গর্ভপাত বা এবোরশন এর মানে হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে সন্তান নষ্ট করা। এটা ডাক্তাররাও অনেক সময় করে থাকেন রোগীর জীবন বাঁচনোর জন্য।তবে আজকাল অনেক পুরুষ বা মহিলারা এটা করান অনিচ্ছাকৃত বা ভূলবশত গর্ভ ধারণ করে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, তা বিবাহিত বা অবিবাহিত সম্পর্ক যেটাই হোক।
গর্ভপাতের পক্ষে দেখানো যুক্তি
যারা গর্ভপাত করাতে আসেন তারা যেসকল যুক্তি দেখান তা হচ্ছে,
১। আমাদের এখন নেয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
২। আমার আরো বাচ্চা আছে তাই আর চাইনা।
৩। বিয়ে হয়েছে তুলে নেয় নাই তাই জানলে লজ্জার ব্যাপার।
৪। আয় কম তাই ভরণপোষন করতে অক্ষম।
৫। মাত্রই একটা বাচ্চা হলো এখনো ছোট তাই আরেকটা নিলে লালন পালনে অসুবিধা।
৬। বিয়ে হয়নি কিন্তু বাচ্চা চলে এসেছে।
৭। বহু বছর কোনো পদ্ধতি ছাড়াই ছিল কিন্তু এমনটা হয়নি কখনো।
৮। বিয়ে হয়েছে কিন্তু লেখাপড়া করছে সামনে পরিক্ষা।
৯। আগেও বহুবার নষ্ট করেছেন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেন না এভাবেই চলে যাচ্ছে।
ডাক্তাররা কখন গর্ভপাত করাতে বলেন
কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে ডাক্তাররাই বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং তা মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য, ঝুঁকি গুলো হলো:
১। এমন কোনো হার্টের অসুখ যেখানে গর্ভ ধারণ একেবারেই নিষিদ্ধ, জীবন চলে যেতে পারে।
২। কিডনী বা লিভার এর এমন কোনো অসুখ যার কারণে গর্ভধারণ করলে মায়ের জীবনের সমূহ ঝুঁকি রয়েছে
৩। গর্ভধারণ হয়ে গেছে আর ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং এই মুহুর্তেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
৪। বার বার সিজারের কারণে ডাক্তার যদি মনে করেন পরবর্তীতে বাচ্চা আসলে জরায়ু ফেটে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।
৫। গর্ভস্থ সন্তানের যদি এমন কোনো গঠনগত ত্রুটি ধরা পড়ে যা নিয়ে জন্মালে সে বেশীক্ষণ বাঁচবে না, যেমন, মাথার খুলি অথবা কিডনী গঠন না হওয়া ইত্যাদি।
এমন আরো কিছু কারণে ডাক্তাররা এবোরশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইসলামও বড় ক্ষতি থেকে বাঁচতে অনেক ক্ষেত্রে ছোট ক্ষতিকে সমর্থন দেয়।
ভালো জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব
বেশিরভাগ অনাকাংখিত গর্ভধারনের কারণ বাচ্চা না আসার জন্য ভালো কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা গ্রহণ না করা।
১। বেশিরভাগ মনে করেন নিয়মিত মাসিক হওয়া মানে সব ক্লিয়ার হয়ে যাওয়া বাচ্চা আসবে না আর তাই তারা কোনো ব্যাবস্থা নেন না। যা সব থেকে বড় ভূল ধারণা, আর সবচেয়ে বিপদজনক। নিয়মিত মাসিক হওয়া মানে নিয়মিত ডিম আসা আর তাই গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
২। বেশিরভাগ মনে করেন, মাসিক হওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ সময় আর নিরাপদ সময় মেনে চললেই হয়, এটাও আরেকটা বড় ভূল। কোনো সময়ই ১০০ ভাগ নিরাপদ নয়।
৩। অনেকে মনে করেন বীর্যপাত বাইরে করলে সন্তান আসে না এটাও ভূল।
গর্ভপাত করানোর ফলে হওয়া অসুবিধাসমূহ
এবোরশন করলে ভবিষ্যতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন-
১। নানা প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। ভবিষ্যতে আর সন্তান না-ও হতে পারে৷
৩। সহবাসে ব্যথা, জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে৷
৪। মাসিক নিয়মিত না হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৫। মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হওয়া।
৬। অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।
৫। এবোরশনের পরে অপরাধবোধ থেকে মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে৷ তাই ডাক্তাররা এবোরশনকে সব সময় নিরুৎসাহিত করে থাকেন।
ধর্ম কী বলে গর্ভপাত নিয়ে
এগুলো তো গেল যুক্তিবাদী কথা। ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে কোরআন এবং হাদীসে যা বলা হয়েছে তার কিছু রেফারেন্স তুলে ধরা হলো। মুসলিম হিসেবে ভাবলেও এই রেফারেন্সগুলো সাহায্য করবে সিদ্ধান্ত নিতে।
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জা-লিকাল ওয়াদুল খাফি’ অর্থাৎ এটি গোপন হত্যা।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়াত রয়েছে। যেমন-
- তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না, তাদের ও তোমাদের আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩১)
- মুমিন নারী, আল্লাহ তোমার রেহেমে যা সৃষ্টি করেন তার ব্যাপারে তুমি আমানতদার। অতএব, তুমি আমানত গোপন করো না। আল্লাহ তাআলা বলেন, এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে।
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮) - আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে।
(সূরা আত-তাকওয়ীর: ৮-৯) - যখন হিসেবের খাতা এনে রাখা হবে, তুমি দেখবে অপরাধীরা ভয় পেয়ে গেছে, সেখানে কী লেখা আছে দেখে। তারা হায় হায় করে উঠবে, “ কী সর্বনাশ! এটা কী বই! এখানে দেখি খুঁটিনাটি সবকিছুই আছে! কিছুই বাদ নেই !” তারা যা কিছু করে এসেছে, তার সব সেখানে উপস্থিত পাবে । তোমার রব বিন্দুমাত্র অন্যায় করেন না।
(আল – কাহফ: ৪৯) - তাহলে কোথায় যাচ্ছ তোমরা? এটা তো বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ মাত্র। তোমাদের মধ্যে যে সঠিক পথে চলতে চায়, শুধু তাদের জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পারো না, যদি না বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা না করেন।
(আত-তাকউইর: ২৬-২৯) - যে কেউ কোনো প্রাণ হত্যা করল, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল। আর যে কারও জীবন রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের জীবন রক্ষা করল।
(সুরা মায়িদা : ৩২) - বল, এসো! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা তোমাদের পড়ে শুনাই; তা এই-
ক. তোমরা তার কোনো শরিক করবে না।
খ. পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।
গ. দারিদ্র্যের জন্য তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমিই তোমাদের ও তাদের রিজিক দিয়ে থাকি।
ঘ. প্রকাশ্য হোক বা গোপন হোক, অশ্লীল আচরণের নিকটও যাবে না।
ঙ. আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না।
তোমাদেরকে তিনি এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা অনুধাবন কর।
(সূরা আনয়াম: ১৫১) - ‘হে নবী, মুমিন নারীগণ যখন তোমার নিকট এসে বায়আত করে এই মর্মে যে,
ক. তারা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক স্থির করবে না।
খ. চুরি করবে না।
গ. ব্যভিচার করবে না।
ঘ. নিজেদের সন্তানকে হত্যা করবে না।
ঙ. তারা সজ্ঞানে কোনো অপবাদ রচনা করে রটাবে না।
চ. সৎকর্মে তোমাকে অমান্য করবে না।
তখন তাদের বায়আত গ্রহণ করবে। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহানা: ১২)
শেষকথা
গর্ভধারণ স্রষ্টার পক্ষ থেকে এক বিশাল নিয়ামত, তবে অবশ্যই যদি তা বৈধ সম্পর্কে হয়ে থাকে। অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কে জড়ানো যে কোন উপায়ে এড়িয়ে চলা উচিত। বৈবাহিক সম্পর্কে গর্ভধারণ কোন উপযুক্ত কারণে সাময়িকভাবে না চাইলে উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শে ভালো জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেন অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়ানো যায়। এরপরও যদি গর্ভধারণ হয়েই যায় তাহলে মেডিকেল ও ধর্মীয় সকল কারণ মনে রেখে গর্ভপাত থেকে সরে এসে স্রষ্টা প্রদত্ত এই নিয়ামতকে মেনে নেয়া উচিত হবে। আল্লাহ্ সুবহান ওয়াতায়ালা আমাদের সঠিক উপলব্ধি দিন ও সহজ সরল পথে পরিচালিত করুন, আমিন।
সম্পাদনায়ঃ হাবিবা মুবাশ্বেরা
“অনেকে মনে করেন বীর্যপাত বাইরে করলে সন্তান আসে না এটাও ভূল” – এই পয়েন্টের ব্যাখ্যা কি?
অবাক হইলাম।
এই লেখাটি পড়ে দেখুন।
মূল বীর্যপাতের পূর্বে সাধারণত এক দুই ফোঁটা পানির মতো তরল নিঃসরণ হয়ে থাকে। অনেকে এটা হয়ত আমল দেন না বা জানেন না। গবেষণায় দেখা গেছে সেই এক দুই ফোঁটা পানির মধ্যেও শুক্রাণু থাকতে পারে যদিও সংখ্যায় নিতান্তই কম। মুল বীর্যে মিলিয়ন মিলিয়ন থাকে। কিন্তু আমরা জানি সন্তান জন্মদানের জন্য একটি মাত্র শুক্রাণু প্রয়োজন। তাই অনেকে বাইরে বীর্যপাত করে মনে করেন বাচ্চা হবেনা আসলে ভূল ধারণা। বীর্যপাতের পূর্বের নিঃসৃত জলীয় নিঃসরণটি তো ভেতরে চলেই যায়।
Dear Doctor, thank you for taking time to respond.
Matritto Team.