সিরিজ ইনডেক্স
১. ১ম পর্ব
২. ২য় পর্ব
৩. ৩য় পর্ব

সেই ভাবীর ইডিডি ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। তার পূর্বের দুটো লেবার যথাসময়ে শুরু হয়েছিল ও ডেলিভারিও ইডিডি মোতাবেক হয়েছিল, তাই আমি ধরে নিয়েছিলাম যে ঐ দিনই ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু আমার অনুমান ভুল হল, ইডিডি এর সাথে প্লাস মাইনাস দুই সপ্তাহ ধরে রাখতে হয়। আমি নিজে অবশ্য তাকে ডিউ ডেটের এই থিওরী বুঝিয়ে  দিলেও একটু টেনশনে পড়ে গেলাম। পরে ভেবে দেখলাম  বাসা পাল্টানোর ধাক্কায় তার উপর অনেক শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়েছিল, যা হয়তো ফিজিওলজি তে প্রভাব ফেলেছে। ফলশ্রুতিতে তার এডেমা দেখা গিয়েছিল, দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করা লাগত।  রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যেত। তাছাড়া বড় বাচ্চাগুলোর পেছনে প্রচুর সময় দিতে হত। 

আমার দৌলা অভিযান(২য় পর্ব)

ভালো সংবাদ ছিল এটা যে তার শেষ সপ্তাহ থেকে প্রচুর ফলস পেইন হচ্ছিল। ফলস পেইন গুলো রাতে উঠত। প্রায় তিন ঘণ্টা যাবত থেকে আবার নাই হয়ে যেত । এখানে যে আল্লাহ কী সুষ্ঠু এক নিয়ম বজায় রেখেছেন তা একটু খেয়াল করলে বোঝা যায়। এই পেইন গুলোর মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে সামনে আগমনকারী আসল পেইন গুলোর জন্য তৈরী করছেন। হঠাৎ তীব্র ব্যথার যন্ত্রণা না দিয়ে আপনার রব আপনাকে ইহসান করছেন। এই জন্য পুরো প্রেগন্যান্সি জুড়ে আল্লাহর কাছে কঠিন কাজ সহজ করার দু’আ করা উত্তম। 

হ্যাঁ,আল্লাহ এভাবেই সাহায্য করতে পারেন। যেমনটা এই মা এর  সাথে সাথে  আমাকেও করেছেন। 

আগে থেকে কথা ছিল আদ-দ্বীন হাসপাতাল এ যাওয়া হবে। বাসার কাছে জুরাইন আদ-দ্বীন । কিন্তু অনাগত সন্তানের বাবার ইচ্ছা মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতাল এ যাবে। আমি কোন প্রেশার দেইনি। সাজেশন হিসেবে বলেছিলাম যে যেহেতু পূর্বে মায়ের দুটি নরমাল ( নট ন্যাচারাল ) প্রসবের অভিজ্ঞতা আছে , তাই এই বার তার জন্য সবকিছু আরো সহজ হবে। ভয় না পেয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বললাম। 

মগবাজার আদ-দ্বীন আমার বাবার বাসার কাছাকাছি হওয়াতে, পরিকল্পনা ছিল বাচ্চা তিনজনকে সাথে করে নিয়ে নানা বাড়িতে রেখে আসব। এরপর আমি হাসপাতালে যাব। ভাবী তার লেবার পেইন এর আর্লি স্টেজে 

আমাকে ফোন দিলেই একসাথে রওনা দিব। শুক্রবার একটা বিয়ের দাওয়াতে গিয়েও চিন্তায় ছিলাম যে কখন না জানি পেইন উঠে। আল্লাহ এমন সহজ করে দিবেন, তার চিন্তাও করিনি। শনিবার এ আমার হাসব্যান্ড বাসায়, ‌সুদী কারখানা মানে ব্যাংক বন্ধ। ভাবী সকাল ৭:৩০ এ ফোন দিলেন ভোর ৫ টা থেকে  আবারো পেইন উঠেছে। ফলস পেইন হতে পারে ভেবে ফোন দেননি। এখনো ব্যথা আছে , আর কন্ট্রাকশন ধারাবাহিক ভাবে ২০ মিনিট পরপর হচ্ছে – তাই আমাকে জানিয়ে দিলেন। আমি প্রাথমিক কিছু ইন্সট্রাকশন দিলাম। এর পর আমি যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তড়িঘড়ি করে দুপুরের রান্নার কাজে লেগে গেলাম। প্ল্যান চেইন্জড। 

বাচ্চাদের বাবা বাসায় থাকায় আমি আর প্রেশার নিলাম না। ওদেরকে বাবার সাথেই থাকতে হবে জানিয়ে দিলাম। (বড় ছেলের মুখের কালো মেঘ মেয়ের মুখেও ছায়া দিল … নানাবাড়ীর দুঃখে) 

আমি দেড়ঘন্টায় কোন ফোন না পেয়ে ভাবীকে ফোন দিলাম। বললেন ব্যথা মনে হয় কমে যাচ্ছে। আমি আবারও  হতাশ হলাম। বিষয়টা আমার ইন্সট্রাক্টর আইশা আল হাজজার কে জানিয়ে রাখলাম। 

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা