শিশুর কান্নার
শিশুর কান্নার কারণগুলো কি কি?

একটি শিশু কান্নার মাধ্যমে তার খিদে, ভয়, অস্বস্তি অথবা যে কোন  প্রয়োজন প্রকাশ করে। জন্মের পর প্রথম তিন মাস পর্যন্ত একটি শিশু কোনো কারণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে  ২৪ ঘন্টায় ৩ থেকে ৪ বার কাঁদে। শিশু কাঁদলে সব মা-বাবাই  চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত কান্না থামানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন। বিশেষভাবে মায়েরা শিশুর কান্নায় বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং মনে করেন বুকের দুধে বাচ্চার হয়তো পেট ভরছে না এবং এ কারণে  কান্না করছে। কিন্তু এটা সবসময় ঠিক নয়, ক্ষুধা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে একটি শিশু অনবরত কাঁদতে পারে।

সব সময় কান্নার সঠিক কারণ বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যদি বাচ্চার কান্না নিয়ে বেশি চিন্তিত হন তবে কিছু সাধারণ বিষয়ের উপর লক্ষ রাখুন। শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কিছু স্বাভাবিক কারণ তুলে ধরা হলো।

ক্ষুধা

শিশুর অতিরিক্ত কান্নার একটি বড় কারণ ক্ষুধা। ক্ষুধা পেলে শিশু অস্থির হয়ে উঠে, ঠোঁট কামড়াতে থাকে, মুখে বার বার আঙ্গুল দেয় এবং কাঁদতে শুরু করে।

ভেজা ডায়াপার

অনেক মা-বাবা বাচ্চার ডায়াপার  পাল্টানোর বিষয়ে খেয়াল করেন না। দীর্ঘক্ষণ নোংরা এবং ভেজা ডায়াপার  পরিয়ে রাখলে বাচ্চা অস্বস্তি বোধ করে এবং কান্নাকাটি করে। ময়লা ডায়াপার অনেকক্ষণ পরিয়ে রাখলে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে। এ কারণেও  শিশু অনেক সময় বেশি কান্না করে।

অতিরিক্ত গরম অথবা ঠান্ডা লাগলে

সাধারণত নবজাতককে  উষ্ণ রাখার জন্য বাড়তি পোশাক পরানো হয়। কিন্তু অনেক সময় শিশুর অতিরিক্ত গরম লাগে এবং অস্বস্তি হয়, ফলে শিশু কাঁদতে শুরু করে। ডায়াপার অথবা পোশাক পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লাগলেও শিশুরা কাঁদে।

ঘুম পেলে

শিশু খুব বেশি ক্লান্ত থাকলে কাঁদতে থাকে। এই সময় শিশুর ঘুম প্রয়োজন। ঘুমালে সে স্বস্তি ফিরে পায়।

পেটে সমস্যা হলে

পেটে ব্যাথা বা কেন সমস্যা হলে শিশু অনবরত কাঁদে এবং বেশি নড়াচড়া করে বিশেষ করে পা এবং হাত ভাঁজ করে ফেলে। সাধারণত খাওয়ানোর পর  পেটে গ্যাস তৈরি হলে ব্যাথা হয়, তখন শিশু অস্থির হয়ে উঠে এবং বেশি কাঁদে। মেডিকেল সাইন্স এ ধরণের সমস্যাকে ইনফ্যান্টাইল কলিগ বলে, সাধারণত তিন মাস  পর্যন্ত শিশুরা এ ধরণের সমস্যায় ভোগে।

মা-বাবার সান্নিধ্য

শিশুরা কখনো একা থাকতে চায় না। সব সময় মানুষের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। বিশেষ করে প্রথম ৩ মাসের মধ্যে একটি শিশু তার মা এবং বাবাকে চিনতে পারে, তাদের শরীরের আলাদা গন্ধ, কন্ঠ বুঝতে পারে। শিশুরা মা- বাবার কথা শুনতে চায়, তাদের সাথে সময় কাটাতে চায় এবং শিশুর যখন মা-বাবার সান্নিধ্য প্রয়োজন হয়, তখনো কাঁদতে পারে।

দাঁতে অথবা কানে ব্যাথা

ছয় থেকে আট মাস বয়সী শিশুরা অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়া বেশি কাঁদতে পারে। আপনি যদি কান্নার সঠিক কারন বুঝতে না পারেন তবে আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে শিশুর মাড়ি দেখে নিতে পারেন এবং মাড়িতে শক্ত কিছু উঠছে বলে মনে হলে বুঝবেন, শিশুর দাঁত  উঠছে।  দাঁত ওঠার সময় অস্বস্তি ও ব্যথা হয়। অনেক সময় ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং কানে ব্যাথা হতে পারে।

অসুস্থ হলে

শিশু শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে অনেক বেশি কাঁদে। এ সময় শরীরে জ্বর থাকতে পারে। শিশুরা অসুস্থ হলে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং দীর্ঘসময় কাঁদে, বিছানায় শুয়ে থাকতে চায় না, কোলে উঠতে চায়, খেতে চায় না, বিরক্তিবোধ করে।

অপরিচিত পরিবেশ

অনেক সময় অপরিচিত পরিবেশে শিশু বিরক্তিবোধ করে এবং ভয় পায়। বিশেষ করে বেশি হৈ চৈ পূর্ণ পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করে এবং হঠাৎ বিকট কোনো শব্দ শুনে শিশুরা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী

যদি বাচ্চা কাঁদতেই থাকে এবং কোনোভাবে কান্না থামানো যাচ্ছে না তবে প্রথমে শরীরে কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন বা জ্বর আছে কিনা তা দেখে নিন। হাত পা নড়াচড়া করে দেখুন, যদি শিশু আরো বেশি কাঁদে তবে বুঝতে হবে শরীরে ব্যাথা হচ্ছে।

শিশুর পেটে হালকা চাপ দিয়ে দেখে নিন, বাচ্চা পেটের ব্যাথায় কাঁদছে কিনা। শিশুর বিছানার আশে পাশে কোনো পোকামাকড়, পিঁপড়া আছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নিন। শিশু অস্বাভাবিকভাবে কাঁদলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

[ভিডিও] কিভাবে মুহুর্তেই বাচ্চার কান্না থামাবেন?

মনে রাখবেন, শিশুরা প্রয়োজনের কথা বলতে পারে না। তাদের প্রয়োজনের ও যোগাযোগের মাধ্যমই হলো কান্না। শিশুরা কান্নাকাটি করবেই, কান্না করলে ভয় পাবেন না অথবা বিরক্ত হবেন না। শিশুর প্রতি অধিক যত্নশীল হোন,  ওদের বুঝতে চেষ্টা করুন এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে অপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care