আমার পুরো প্রেগনেন্সিতে আমাকে বিভিন্ন আপুর পজিটিভ বার্থ স্টোরি গুলো খুব অনুপ্রাণিত করেছিলো, সেই সাথে অনেক অনেক জ্ঞান অর্জন করতেও সাহায্য করছে। সেই ধারনা থেকেই আমি আমার প্রেগনেন্সি জার্নি টা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আমার লাস্ট পিরিয়ড ডেট ছিলো ১২ অক্টোবর, ২০২৩। পরের মাসের সম্ভবত ১৯/২০ তারিখের দিকে আমি কনফার্ম হই যে আমি কন্সিভ করছি আলহামদুলিল্লাহ।
প্রেগনেন্সির শুরু থেকেই আমার প্ল্যানিং ছিলো আমি প্রেগনেন্সি বিষয়ক পড়াশুনা শুরু করবো। যেখান থেকে যতটুকুই পারি, সাধ্যের মধ্যে যতটুকুই কুলায় সবটুকু দিয়ে আমি মানুষিকভাবে আর শারিরীকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই। সেই সুবাদেই আমি বিভিন্ন প্রেগনেন্সি রিলেটেড গ্রুপ গুলাতে যুক্ত হই। এর মধ্যেই একটা গ্রুপ থেকে প্রিন্যাটাল কোর্সের রেকর্ড ক্লাসের উপর অফার দেখে কিনে ফেলি। কোর্সের ফি একটু বেশি হলেও আমার পরামর্শ থাকবে লাইভ কোর্স টাই করার। কারন নতুন মায়েদের মনে এত এত প্রশ্ন থাকে যে এর উত্তর সরাসরি জেনে নেয়া যায়।
প্রথম ট্রাইমেস্টার সত্যি বলতে তেমন কিছুই করতে পারিনি। আর এটাই স্বাভাবিক। বমি হওয়া, মাথা ঘুরানো, দূর্বলতা লাগা, খাবারে অরুচি, প্রচন্ড মুড সুইং, কোন কিছু ভাল না লাগা এসবেই প্রথম ৩/৪ মাস কেটে যায়। এই সময় টাতে আমার একটু বেশিই কষ্ট লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো শুরুতেই এত কষ্ট না জানি পুরো প্রেগনেন্সিতে আরো কত কষ্ট পেতে হবে।
যাই হোক, আমি ৮ সপ্তাহের পর চেকাপের জন্য ডক্টরের কাছে যাই। ডক্টর তখন কোন আল্ট্রা দেয়নি। শুধু কিছু ওষুধ দিয়ে ১ মাস পর চেকাপ আর আল্ট্রা করতে বললো। আমি যে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম উনি সূর্যের হাসি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ছিলেন। খুব ভালো ডক্টর ছিলেন। অপ্রয়োজনীয় আল্ট্রা,ওষুধ উনি খুব ভালো ভাবেই এড়িয়ে গেছেন। প্রেগনেন্সিতে একজন মনের মতো ডক্টরের আন্ডারে থাকতে পারলে এই জার্নি টা আরো অনেক স্মুথ হয়।
প্রথম ৪ মাস খাওয়া দাওয়াতে তেমন কোন নজর দিতে পারিনি। ভাত খেতে পারতাম আলহামদুলিল্লাহ। সেটাই খেয়ে কোন রকমে ডক্টরের দেয়া ওষুধ গুলো চালিয়ে গেছি।সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার থেকে আলহামদুলিল্লাহ শরীরে অনেক ইম্প্রুভমেন্ট আসে। দূর্বলতা কেটে যায়, রুচি বাড়ে। এবার শুরু করলাম প্রিন্যাটাল ক্লাস গুলো দেখা। সাথে শুরু করলাম নিয়ম করে এক্সারসাইজ করা। আমি একজন নিউট্রোশনিস্টের আন্ডারে থেকে আমার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সাপ্লিমেন্ট আর ডায়েট টা মেইনটেইন করেছিলাম। আমার হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি