২০১৭ সালের দিকে বাংলা ভাষায় মাতৃত্ব’র এই ওয়েবসাইটে আমরা প্রথমবারের মতো গোছানো বার্থস্টোরি প্রকাশ করা শুরু করি। ২০১৪ সাল থেকে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে অনলাইনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম মায়েদের জন্য বার্থস্টোরি পড়া বেশ কয়েকভাবে কাজে লাগতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে।
বার্থস্টোরি পড়া গর্ভাবস্থায় যেভাবে সহায়তা করে
উদ্বেগ এবং ভয় কমায়
এমনিতেই অজানা বিষয়ের প্রতি মানুষের ভয় মজ্জাগত, তার উপর বর্তমান সময়ে মিডিয়া সহ সবখানে প্রেগনেন্সিকে যেভাবে চিত্রায়িত করা হয় সেটা যেকোন নারীকেই গর্ভাবস্থা সম্পর্কে ভীত করে তোলে। পাঠ্যক্রম, গণমাধ্যম কিংবা পারিবারিক পরিমণ্ডলে কোথাও প্রেগনেন্সি- প্রসব সন্তান পালন এসব বিষয়ে গঠনমূলক কোন তথ্য-পরামর্শ বা দিক নির্দেশ দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ইতিবাচক গল্প শুনলে গর্ভবতী নারীদের মন হালকা হতে পারে এবং পূর্ব ধারণাগুলো সংশোধনে সহায়ক হতে পারে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা
বিভিন্ন ধরনের birth story পড়ার মাধ্যমে, মায়েরা প্রসবের সময়ের বিভিন্ন বিকল্প, মেডিকেল হস্তক্ষেপ এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন। অন্যদের অভিজ্ঞতা পড়ার মাধ্যমে একজন নারী নিজের প্রেগনেন্সির জন্য বার্থ প্ল্যান করতে পারেন এবং অন্যদের পরিকল্পনার সাথে নিজেরটা মিলিয়ে নিতে পারেন
ইতিবাচক বার্থ অভিজ্ঞতার প্রত্যাশা তৈরি করে
প্রেগনেন্সি ও প্রসব সম্পর্কে ভীতিমূলক সামাজিক ধারণা থাকা সত্ত্বেও সেটা বদলে দেয়া সম্ভব যদি একজন মা গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভাবস্থায় অনুপ্রেরণামূলক বার্থ স্টোরি পড়েন। এসব স্টোরি পড়ার মাধ্যমে একজন মা গল্পে বলা মায়ের সাথে নিজের সামঞ্জস্য খুঁজে পাবেন এবং নারীদেরকে যে আল্লাহ শারীরিকভাবে গর্ভধারণ এবং প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে তৈরি করেছেন সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।
করণীয় ঠিক করতে সহায়তা
প্রসব অভিজ্ঞতা তারাই লিখেন, যারা সন্তান গর্ভধারণ, প্রসব এবং সন্তান লালন পালন নিয়ে সচেতন। এসব বিষয় নিয়ে তারা পড়াশোনা করেন এবং অন্যকে জানানোর ধারণা থেকেই তারা প্রসব অভিজ্ঞতা লিখেন। এসব স্টোরি পড়ার মাধ্যমে পাঠকের মনে একই রকম আগ্রহ তৈরি হয় এবং তারাও প্রয়োজনীয় প্রিনাটাল জ্ঞান অর্জনে এগিয়ে যান
প্রসবের পরে বার্থস্টোরির ভূমিকা
মানসিক নিরাময়
গর্ভধারণ, সন্তান প্রসবের স্মৃতি এবং প্রসব পরবর্তী হরমোনগত কারণে আবেগীয় উঠানামা এসব মিলিয়ে প্রসবের পরে একজন নারী যে কঠিন সময় পার করে সেই সময়টাকে বুঝতে এবং মানিয়ে নিতে অন্যদের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতাগুলো বিশেষভাবে সহায়তা করে।
আবেগ ও প্রত্যাশার ভারসাম্যকরণ
এ সময়ের মানসিক অবস্থা এবং সেটা বুঝতে এবং মানিয়ে নিতে গিয়ে কোনটা স্বাভাবিক এবং কোনটা অস্বাভাবিক সেটা একজন মা বুঝতে পারবেন না যদি তিনি না জানেন তার সাথে যা হচ্ছে কেন তা হচ্ছে এবং অন্যদের সাথে ও সেরকম হয়েছে কিনা। বার্থস্টোরি এই গ্যাপ পূরণে সহায়তা করে। মায়েরা বুঝতে পারেন তারা একা নন এবং যা হচ্ছে তা অনেকাংশেই স্বাভাবিক
মাতৃত্ব উদযাপন
মানব সভ্যতার চলমানতা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবারে একজন নতুন সদস্যকে একজন মা তার মধ্য দিয়ে নিয়ে দুনিয়াতে আসেন বিষয়টা কি দুর্দান্ত রকমের গুরুত্বপূর্ণ সেটা অন্যদের বার্থ স্টোরি পড়ার মাধ্যমে একজন মা বুঝতে পারেন। মাতৃত্বের ইতিবাচক উদযাপনের জন্য এ ধরনের অনুধাবন অত্যন্ত জরুরী
বার্থস্টোরি পড়ায় সতর্কতা
খেয়াল রাখার বিষয় হলো প্রত্যেকটি জন্ম আলাদা, প্রত্যেকটি প্রসব আলাদা এমন কি একই মায়ের ভিন্ন ভিন্ন প্রসবের বৈচিত্র থাকে। তাই পাঠক হিসেবে সন্তান প্রত্যাশী বাবা-মা দুজনেরই খেয়াল রাখা দরকার গল্পের সবকিছুই তার সাথে মিলবে না। এমনকি অন্যদের অভিজ্ঞতার তার কাছে অস্বাভাবিক এবং বিরক্তি করো ঠেকতে পারে। এরকম প্রত্যাশা নিয়ে বার্থ স্টোরি পরা উচিত এবং নিজের মানসিক সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
Birth story পড়ার অন্যতম অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত যেন এই গল্পগুলো মানসিকভাবে একজন মাকে উজ্জীবিত রাখে এবং একজন বাবাকে বিভিন্ন সময়ে তার করণীয় অনুধাবনে সহায়তা করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অবাস্তব প্রত্যাশা যেন তৈরি না হয়।
এবার আসুন জানি এমন কিছু মায়েদের কথা তাদের কাছ থেকেই যারা প্রসব অভিজ্ঞতা পড়ে উপকৃত হয়েছেন।
বার্থস্টোরি কেন পড়বেন: মায়েদের কথা
ওয়াসিফা নূর তামান্না
বার্থস্টোরি পড়া হয়। প্রেগনেন্সি জার্নি কেমন হতে পারে, ডেলিভারি এর সময় কেমন হতে পারে, ভিন্ন মানুষের ভিন্ন পরিস্থিতি এগুলো বুঝতে সাহায্য করেছে এই প্রসব অভিজ্ঞতাগুলো। তবে নিগেটিভ স্টোরি গুলো কেয়ারফুলি পড়া উচিত, যাতে সেই গল্পগুলো আমাদের বেশি এফেক্ট করতে না পারে।
তানজিলা রহমান তৃণা
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বার্থস্টোরি পড়তাম, বিশেষ করে প্রথম প্রেগনেন্সির সময়ে এত বেশি বার্থ স্টোরি পড়েছি ! এই অভিজ্ঞতাগুলো পড়ার মাধ্যমে আমি শিখেছি লেবার পেইন ম্যানেজমেন্ট কতটা সুন্দর ভাবে করা যায়। বিভিন্ন ধরনের বাস্তবতা নিয়ে আইডিয়া পেয়েছি, এরকম বিভিন্ন সিচুয়েশনে পড়লে কিভাবে সেটা হ্যান্ডেল করতে হবে সেটা শিখেছি । বলা যায় প্রত্যেকটা প্রেগনেন্সিতে আমি উপকৃত হয়েছি এইসব এক্সপেরিয়েন্স গুলো পড়ে ।
নতুন যারা স্টোরি লিখবেন তাদের জন্য অনুরোধ এবং পরামর্শ হলো বার্থিং এক্সপেরিয়েন্স আপনাদের প্রত্যাশা মত না হলে যেমন যদি এপিশিওটমি লাগে সেটা কেন লাগলো, সি সেকশন কেন করতে হলো এ ধরনের ইনফরমেশন গুলো কাইন্ডলি এড করবেন। এতে পাঠকদের খুব উপকার হয় । ছাড়া বাচ্চা হওয়ার ২৪ ঘন্টার মাঝে করণীয় এবং খেয়াল রাখার মত বিষয়গুলোও তুলে আনবেন।
নাসরিন আঁখি
হ্যা। বার্থস্টোরি জানতে ভাল লাগে। এ ধরনের প্রসব অভিজ্ঞতার গল্পগুলো ১ম প্রেগন্যান্সির সময় খুবই হেল্প করেছে। এমনকি ২য় প্রেগন্যান্সির শেষের দিকেও খুঁজে খুঁজে ইংলিশ বাংলা মিলিয়ে প্রচুর বার্থস্টোরি পড়েছি। মূলত আমি পড়েছি লেবারের সময়টার ম্যানেজমেন্টে ফোকাস করতে। বার্থস্টোরিতে প্রিনাটাল ও পোস্টনাটাল সময়ে স্বামীর সাথে মানসিক ও শারীরিকভাবে মায়ার সাথে ডিল করা নিয়ে বিস্তারিত থাকা উচিত মনে করি। বন্ডিং স্ট্রং থাকা খুবই জরুরি একটা জিনিস যেটা নিজের জন্যই ব্লেসিং এটা তুলে ধরা উচিত মনে করি।
আমাদের সবগুলো প্রসব অভিজ্ঞতা দেখুন এখানে।
আপনিও কি ইতিবাচক প্রসব অভিজ্ঞতা লিখে অন্য মায়েদের সাথে শেয়ার করতে চান? হবু মায়েদের উৎসাহ দিতে চান? তাহলে আর দেরী না করে ঝটপট লিখে পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেইলে বা মাতৃত্বের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে।