বাচ্চার বয়স চার বছর, নাম আহনাফ। ধর্মীয় কারনে খৎনা করাতে হবে। মা বাবা ভয়ে অস্থির। চলে এলেন শিশু বিষয়ক সার্জনের কাছে। কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা হল। এরপর বাচ্চাকে বাবা মা নিয়ে এলেন একজন অ-বেদন-বিদের কাছে। এই শব্দটির অর্থ হল যিনি বেদনা নাশ করার জন্য বিশেষজ্ঞ। ব্যথা কি বুঝেন বাবা মা, বাচ্চা তা বুঝে না। অজ্ঞানের ডাক্তার তাঁদের বসতে দিলেন। বাচ্চা খানিকটা বিব্রত এপ্রন পড়ে বসে থাকা অদ্ভুত কাউকে দেখে। হাতে সুই নেই বলে খানিকটা ভয়হীন।

আহনাফের মা বাবার কাছে ডাক্তারের-মানে আমার প্রথম প্রশ্ন, “বাচ্চাকে এই বিষয়ে কিছু জানিয়েছেন?” কেউ জানায়, কেউ বা জানায় না। এই অভিভাবক বললেন- “এখনো জানাইনি। তবে ওকে এক্সামিন করেছেন সার্জন আর ওর রক্ত নেয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য”। এবার প্রশ্ন করি “আহনাফের জন্ম কোথায়? হাসপাতালে না বাড়িতে? নয় মাস পুরা হয়েছিল? স্বাভাবিক প্রসব নাকি সিজারিয়ান? কেঁদেছিল সাথে সাথে? জন্মের পর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল? অথবা এই চার বছরে বড় কোন অসুখ বিশুখ? এখন অন্য কোন সমস্যা নেই ত? বিশেষত ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর?” সব জেনে কাগজে তা লিপিবদ্ধ করতে হয়। এরপর ওজন নেয়া হয় এবং আহনাফকে বসানো হয় আমার পাশেই। ভ্রু কুঁচকে বসে আছে বাচ্চাটা। আমার তাঁর কাছে প্রথম প্রশ্ন, “তুমি কি বেলুন ফুলাতে পারো?” কেউ বলে হ্যা পারি, কেউ বলে উহু, কেউ নিরুত্তর থাকে। নিজেই হয়ত মুখ ফস্কে বলে ফেলে “আব্বু বেলুন ফুলাতে পারে, আম্মু পারে না”। অর্থাৎ অজ্ঞানের ডাক্তারের সাথে শিশু সহজ হচ্ছে। জানা থাকুক আর নাই থাকুক এবার বলা হয়, “আজকেই ওকে এত্তগুলা বেলুন কিনে দিন। এরপর যেদিন আসবেন সেদিন আমার সামনে ওকে বেলুন ফুলিয়ে দেখাতে হবে। শক্তি কত হয়েছে আমি বুঝতে চাই! আমি মার্কস দেবার পরে ওকে আগের ডাক্তার আঙ্কেলের কাছে নিয়ে যাবেন”।

আমার প্রতি তাঁর ভয় ভীতি কাটে।কিন্তু মা বাবার ভয় ভীতি কাটে না। আমি এবার জানাই, “আপনাদের যে কোন একজনকে আমি অজ্ঞান করা পর্যন্ত উপস্থিত রাখব আমার সাথে। যিনি বেশি সাহসী তিনি বেলুন ফুলানো শিখে আমার কাছে অমুকদিন আসুন” বার বার এই বেলুনের কথা কেন বলেছি সেটা আহনাফের বাবা মা সহ আমার পাঠকেরা নাহয় অজ্ঞান হবার দিনেই জানবেন। এরপর আমি লিখব বাচ্চার জন্য কি কি নির্দেশনা এবং কি ওষুধ খাওয়াতে উপদেশ দেয়া হবে সেই বিষয়ে।

“সুন্নতে খৎনা করানোর জন্য আগে মানুষ হাজামের কাছে যেতো। এরপর গ্রাম্য চিকিৎসক। কিছু সময় পরে এম বি বি এস ডাক্তারের কাছে লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে সার্জারি । আজকাল আর তা নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে রীতিমত অজ্ঞান করে অপারেশন। কেন এই আয়োজন? একটা জিনিস মনে রাখতে হবে অজ্ঞান করা এখন আগের চাইতে অনেক বেশি নিরাপদ। সুনির্দিষ্ট কিছু কারন আছে বলেই বাচ্চাকে অজ্ঞান করে সার্জারি করা হচ্ছে। তবে ঘাবড়াবেন না। আপনার সামনেই ওকে ঘুম এনে দিবো”। এগুলি বলতে হয় কিছু কিছু প্যারেন্টস দের। খেতে কেন নিষেধ করা হয় তাই নিয়ে আলোচনা আগে । তার ছেলেকে অজ্ঞানের আগে থাকতে দেয়া হবে বলাতে বেশ খুশি মনে কথা বলা শুরু করেছেন আহনাফের মা,আমার সাথে। আমি বললাম “ আপনার ছেলেকে অপারেশনের আগে ছয় ঘণ্টা কোন শক্ত খাবার খাওয়ানো যাবে না।দুধ তরল হলেও তা পেটে যাবার সাথে সাথে দই হয়, অতএব তাও খাওয়ানো যাবে না। অন্য তরল খাবার যেমন ফ্রুট জুস খাওয়াতে পারবেন চার ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। পরিস্কার তরল বা পানি ২ ঘণ্টা আগেও দিতে পারেন অল্প পরিমানে। এছাড়া অপারেশন শেষ হবার দুই ঘণ্টা পরে মুখে খাবার দেয়া যাবে” এবার উনি বেশ অসন্তোষ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, “তার মানে আমার ছেলে মোট নয়/ দশ ঘণ্টা না খেয়ে থাকবে?” আমি বললাম “হ্যা, এটা জরুরী” এটা বলা সত্ত্বেও আমার অভিজ্ঞতা বলে অনেক মায়েরা তাঁর বাচ্চার এতক্ষন ধরে না খাওয়ানোর উপদেশ আমলে নেন না এবং ডাক্তারের অগোচরে; এমনকি বাবার অগোচরে কিছু খাইয়ে নিয়ে আসেন।হাজার হলেও মায়ের মন! অতএব আমাকে এবার একটু শক্ত হতে হয়। মাকে বলি, “খাওয়ালে কিন্তু জীবনের ঝুকি” মা অবিশ্বাসীর মতন দৃষ্টি দেন। এবার আমি ব্যাখ্যা করি কেন না খেয়ে আসতে বলেছি।

“মন দিয়ে শুনুন। শ্বাসনালী আর খাদ্যনালী এরা পাশাপাশি থাকে। অপারেশনের আগে পেটের সবটুকু খাবার হজম হয়ে যেতে হবে। তা না হলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে সবটা খাবার শ্বাসনালীতে চলে এসে ভয়াবহ বিপদ ঘটাতে পারে।এতে বাচ্চা নীল হয়ে যাবে, শ্বাসকষ্ট হবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে”। এটুকু বুঝাতে যেয়ে একটা কথা আমাকে প্রায়ই বলতে হয়। “বিষম খাওয়া মানে হল বিধাতার দেয়া সেই সুরক্ষা, যা কিনা আমাদের এক কনা ভাত/ পানি শ্বাসযন্ত্রে যেতে দেয় না। তাঁর মানে এটা ঘটা মানে বিরাট অঘটন”।এভাবে বুঝিয়ে বলে দিলে সাধারণত মায়েরা বাচ্চাকে খাওয়ান না।

অনেক ভীতু বাচ্চাকে আমরা একটি ঘুমের সিরাপ দেই। এটি বাচ্চার ওজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রেস্ক্রাইব করতে হয়। বাচ্চা ঘুমাক বা না ঘুমাক, একটা ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে তখন আসে সে। বাচ্চার সমস্ত তথ্যাদি, উপদেশ গুলি নির্দিষ্ট ফরমে লিখে রাখেন অবেদনবিদ।মা বাবা অজ্ঞান করে অপারেশন করার সম্মতি পত্রে সই করেন যেখানে বিস্তারিত লেখা থাকে। এরপর এই ফরম সহই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন পূর্ববর্তী কক্ষে( preoperative room). বাচ্চাদের উপযুক্ত করে সাজানো থাকে সেই ঘর। টিভিতে কার্টুনের চ্যানেল, কিছু খেলনা সামগ্রী আর দেয়ালে কিছু রূপকথা বা প্রানীর ছবি এঁকে রেখে দিলে সেখানে ঢুকেই অনেক বেশি আনন্দিত থাকে জেগে থাকা নির্লিপ্ত বাচ্চাটি।

আহনাফের পরনে হাসপাতালের পোশাক। মাকেও রেডি করা হয়েছে। অজ্ঞানের ডাক্তার এলেন। হাতে একটি মাস্ক। বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হল সে 1-100 চেনে কিনা। পালস অক্সিমিটারের উত্তাপ হীন লাইটের বর্ণ হল উজ্জ্বল লাল। এটি দেখিয়ে বাচ্চাকে বলা হল এটি আঙুলে নিলে কম্পিউটার মনিটর মার্কস দেবে ওকে। আসলে এটি এমন একটি যন্ত্র যা দিয়ে রক্তের দ্রবীভূত অক্সিজেন মাপা হয় এবং তা সবটুকু থাকা মানে ১০০ %।সব সুস্থ রোগীর ক্ষেত্রেই নাম্বার উঠানামা করে ৯৭ থেকে ১০০ তে। এবার শিশুকে লক্ষ্য করতে বলা হয় আঙুলে লাগানো মনিটরের মাধ্যমে শক্তি পরীক্ষায় সে কত পাচ্ছে। বাসায় ফোলানো বেলুনের পরিবর্তে এবার এনেস্থেসিয়া মেশিনে লাগানো বেলুনের মতন ব্যাগ ফুলাতে। চার পাঁচটি বড় শ্বাস নিতে দ্বিধা করে না ছেলে বাচ্চা- কারন সে চায় ১০০ মার্কস পেতে। তাঁকে ক্রমাগত উৎসাহিত করে সবাই মিলে। এখানে আসলে সার্কিটের মাধ্যমে বাচ্চার শ্বাসনালীতে দেয়া হয় অক্সিজেন, লাফিং গ্যাস আর অবচেতন করার উদ্বায়ী গ্যাস।লাফিং গ্যাসের অন্য নাম নাইট্রাস অক্সাইড যা বাচ্চাকে খুশি রাখে। আর সেভফ্লুরেন হল সেই গ্যাস যা গন্ধহীন, ঝাঁঝহীন এবং নমনীয়। মাস্ক মুখে বেলুন ফোলাতে ফোলাতে বাচ্চা নিদ্রার কোলে ঢোলে পড়তে থাকে। এসময় কিছু বাচ্চা কিছুটা ছটফট করলেও সেই স্মৃতি সে ভুলে যাবে এবং মাকে/ বাবাকে জানানো হয় এতে ভয়ের কিছু নেই। হ্যা এভাবেই নিজের মানুষের পাশে থেকেই বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ে।

মেজর অপারেশন না হলে বা আগে থেকে আই ভি ঔষধ না পেলে বাচ্চাকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দেয়া হয় শিরায় ক্যানুলা।এরপর ডেক্সট্রজ নরমাল স্যালাইন। স্যালাইনের মাধ্যমে পুশ করা হয় বেদনা নাশক ওষুধ। খৎনা করার ক্ষেত্রে আমরা বাড়তি একটা ইনজেকশন পুশ করি পিঠের একদম নীচের দিকে(caudal block )। এতে বাচ্চা ঔষধ ছাড়াই চব্বিশ ঘণ্টা অবধি ব্যথামুক্ত থাকে। ঘা শুকাতেও এই ইনজেকশনের ( anti-inflammatory) ভুমিকা আছে। এবার সার্জন ছুড়ি, কাচি নিয়ে আসেন চামড়া কেটে সেলাই করতে।

