ডিয়ান, প্রতিবেশী বোন… মোটকথা পরিচিত কাউকে পেলে বলে রাখতাম আমাকে একজন গর্ভবতী মা খুঁজে দিতে। আমাদের দেশে প্রসব বিষয়টা একটা ট্যাবু, তাই কাউকে বললে সেও একটু অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতো। কাছের মানুষদের আমার কোর্স এর বিষয়ে বিস্তারিত বলতাম।

সার্টিফিকেশনের রিকোয়ারমেন্টটা এরকমঃ আমাকে সরাসরি অন্তত একটা সন্তান প্রসব বা লাইভ বার্থ এটেন্ড করতে হবে।

সেইরকম এক ভাবী জানালেন এই “মা” ভাবীর কথা। তখন খুব সম্ভবত তিনি প্রথম ট্রাইমেস্টারের গর্ভবতী। খোঁজ পেলেও আর তার বাসায় যাওয়ার চিন্তা করলেও যাওয়া হয়ে উঠত না। করোনা কালীন সময়ে কারও বাসায় সশরীরে গেলে কী ভাববে, আর আমার কোর্স নিয়ে কথা বললে পাগল ভাবে কিনা সেই সংকোচে যেতে পারিনি। নিজে থেকে গিয়ে বলতে পারিনি যে আমি আপনার জীবনের স্মৃতি বিজড়িত এই অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান আহরণ করতে চাই। মানে তার প্রসব এর সময় থাকতে চাই। হঠাৎ করেই আল্লাহ সুযোগ করে দিলেন।

দৌলা আমানিবার্থ লাইভ বার্থ

রমজান মাস। বাসায় বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ফিরছিলাম। আরো দুই ভাবীর সাথে রাস্তায় দেখা।  তারা দ্বীনের দাওয়াতী কাজের অংশ হিসেবে এই হবু “মা” এর বাসায় যাচ্ছিলেন। আমি ছোট বাচ্চা কোলে নিয়েই সাতপাঁচ না ভেবেই সাথে চলে গেলাম। অনেক কথার ফাঁকে ‘মা’ ভাবীর  হিমোগ্লোবিনের কথা চলে আসল। তখন তার ৪ মাস। কী করলে হিমোগ্লোবিন বাড়তে পারে আমি একটু আগ বাড়িয়ে সেই বর্ণনা দিচ্ছিলাম।  এক ভাবী আমার পটরপটর শুনে মনে মনে ক্ষেপে গেলেও তাৎক্ষণিক প্রকাশ করলেন না। পরে শুনেছি, প্রেগনেন্সি বিষয়ে অভিজ্ঞ না হয়েও আমার এত উপদেশ বাণী উনার কাছে অশোভন লেগেছে। আমি অবশ্য আমার কাজ নিয়ে কিছু বলিনি। তাই এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সাধারণ মায়েরা কোন গর্ভবতী মায়ের সাথে একত্রিত হলে নিজের গর্ভকালীন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য শেয়ার করেন। এটাই বা কম কীসে! যা আমিও সুযোগ পেলে করতাম। (তবে এখন সার্টিফাইড হতে গিয়ে জানলাম every pregnancy is different, even in case of multigravida mother, she can face different experience with every childbearing)

কারও প্রেগন্যান্সির সাথে অন্য কারও প্রেগন্যান্সি মিল থাকতেও পারে, আবার না ও থাকতে পারে। তাদের বিভিন্ন উপদেশে আমার পালা কখন আসবে সেই অপেক্ষা করলাম না। আমি তো বিদ্যার ঝুলি খুলতে পেরে ব্যাপক উত্তেজিত। আমার অতিকথনে তাদের বিরক্ত হওয়ারই কথা। (তাছাড়া বড় ছেলে আর ছোটো ছেলের পিছনে ব্যয় হওয়া আমার কন্ঠ এখন ভাঙ্গা টেপরেকর্ডার)। আমার উপর বিরক্ত হওয়ার বিষয়টি পরে জেনেছি।

প্রথম থেকেই এ‘ মা’ ভাবী ( ঠিক প্রতিবেশী বলা যায় না তবে এক‌ই এলাকার) কিছুটা লজ্জা পাচ্ছিলেন। আমিই আগ বাড়িয়ে দেখা করতাম। সব ভিজিট ছোট ছেলে কোলে নিয়ে। ফোন দিতাম। একদিন বহু কথা বলে তাকে বাসায় নিয়ে আসলাম। ব্যায়াম দেখালাম। লেবার পেইন নিয়ে আলোচনা করলাম। তার বিগত দুই ডেলিভারির অভিজ্ঞতা শুনলাম খুব মনোযোগ দিয়ে। কোন জায়গাটা তার মানসিক দুর্বলতার, তা বোঝার চেষ্টা করলাম। আমি নিজে স্বেচ্ছায় তাকে ভিজিট করছিলাম, আর আমার কথার সাথে বিভিন্ন প্রেগন্যান্সি লেকচার এর মিল পাওয়াতে ‘মা’ ভাবী আমার উপর কিছুটা আস্থা রাখতে শুরু করলেন।

প্রথম ৭-৮ মাস একজন মা যতটা স্থির থাকতে পারেন, শেষ সময়ে এসে আর সেই স্থিতিশীলতা ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। শেষ দিকে এসে তিনিই আমাকে ফোন দিতেন বিভিন্ন সমস্যার কারণ জানতে। তেমন কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছি। গর্ভকালীন সময়  বা gestational age বাড়া শুরু করলে ছোট খাটো কিছু সমস্যা হতে পারে যার পিছনের কারণ জানতে পারলে ঐ সময়টাতে মন ও শরীর দুটোই ভালো রাখা যায়।

এতটুকু হল হারিকেন জ্বালিয়ে  ‘মা’ খোঁজার কষ্টকর ‌অভিযান। আল্লাহর কাছে অনেক দু’আ করতাম যেন একটা প্রসব দেখার অভিজ্ঞতা হয়। আল্লাহ তার  বান্দাকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। আলহামদুলিল্লাহ। 


আপনি যদি গর্ভধারনের কথা ভেবে থাকেন বা বর্তমানে গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য শতভাগ পরামর্শ থাকবে মাতৃত্ব প্রীনাটালা ক্লাস করার। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন মাতৃত্বের এই অসাধারণ সময় নিয়ে। মাতৃত্ব প্রিনাটাল কোর্সের বিস্তারিত জানুন এই লিংকে গিয়ে। প্রেগন্যান্সী আমাদের মেয়েদের জীবনে চমৎকার একটা জার্নি। এই সময়টা নানান শারীরিক, মানসিক পরিবর্তনে ভরপুর। আপনার প্রেগন্যান্সী জার্নিটা তখনি সুন্দর হবে, যখন আপনার বিষয়গুলো জানা থাকবে।

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা