বাংলাদেশে জৈষ্ঠ্য মাস মধুমাস নামে পরিচিত। কারণ, সারা বছরে সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায় এই মাসে। এই ফল-ফলাদি’র তালিকা এত দীর্ঘ যে প্রত্যেক বাংলাদেশির পছন্দের কোন না কোন ফল এসময় বাজারে পাওয়া যায়। ফলমূল নিয়ে বাচ্চাদের উৎসাহের অন্ত নেই। কারণ বাচ্চারা বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণের ফল খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। বাবা-মা হিসেবে আমরা ফল কিনে খাইয়ে তৃপ্ত হই।
সমস্যা হলো, এসব জনপ্রিয় ফলমূল সবসময় সর্বাবস্থায় বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকার এটা বলা যাবে না। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতে লিচু খেয়ে শিশু মৃত্যুর কথা। জনপ্রিয় এই মৌসুমি ফল ক্ষেত্রবিশেষে শিশুদের জীবননাশের কারণ হয়ে উঠে। ২০১৫ সালে ভারতের বিহারে ৩৯০টি শিশু এ ধরনের অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, যার মাঝে ১২২ জন মারা যায়। বাংলাদেশের দিনাজপুরে ২০১২ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিশুমৃত্যুর কথা জানা যায়।
গবেষকরা জানাচ্ছেন লিচুতে প্রচুর পরিমাণে হাইপোগ্লাইসিন নামের রাসায়নিক আছে, যেটা শরীরে শর্করা তৈরিতে বাধা দেয়। খালি পেটে লিচু খেলে শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরে শর্করার পরিমাণ বিপদজনক পর্যায়ে কমে যায় এবং তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়। অধিকাংশক্ষেত্রে খালিপেটে লিচু খাওয়া বাচ্চাটি হঠাৎ খিচুনির মুখে পড়ে এবং কোমায় চলে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার কথাও জানা গেছে।
এই অবস্থাটি “জামাইক্যান ভমিটিং সিকনেস” (Jamaica Vomiting Sickness) নামেও পরিচিত। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অপরিপক্ব ফল খেয়ে বিষক্রিয়ায় একসময় বহুশিশু মারা যেতো, সেখান থেকেই এই নামকরণ।
আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
- ক্রমাগত বমি হওয়া
- খিচুনি
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- কোমায় চলে যাওয়া
প্রতিরোধে করণীয়:
- বাচ্চাদের অপরিপক্ব লিচু খেতে না দেয়া
- খালিপেটে কখনোই লিচু খেতে না দেয়া
- কম সংখ্যক লিচু খেতে দেয়া।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুকে যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সামান্যতম অবহেলা বা দেরী মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care