আচ্ছা অপারেশন তো সামান্য, তাহলে কেন এত আয়োজন?বাচ্চা একটু বড় হলে অনেক কিছুই মেনে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৭/৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে করা যায় লোকাল দিয়ে। কিন্তু বিপত্তি হল পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত। অনেক সময় অন্য অসুস্থতার কারনেও খৎনা করানো দরকার হয়ে পড়ে। গবেষণা বলে-মা বাবাকে ছেড়ে বাচ্চার এই বয়সে অন্যত্র যেতে একধরনের দুশ্চিন্তা ভর করে( separation anxiety). ডাক্তার আর নার্সেরা মিলে হাত পা চেপে ধরে ক্যানুলা করলে বা মাস্ক মুখে চেপে ধরলে এতেও বাচ্চার মনের উপর চাপ পড়ে।অজ্ঞান না করে অপারেশন করলেও বাচ্চার একই রকমের মানসিক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে স্থির করা গেলে সার্জন ঠিক যতটুকু জায়গা জুড়ে কাজ করতে চান তা সহজে করতে সফল হন। বাচ্চা জেগে থাকলে যে মানসিক ক্ষতি হয় তার ধারাবাহিকতায় শিশু পরবর্তীতে ইন্সিকিউরড ফিল করে ভীতু হতে পারে। প্রতিশোধ স্পৃহা জন্মানোর কারনে অপরাধী হতে পারে। দেখা যায় আমাদের চারপাশের অনেকেই ডাক্তারদের প্রতি খুব বিদ্বেষ মুলক মনোভাব প্রকাশ করেন- এরকম আজন্ম ক্ষোভ জন্ম নিতে পারে। মোট কথা এই psychological trauma থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখার দায়িত্ব অবেদনবিদের। যিনি বেদনা নাশ করেন তিনি রোগীর শারিরিক, মানসিক সকল বেদনা নাশের জন্যই সিদ্ধহস্ত হন। সার্জন ব্যস্ত থাকেন তাঁর কাটাকুটির কাজে।আসলে অসহায় রোগীর প্রধান অভিভাবক হলেন একজন অজ্ঞান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে সমস্ত প্রহরে তাঁকে নীরবে সেবা দেন এরাই।

আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন- anesthesia is an art. আমিও তাই বিশ্বাস করি।অনেকের আগ্রহের কারনে বাচ্চাদের অজ্ঞান বিষয়ে লিখতে ভাল লাগছে।শুধু খৎনা নয় যে কোন রুটিন বা ইমারজেন্সি সার্জারির জন্য বাচ্চাকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হতে পারে। আগের আলোচনা গুলিতে বাবা/ মা কে পাশে রেখেছিলাম। এখন বলি তাঁদের আড়ালে কি কি বিষয়ে অবেদনবিদ কাজ করেন এবং নজরদারী করেন। অজ্ঞান করার উদ্দেশ্য মুলত চারটি- ঘুম পাড়ানো, ব্যথা নাশ, মাংশপেশির শিথিলতা আর রিফেলক্স কমানো। বড় সার্জারির ক্ষেত্রে মাংসপেশি শিথিল করা লাগে। ছোটখাটো সার্জারিতে তা লাগে না। শিরাপথে ঔষধ দেবার পর বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চলে গেলেও এই ঘুম সাধারন ঘুম থেকে ব্যতিক্রম। এসময়ে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তপ্রবাহ, স্নায়ুর কার্যাবলী সব নিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে এবং তাঁকে সচল বা স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট থাকেন অজ্ঞানের চিকিৎসক।শ্বাসনালীতে একটি টিউব নির্দিষ্ট আকারের যা নির্ধারিত হয় বয়স এবং ওজন অনুযায়ী। ঘুম পাড়ানোর পরে এটি দেয়া হয় এবং যতক্ষণ বাচ্চা নিজে শ্বাস না নেয় বা নিতে না দেয়া হয় ততক্ষন তাঁকে সচল রাখে মেশিন। বাচ্চার নাড়ির গতি আর রক্তচাপ দেখার ব্যবস্থা থাকে মনিটরে এবং মংশপেশির শিথিলতাও পর্যবেক্ষণ করা যায়। অপারেশনের মাঝখানে জেগে না যাবার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয় এবং শেষ অবধি এসব বিষয়ে সুতীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়। বাচ্চাদের ঔষধ প্রয়োগ, টিউবের মাধ্যমে মেশিনে শ্বাস প্রশ্বাসা এবং তাপমাত্রা বিষয়ে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা কর্তব্য। বড়দের ক্ষেত্রে এক আম্পুল ঔষধ পুশ করে দেবার সুযোগ আছে কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওজনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে নতুন করে ঔষধে জল মিশিয়ে তা তৈরি করে নিতে হয়। আর স্যালাইনের ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা। কিডনির জন্য, লিভারের জন্য ক্ষতিকর স্যালাইন পুশ করা যাবে না। ফ্লুয়িড ঠিক ততোটাই দিতে হবে যতটা হিসেব করে দেয়া উচিত। কম হলে বিপদ, বেশি হলে আরও বিপদ!

অপারেশন শেষ। এবার জাগাবার পালা। দেখে নিতে হবে, মুখের ভেতর বেশি লালা তৈরি হল কিনা। মুখের ভিতর পেট থেকে এসিড এসেছে কিনা। কিম্বা রক্ত বা অন্যকোনো ক্ষতিকর তরল আছে কিনা। পরিস্কার করতে হবে। মেশিনে যে উদ্বায়ী গ্যাস আর লাফিং গ্যাস দেয়া হচ্ছিল তা বন্ধ করতে হবে। এরপর লক্ষ্য করতে হবে শ্বাস প্রশ্বাস আর নাড়ীর গতি স্বাভাবিক কিনা। সব ঔষধের কার্যক্ষমতা শেষ হলে বাচ্চা জেগে যাবে অপারেশন টেবিলেই।সব দিক থেকে নিশ্চিত হয়ে অজ্ঞানের ডাক্তার বাচ্চাকে পাঠাবেন রিকভারী রুমে পর্যবেক্ষণের জন্য।

গা ছমছম করল?মনে হল কি গুরু দায়িত্ব পালন করলেন এতক্ষন ডাক্তার। হ্যা, মুলত রোগীর গার্ডিয়ান হিসেবে কাজ করেন একজন অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ। একটা গোপন কথা বলি। উন্নত দেশে সবচাইতে বেশি বেতনের চাকরি করেন একজন এনেস্থেটিস্ট। আমাদের দেশে এক সময় সবচাইতে কম পে করা হত অবেদনবিদকে। দিন পাল্টেছে । এখন সার্জনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই রোজগার করছেন অজ্ঞানের ডাক্তারেরা। এক সময় আসবে যখন আমাদের মুল্যায়ন যথার্থ ভাবে করা হবে। এ বিষয়ে দরকার সচেতনতা, সবার সহযোগিতা। এত বড় বড় সার্জারি সফল ভাবে হবার কারন একটাই- নিরাপদ এনেস্থেসিয়া, মনিটরিং এবং কাজে নিষ্ঠা।এমন দায়িত্ব নেয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে চিহ্নিত করতে পারেন নাই দেশের জনগোষ্ঠী। এতে আফসোস থাকলেও আমার কাজটুকু নিয়ে আমি তৃপ্ত। আমার সাহসিকতা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট ।আল্লাহ সকলের সহায় হউন, আমিন।

[লিখেছেনঃ অ-বেদন-বিদ নিবেদিতা নার্গিস পান্না]

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা