আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমার হাসবেন্ড বিবিএ ফাইনালে পড়েন। উনি পরিবারের একমাত্র সন্তান। তাই বিয়ে ও সন্তান নেয়া হলো আমাদের খুব তাড়াতড়ি। যদিও উনার বয়স তখন ২৩ আর আমার ২২, কিন্তু আমাদের বাচ্চা হবার সিদ্ধান্ত আমরা খুব ভেবেচিন্তে নিয়েছিলাম।
আমি তখন নিয়মিত ক্লাস করতাম, পরীক্ষা দিতাম। তো ডেলিভারির সময় আসার কয়েকদিন বাকি, আম্মু ডাক্তার সেলিনা খানকে একদিন গিয়ে বললেন, “ওর তো অনেক কষ্ট হবে, তাই সিজার করে ফেলেন।”
ডাক্তার আম্মু কে বললেন, “আপনার মেয়ের তো কোনো সমস্যা নেই, কেন আমি সিজার করব? এত ছোট মেয়ের কেন আমি খুঁত করব? সময় যাক।”
আম্মু বাসায় এসে আমার বড় ফুপুকে ফোন দিয়ে বলেন, “আপা জানেন? আপনার ভাস্তি ডাক্তারের সাথে কিনা বলে নরমাল ডেলিভারি করাবে, বলেন তো আপা ওর কত কষ্ট হবে, ওর কত বড় সাহস, আমি তো বলসি সিজার করতে।” ফুপুজিও বললেন, “তাইতো,আমার ছেলের বউরা তো সবাই সিজার করেছে। নরমালে তো অনেক কষ্ট, প্রভা এত কষ্ট করতে পারবে না।”
৫ জানুয়ারি ২০১৪। ওইদিন ছিল ভোট। ড্রাইভার ভোট দিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। আমার ঘুম ভেঙে গেল রাত ৩.৩০ টায়। কেমন যেন লাগছে। বুঝলাম ব্যথা শুরু হয়েছে। একা একাই উঠে রেডি হতে লাগলাম। চুলে বেনি করলাম। ব্যাগের জিনিসপত্র ঠিকঠাক করলাম। একটু পর আম্মু উঠলে আম্মুকে জানালাম। সকালে আব্বু আর আম্মু ক্লিনিকে নিয়ে গেল। ডিউটি ডাক্তার দেখে বললেন, আরও সময় লাগবে। বাসায় চলে যেতে বললেন। আমরা বাসায় চলে আসলাম। সারাদিন একটু একটু ব্যথা করছিল।
এভাবে রাত ৯ টা বাজল। আম্মু আবার নিয়ে গেলেন ক্লিনিকে। আবার চেকআপ। এবার ব্যথাটা ঘন ঘন হচ্ছে। আমি ফ্লুইড ভাংগার অনুভুতি পেলাম। ডাক্তার লেবার রুম রেডি করতে বলেন। একজন কে যেন বললেন, ওকে রেডি করান। ডাক্তার বললেন, ও তো রেডি হয়েই এসেছে! আমি হেঁটেই লেবার রুমে গেলাম।
আমাকে শোয়ানো হলো। একটু পানি খেতে চাইলাম। আমার মুখে হালকা গরম পানি দেয়া হল। পানি খেলাম। আমাকে গ্লিসারিন সাপোজিটরি দেয়া হয়। আমার মনে হলো যেন বাথরুম করার জন্য চাপ দিলাম, আলাদা করে পুশ করার জন্য চাপ দিয়েছি মনেই হলো না। এরপর আমি কান্না শুনলাম ৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ মেয়ের মা হলাম।
আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলাম যাতে সহজ করেন। আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ তিনি আমার জন্য অনেক সহজ করেছিলেন!!
![](https://matritto.b-cdn.net/wp-content/uploads/2020/07/30a66b40564d822a0fdf6ada05125821-adorable-babies-beautiful-babies.jpg)
২০১৮ সালে আবার সন্তানসম্ভবা হলাম। এবার মেয়ের স্কুল, নিজের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু ডাক্তার কিছুদিন বেডরেস্টে থাকতে বলেন। কারন মাঝে একবার একটা মিসক্যারেজ হয়। ডাক্তারের কথাই শুনলাম ও মানলাম।
এবার আটমাসের সময় থেকেই ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম। ডাক্তার বললেন, ফলস পেইন। কিন্তু সহ্য করা খুব কঠিন ছিল। ভয়ে ভয়ে ক্লিনিকে গেলাম। ইঞ্জেকশন দিল। ব্যথা কমে গেল। আবার কয়েকদিন পর ব্যাথা হয়, এভাবেই চলছি। সহ্য করার অভ্যাস করে নিলাম।
২৮ মার্চ ২০১৯। অনেক বেশি ব্যথা সকাল থেকে। ক্লিনিকে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন আরও সময় লাগবে। এভাবে বিকাল হলো। ব্যথা বাড়ছে। মাগরিবের আজানের পর টের পেলাম পানি ভেংগেছে। এরপর ডাক্তার লেবার রুমে নিয়ে গেলেন। যাবার পর সাথে সাথে আমার ছেলে দুনিয়াতে প্রবেশ করল। আলহামদুলিল্লাহ এই হলো আমার প্রতি আল্লাহ তায়ালার দেয়া দুইটি নরমাল ডেলিভারির গল্প।
![](https://matritto.b-cdn.net/wp-content/uploads/2020/07/deb05904a3780a08f017a507e0466d5b-1-684x1024.jpg)
আমি নিয়মিত দুইটা কাজ করেছি,
১. দুয়া
২.তাহাজ্জুদ
আমার পড়াশোনার বিষয় ছিল শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক। এই বিষয়ে আমি অনার্স করেছি।(আমার ছেলেকে ৩ মাস এর পেটে নিয়ে আমি কনভোকেশনে অংশ নেই)। তাই আমার ব্যাক্তিগত জীবনে পুঁথিগত বিদ্যাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি। আসলে মা হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে শুধু মা হওয়া কেন, ইহজীবনের সব কাজই সহজ হয়। ওয়াল্লাহু ‘আলাম।
(লিখেছেনঃ প্রভা)
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Pinterest