ঘটনা -১.
নীলার বিয়ের ৮বছর হলো। এক ছেলে আছে। ৫বছরের। আবারও প্রেগনেন্সি টেস্ট পজিটিভ এসেছে। এখনই যাবেনা ডাক্তারের কাছে। গতবার বেশি বেশি যেতে যেতে বিরক্তই লাগতো। একেবারে ৩মাসে একটা আল্ট্রা করাবে।
১.৫মাসের সময় প্রচন্ড পেটে ব্যথা। নীলার মনে হচ্ছে ওর চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে। তারপর আর মনে নেই। সবাই ওকে নিয়ে ছোটাছুটি। ওর নাকি পেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে
ঘটনা -২.
আজ সকাল থেকেই নিশির পেটে ব্যথা। কেমন যেন শরীর অবশ হয়ে আসছে। সব নিয়ে অফিসে এসেছে। এমনিতেই গত মাসে বিয়ে হলো,তাতে অনেক অফিস কামাই হয়েছে। কিন্তু এই ব্যথা যে আর সহ্য হচ্ছেনা। শেষ মেশ হাসপাতালে ভর্তি।
উপরের ২টি ঘটনার মতন আরো অনেক ঘটনা ঘটে হয়তো ভাগ্যের কারণে, কিন্তু অসাবধানতা বা খামখেয়ালির কারণে তা মৃত্যু পর্যন্ত গড়াতে পারে।
Ectopic Pregnancy কী?
এটা গর্ভাবস্থার এমন একটি অবস্থা, যেখানে ভ্রুণ জরায়ুতে না হয়ে অন্যত্র হয়। সে হতে পারে ডিম্বাশয়ে/ফ্যালোপিয়ান নালীতে/জরায়ুর অগ্রভাগ(যাকে সারভিক্স বলা হয়)/ জরায়ুর বাইরে পেটের অন্যত্র কোথাও। যে স্থান যার নয়,তা কি তার সয়? এই ক্ষেত্রেও তাই।
ভ্রুণ সেখানে বড় হতে হতে একসময় আর বড় হওয়ার জায়গা থাকেনা। তারপর? তারপর জায়গাটি ফেটে যায়। এই ফেটে যাওয়ার উপক্রম এবং ফেটে যাওয়ার সময়টাই সেই অসহ্য ব্যথা। তারপর ভেতরে রক্তক্ষরণ থেকে একসময় মৃত্যু যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পায় রোগী।
কোথায় হয় অসাবধানতা?
প্রেগনেন্সি স্ট্রিপে পজিটিভ আসার পরও ডাক্তারের শরণাপন্ন না হওয়া এবং ভ্রুণ কোথায় আছে জানার জন্যে কোন ধরণের পরীক্ষা প্রয়োজন কিনা জানার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব না দেওয়া।
Ectopic Pregnancy-র লক্ষণ গুলো কী?
- নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক না হওয়া
- হঠাৎ প্রচন্ড পেটে ব্যথা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তপাত
ফ্যালোপিয়ান নালীতে এটি হওয়ার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। অন্যান্য যে স্থানেই হোক, তা ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ থেকে মারা যেতে পারেন রোগী মুহুর্তেই। বেঁচে ফিরলে তার আকস্মিক দুর্ঘটনার সাথে থাকে পুনরায় মা হতে পারা বা না পারা নিয়ে সংশয়। Ectopic Pregnancy একবার হলে বার বার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কি করবো?
- অবশ্যই অবশ্যই প্রেগনেন্সি পজিটিভ আসার পর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- পজিটিভ আসার পর যেকোন ধরণের পেট ব্যথাকে/রক্তক্ষরণকে গুরুত্ব দিন।
- আক্রান্ত মাকে মানসিকভাবে সাহস যোগান।
কি লাভ হবে?
ফেটে যাওয়ার আগেই যদি চিকিৎসা করা হয় তবে মায়ের ক্ষতি হবেনা। অনেক ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়াও ভাল হয়। তবে সেটা সিদ্ধান্ত নেবেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং তাও রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি ও টেস্টের মাধ্যমে কিছু মানদন্ডের যাচাই বাছাই করে।