প্রশ্নঃ আমি জানতে চাই ইসলামে গর্ভাবস্থার মর্যাদা কী ও এই সময় কী কী ইবাদাত করতে বলা হয়? গর্ভবতী নারীর সালাত কি অন্যদের চেয়ে বেশি সাওয়াব বহন করে?
উত্তরঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রথমত,
নিঃসন্দেহে, গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যমে একজন নারী শরী’য়ার এমন একটি লক্ষ্য পূরণ করেন যা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। সেই লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যারা আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিবে ও নবী মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) অনুসরণ করবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার ওপর গর্ভাবস্থায় একজন নারীর নিয়তের ফোকাস থাকা উচিত।
যদি কোন নারীর জন্য তার গর্ভাবস্থা কঠিন হয় এবং তিনি তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করেন তাহলে গর্ভাবস্থার মাধ্যমে উপরে বর্ণিত লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কারণে এর মাধ্যমে মা নানাভাবে উপকৃত হবেন। এর মাঝে আছেঃ
১। সন্তান প্রতিপালন করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি তৈরি হয়। সকল কাজের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে কঠিন কাজ এটি। বাবা-মায়ের বাচ্চাকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সে সুআচরণ করে ও ধার্মিক হয় এবং তারা আশা করতে পারেন যে তাদের সৎকর্মপরায়ন সন্তানের কাজের কারণে আল্লাহ্ তাদের পুরষ্কৃত করবেন যেন তাদের মৃত্যুর পর এই সন্তান তাদের জন্য সাদকায়ে জারিয়া হয়। ফলে তারা এমন বিশাল পরিমাণ সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন যার পরিমাণ আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না।
২। একজন গর্ভবতী নারী যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন যার মাঝে ব্যথা, অসুস্থতা আছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত, মানসিক বা শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়, এসবকিছুই বিশাল সাওয়াব বহন করে যা গর্ভবতী নারীর আমলনামায় লেখা হবে ইনশাল্লাহ। পৃথিবীতে একজন মুসলিম যত সমস্যার সম্মুখীন হয় তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তাকে পুরষ্কৃত করেন। এমনকি একজন মুসলিমের গায়ে কাঁটা ফুটলেও আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার কিছু গুনাহ মাফ করে দেন। সেখানে গর্ভাবস্থা ও প্রসবব্যথার যন্ত্রণা আরও অনেক বেশি।
৩। যদি সন্তান প্রসব করতে গিয়ে কোন নারী মারা যান, তাহলে তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। এর দ্বারাই বোঝা যায় গর্ভাবস্থা ও প্রসব কতটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা। নবী মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে নারী গর্ভাবস্থা বা সন্তানপ্রসবের সময় মারা যায় সে শহীদ।” আবু দাউদ থেকে বর্ণিত, ৩১১১; শারহ মুসলিমে আন-নবাবী একে সহিহ বলেছেন, ১৩/৬২। তিনি বলেছেনঃ যে সন্তানপ্রসবের সময় মারা যায়, অর্থ হচ্ছে এমন অবস্থায় মারা যায় যখন তার ভেতরে কিছু (সন্তান) আছে, তার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় না।
দ্বিতীয়ত,
গর্ভবতী নারী যেসব আমল করতে পারবে তার মাঝে আছে সেই সকল আমল যা একজন মুসলিম প্রতিদিন করে থাকে, যেমন সালাত, সিয়াম (যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ক্ষতির আশংকা না থাকে), সাদাকা দেয়া, কুরআন পড়া, শরী’আ অনুমোদিত দৈনন্দিন যিকির করা, মানুষের সাথে সদয় আচরণ করা, আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, নিজের হিসাব নেয়া, উত্তম আচরন, কথা ও কাজ অর্জনে সচেষ্ট থাকা।
সম্ভবত এই সময় একজন নারী যে সব বিষয়ে ফোকাস করতে পারেন তার মাঝে একটা হচ্ছে সন্তান প্রতিপালনের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা করা। মা এই বিষয়ের ওপর বই পড়তে পারেন বা আলিমদের দেয়া উপকারী লেকচার শুনতে পারেন। তার এই পড়াশোনার বিষয়ের মাঝে থাকতে পারে নৈতিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, শিক্ষানীতি (pedagogy) এমন অনেক কিছু যা সন্তান প্রতিপালনের যে মহান দায়িত্ব আল্লাহ্ তাদের অর্পন করতে যাচ্ছেন তা প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে পরিচালনা করতে তাদের সাহায্য করবে এবং সেরা ফলাফল এনে দিবে যা থেকে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে।
গর্ভবতী নারীর সালাত অন্যদের চেয়ে বেশি সাওয়াব বহন করে এমন কিছু ইসলামে আছে বলে আমাদের জানা নেই।
পরিশেষে, আমরা জানাতে চাই যে এমন কিছু হাদিস প্রচলিত আছে যেখানে বলা হয় যে নারীর গর্ভাবস্থা দিনে সিয়াম পালন করা ও রাতে সালাত আদায় করার মতো সাওয়াব বহন করে, সন্তান জন্ম দেয়া ও দুধ পান করানোর আরও অনেক সাওয়াবের কথা বলে, কিন্তু সেগুলো সবই মিথ্যা ও বানোয়াট। তাই সেসব হাদিস নিয়ে মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্য ব্যতীত সেসব বর্ণনা করা বা সেসব নিয়ে কথা বলার অনুমোদন নেই।
এবং আল্লাহ্ ভালো জানেন।
[IslamQA ওয়েববসাইট থেকে অনূদিত। মূল লেখাটি পাবেন এখানেঃ https://islamqa.info/en/answers/161204/the-virtues-of-pregnancy]
ছবিঃ pinterest.com