না হলেও, কোল্ড এলার্জি, মাইগ্রেন, প্রেগনেন্সির শুরু থেকেই কোমড় ব্যথা আর, প্রচন্ড দূর্বল ধরনের মেয়ে ছিলাম আমি। আমার কল্পনাতেও আসেনি যে আমি পারবো শেষ পর্যন্ত সাহস ধরে রেখে বাসাতেই নরমালের জন্য চেষ্টা করার। ওনার প্ল্যান ফলো করার ৩ মাসের মধ্যেই আলহামদুলিল্লাহ নিজেই ইম্প্রুভমেন্ট টের পেলাম। যেহেতু আমি খাটো (৪’ ১১”)তাই নরমালে হওয়াটা একটু রিস্কি ছিলো এটা আমার ডক্টর আমাকে বলছিলো। আর উল্টাপাল্টা নিয়ম ছাড়া খাবার খেয়ে ওজন যদি অতিরিক্ত বেড়ে যায় সেটাও নরমালের পথে বাধা হয়ে দাড়াঁবে। কারন ওজন বেড়ে গেলে অনেক ধরনের শারিরীক সমস্যারও সৃষ্টি হয়। আর বাবুর ওজনও যদি অনেক বেশি বেড়ে যায় সেটাও আমার হাইট অনুযায়ী নরমালে হওয়াটা রিস্ক হয়ে যাবে। আমার প্রেগনেন্সির শুরুতে ওজন ছিলো ৫০, মাঝে ৫৬ হয়েছিলো ৭ মাসের পর থেকে প্রায় ১/১.৫ ঘন্টার মতো হেটেছি নিয়মিত। তাই কিছুদিন পর ওজন মেপে দেখলাম ৫৪ হয়েছে। একটু টেনশনে পড়ে গেছিলাম ওজন কমে যাওয়াতে যে বাবুর গ্রোথ ঠিক মত হচ্ছে কিনা। পরে আল্ট্রার রিপোর্টে দেখলাম আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
৮ মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামেই ছিলাম। ডেলিভারির আগে দিয়ে নরসিংদী চলে আসি। আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করতাম নরসিংদী যেয়ে যেন আমার মনের মতো সাপোর্টিভ একজন ডক্টর পাই। কিন্তু নরসিংদী এসে তো দেখি এখানে সিজারের ছড়াছড়ি। এখানে রিস্কের ‘র’ টা দেখা গেলেও অল্টারনেটিভ কোন চিন্তা না করে দেখি সিজারের জন্য প্রস্তুত হতে বলে। এর উপর হাসপাতাল গুলোতে ভাল সার্ভিস পাবো কিনা সেই সন্দেহটাও ছিলো। একেতো মন মতো ডক্টর নাই তার উপর পেইনের সময় আমাকে আমার মতো থাকতে দিবে কিনা, আয়া, নার্সদের ব্যবহার কেমন হবে, হসপিটালের পরিবেশ কেমন হবে এসব চিন্তা করতে করতে হাসপাতালে যাওয়ার প্রতি একটা অনীহা তৈরি হয়ে গেছিলো মনের মধ্যে। এর মধ্যেই আমার শ্বশুর বাড়ীর পরিচিত একজন পল্লী গাইনী ডক্টরের খোঁজ পাই যিনি বাসায় যেয়েও ডেলিভারি করায়। এটা শুনে একটু স্বস্তি পাই। এরপর ওনার সাথে একদিন দেখা করে, কথা বলে বুঝতে পারলাম উনি খুব অভিজ্ঞ একজন ডক্টর। উনি রিটায়ার্ড করেও গ্রামে একটা চেম্বার দিয়ে বসেন এখনো। যথেষ্ট অমায়িক ব্যবহার পেলাম। ওনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম যে উনি নরমালের জন্য ১০০% চেষ্টা করেন যদি সবকিছু ঠিকঠাক দেখেন। কিন্তু কোন রিস্ক ফ্যাক্টর দেখলে উনি রেফার করে দেন যেহেতু উনি সিজার করান না তাই। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবোনা এমন একজন ডক্টর মিলায় দেয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ!!!
সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার থেকে পুরো দমে এক্টিভ ছিলাম। দুজনের সংসার ছোট মনে হলেও কাজ কিন্তু কম না। সব কাজ একাই করছি। শুরু থেকেই লো কোমড ইউজ করছি। প্রিন্যাটাল ক্লাস থেকে শেখা ব্যায়াম গুলো নিয়মিত ভাবে করা শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার খুব ভালোভাবেই কেটে গেছিলো। মনেই হয়নি যে আমি প্রেগনেন্ট।
থার্ড ট্রাইমেস্টারের দিকে শরীর ভারি হওয়া শুরু করলো। তারপরেও ঘরের কাজ, রান্না বান্না, ব্যায়াম সব চালায় গেলাম। এসময়ে এসে আমার অতিরিক্ত গরম আর সহ্যই হতোনা, শ্বাসকষ্ট হতো। রাতের বেলা একপাশ থেকে আরেক পাশে ফিরতে খবর হয়ে যেতো। আর শোয়া থেকে উঠতে গেলে তো কথাই নাই। পান্ডার মতো গড়াগড়ি খেতাম। হাজবেন্ড এসে তুলে দিতো ।
এটা সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম খুব তাই ডেলিভারি পেইন নিয়ে ভয় পাওয়া বা মন খারাপ হয়ে থাকাটা কম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এই নেয়ামতের উসিলায় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক টা দৃঢ় করতে। নামাজ – কালাম, কুরআন তিলাওয়াত, হেটে হেটে যিকির আযকার, ঘরের কাজ, রান্না বান্না, প্রেগনেন্সি নিয়ে গ্রুপ গুলোতে, ইউটিউবে ঘাটাঘাটি করা, প্রেগনেন্সি রিলেটেড বই গুলো পড়া এসব করতে করতেই দিন, মাস কোন দিক দিয়ে যে পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। কিন্তু যখনই ডেলিভারির সময়ের কথা মনে পড়তো আমার ভিতরে ভয়ে চিলিক মেরে উঠতো। আমি পারবো কিনা এই পেইন সহ্য করতে, আমি ধৈর্য ধরতে পারবো কিনা, আমি শারিরীক ভাবে যে দুর্বল আবার উচ্চতাও কম আমার শরীর সাপোর্ট করবে কিনা, শেষ মুহুর্তে কোন জটিলতা চলে আসলে কি হবে, আমি মনে হয় মারা যাবো এই ধরনের হাজারো চিন্তা চলে আসতো কখনো কখনো। বিশেষ করে থার্ড ট্রাইমেস্টারের লাস্টের দিকে এসে কিসব আজগুবি চিন্তা ভাবনাও চলে আসতো মাথার মধ্যে। মনে হতো আমি মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত না, আমি বাচ্চা পালতে পারবোনা, এই বাচ্চা নেয়ার উদ্দেশ্য কি ব্লা ব্লা… নাউজুবিল্লাহ!!! পরে বুঝতে পারলাম শেষের দিকে এসে আবারো হরমোনাল পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। যেমন টা ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে থাকে। পার্থক্য শুধু তখন শারিরীক দূর্বলতা এত বেশি থাকে যে এসব অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসার সময় নাই । এই বিষয় গুলো আমি আর কারো সাথে না শুধুমাত্র আমার হাজবেন্ড আর একটা বান্ধুবীর সাথে শেয়ার করি। আলহামদুলিল্লাহ তারা সেই সময়টাতে আমাকে খুব সফটলি হ্যান্ডেল করছে, বুঝাইছে। হাজবেন্ড খুব বেখায়ালি মানুষ, তাই আমিই তাকে পুরো প্রেগনেন্সিতে সবকিছু বলে বলে আমার পাশে রাখছি ছায়ার মতো। ডেলিভারির দিনও বাবু হওয়ার কয়েক ঘন্টার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে আমার সাথে ছিলো আলহামদুলিল্লাহ।
আমার ফ্রেন্ডলিস্টের এক আপু তার প্রেগনেন্সি জার্নি শেয়ার করেছিলেন। সেখানে ইউটিউবে এক বিদেশি দৌলার চ্যানেল সাজেস্ট করেছিলেন। আমিও এরপর থেকে সেই চ্যানেলের সব ভিডিও দেখা শুরু করলাম। সেই দৌলা থেকে আমি নরমাল ডেলিভারি করাবো এবং কোন রিস্ক ছাড়া সিজারের কথা মাথায় আনবো না এই ধরনের অনুপ্রেরণা আর সাহস দুটোই পেলাম। এত বেশি পজিটিভ ভাবে বুঝিয়ে বলতো যে এই আত্মবিশ্বাস আসবেই যে আমি পারবো। ওনার একটা কথা থেকে আমি খুব বেশি অনুপ্রাণিত হই। সেটা হচ্ছে উনি বলছিলেন যে উনি নিজেও নরমালের জন্য সাহস করতে পারছেন কারন ওনার মা এতগুলো বাচ্চা বাসায় নরমালেই জন্ম দিছে। তো ওনার মা পারলে উনি পারবেনা কেনো এই টাইপের কিছু একটা। তখন আমার মাথায় আসলো আরেহ! আমার মা, আমার ৩ খালা, আমার মামাতো বোন, খালাতো বোন সবারই নরমালে ডেলিভারি হইছে তাও আবার বাসাতেই আলহামদুলিল্লাহ। তারা পারলে আমি কেনো পারবোনা? ব্যাস, এবার মন হয়ে গেলো শক্ত। যত যাই হোক, যত পেইনই হোক আমার সিলেক্ট করা ডক্টর যতক্ষন পর্যন্ত না বলবে যে আমার রিস্ক আছে ততক্ষন পর্যন্ত আমি বাসাতেই চেষ্টা করে যাবো। যদিও এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অনেক টাফ একটা ডিসিশন। তাও আল্লাহর উপর ভরসা করে আমি এই সিদ্ধান্তেই অটল থাকলাম। পাশাপাশি ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনের জন্য গাড়ী ঠিক করে রেখেছিলাম, হাসপাতাল ও সিলেক্ট করে রেখেছিলাম। তবে সবার পরিস্থিতি একরকম হয়না৷ কারো কারো পুরো প্রেগনেন্সি ভাল থাকে শেষের দিকে এসে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। তাই কখনোই একটা সিদ্ধান্তের উপর বসে থাকা যাবেনা। যেকোন ধরনের সিচুয়েশনের জন্য মানুষিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সিজার আছেই তো ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনের জন্য। তাই এমন একজন ডক্টর বাছাই করে রাখবেন যার উপর আপনার ১০০% আস্থা আছে।
৩৭ সপ্তাহ থেকে প্রিন্যাটাল ক্লাস থেকে শিখে শারিরীক ভাবে লেবারের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। ইউটিউব থেকে বিদেশী দৌলার ভিডিও গুলো দেখে মানুষিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ৩০ সপ্তাহ থেকেই আমি নিয়মিত ১ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ধরে হাটাহাটি করার অভ্যাস করি যেটা ডেলিভারির আগের দিন পর্যন্ত কন্টিনিউ করেছি। ডেইলি ৮/১০ টা খেজুর খেয়েছি। ইউটিউবে ইন্ডিয়ান কিছু ডক্টর নরমাল ডেলিভারির জন্য ৪/৫ টা ব্যায়ামের রিলস দেখেছিলাম। আমার কাছে সেগুলো সহজ লাগাতে শেষের দিকে এসে নিয়মিত ভাবে সেগুলোও প্র্যাক্টিস করে গিয়েছি।
৩৭ সপ্তাহে আল্ট্রা করে দেখলাম আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু নরমাল। দেখতে দেখতে ৩৮ সপ্তাহও শেষ হয়ে গেলো। পেইনের কোন লক্ষন দেখিনা। অনবরত দোয়া করে যাচ্ছিলাম। কারন বাবু বেশি বড় হয়ে গেলে আমার জন্য সেটা একটা রিস্ক হয়ে যাবে। আমি যে আশা নিয়ে আছি সেটাও মাটি হয়ে যাবে। ডেলিভারির পেইন কেমন হয় বা কিভাবে শুরু হবে তারও কোন আইডিয়া নাই প্রথম প্রেগনেন্সি যেহেতু। শুধু জানতাম কোমড় থেকে তলপেটে ব্যথা আসবে নিয়মিত বিরতিতে যেটার তীব্রতা সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। আর জানতাম যে ব্লাডসহ বা ব্লাডছাড়া মিউকাস প্লাগ দেখা দিবে অথবা পানি ভেংগে যাবে। আমি দোয়া করতে থাকতাম পানি যেন আগে আগে না ভাঙ্গে। মিউকাস প্লাগই যেন দেখি। অপেক্ষায় রইলাম এমন কিছু লক্ষন দেখার।
জুলাইয়ের ১৯ তারিখ ইডিডি ছিলো। কোরবানী ঈদের পর থেকে প্রত্যেকটা দিন আমার ব্র্যাক্সটন হিক্স হতো। জুলাইয়ের ৫/৬ তারিখ থেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কোমড়ে কেমন একদম হালকা একটা ব্যথার মতো করতো। ভি এরিয়ার ব্যথা তো ছিলো থার্ড ট্রাইমেস্টার থেকে। সেই ব্যথা দেখি আরো বেড়ে গেছে। বুঝতেই পারতেছি যে সময় ঘনিয়ে আসছে। ৭ তারিখ মধ্য রাতেই কোমড়ে হালকা ব্যথার মতো কিছু একটা টের পেয়েছিলাম যেটা ঘুমের কারনে আর গুরুত্ব দেইনি। ৮ তারিখ সকাল থেকে কোমড়ে কেমন একটা ব্যথা অনুভব করছিলাম। যেটা একদম হালকা কিন্তু থাকেনা ব্যথাটা। যেহেতু এখনো মিউকাস প্লাগ দেখিনি তাই ফলস পেইন ভেবে আমিও খুব একটা পাত্তা দেইনি। সারাদিন নিয়মিত বিরতিতে এই ব্যথাটা হচ্ছিলো। সারাদিন এত বেশি প্রস্রাবের চাপ আসতে লাগলো ঘন ঘন যে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম সাথে ৪/৫ বারের মতো টয়লেট ও হয়ে গেলো। মাগরিবের আগে করে ব্লাডি শো দেখলাম। বুঝতে পারলাম এটাই রিয়েল পেইন আসার লক্ষন এবং আমার গত ৯ মাসের জার্নি টা খুব দ্রুত শেষ হতে যাচ্ছে। ব্লাডি শো দেখার পর হাজবেন্ড ছাড়া কাউকে কিছু বলিনি। তবে আমার হাব ভাবে আমার শ্বাশুড়ি কিছুটা আঁচ করতে পেরে সেই ডক্টরকে বাসায় আনতে চাচ্ছিলো। আমিই না করে দিছিলাম যে এত দ্রুত আনার দরকার নাই। পেইন আরো ভালো করে উঠুক, যদি অবস্থা বেগতিক হয় তখন খবর দিয়েন। আসলে আমি চাচ্ছিলাম না উনি এসে পিভি চেক করুক। কারন কখন কোন মুহুর্তে কি হচ্ছে আর কি হবে আমার জানাই আছে সব। শুধু শুধু আরেকজনের নিয়ন্ত্রণে যেয়ে নিজের রিলেক্সেশন টা নষ্ট করতে চাচ্ছিলাম না। আমি শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত শক্ত হয়ে অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলাম। এরপর সন্ধ্যার পর হাজবেন্ডকে নিয়ে ঘণ্টাখানেকের মতো হেটে আসলাম। কন্ট্রাকশন তখন ১০ মিনিট গ্যাপেই আসছিলো। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাচ্ছিলাম আল্লাহ আপনি আমার কল্পনার চেয়েও বেশি সহজ করে দিয়েন। ভিতরে একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে নিজে প্যাম্পার করতেছিলাম। যেহেতু প্রথম প্রেগনেন্সি, আমি কাউকে না জানিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলতেছি কিনা কোন এই ভয়টাও ছিলো। তবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল টাই বেশি রাখছি তাই এসব চিন্তায় কম ফোকাস করছি। রাত বাজে বারোটা। পেইন তখন ৫/৬ মিনিট গ্যাপে আসতেছিলো। আমি সারা ঘর জুড়ে হাটাহাটি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পেইন এখন পর্যন্ত সহনীয়। আমার শ্বাশুড়িকে বললাম পেইনের কথা। এখন আমাদের ঠিক করা ডক্টরকে কল করি কিন্তু পাইনি৷ এরপর কল দিয়ে নানুশ্বাশুড়ীকে আনায় রাতের সাড়ে বারোটায়। কারন উনি সরকারি ভাবে ধাত্রী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছিলেন। এবং ওনার হাতে ওনাদের পরিবারের অনেক সন্তানের জন্ম হইছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার বাসায় ডেলিভারির জন্য সাহস করার এটাও একটা কারন ছিলো। আর আমার আম্মার শুরু থেকেই বিশ্বাস ছিলো প্লাস এটাই দোয়া করে দিতো যেন ঘরেই খালাস হয়, হাসপাতালে যেন দৌড়াদৌড়ি করতে না হয়। আমার শ্বাশুড়িরও এই এক কথাই ছিলো। আর আমার হাজবেন্ড নরমালে হোক চাইলেও বাসায় হোক এটাতে খুব একটা রাজি ছিলোনা। পরে আমি তাকে বুঝায় সুঝায় রাজি করাইছি।
রাতের দেড়টা কি দুইটার দিকে ৩/৪ মিনিট গ্যাপে কন্ট্রাকশন আসতেছিলো। এবার ব্যথার তীব্রতা আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে তবে এখনো সহনীয়। আমি বুঝতে পারতেছিলাম যে এক্টিভ লেবার শুরু হয়ে গেছে। আমি হাটাহাটি চালায় গেলাম, পেইন আসলে স্কোয়াট করতেছিলাম, নাইলে ফরোয়ার্ড লিনিং পজিশনে চলে যাচ্ছিলাম। আবার ব্যথা কমলে হাজবেন্ডের সাথে কথা বলে মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করতেছিলাম। নানুশ্বাশুড়ি কোমড়ে পিঠে ম্যাসাজ করে দিচ্ছিলো। হিপ রোটেট করে আরাম পাচ্ছিলাম কিন্তু উনি এটা আমাকে করতে দিচ্ছিলোনা। বাচ্চার মাথা ঘুরে যাবে এই সেই বলতেছিলো। কিন্তু আমি তো জানি যে এখন যত বেশি মুভ করবো তত ভালো। কিন্তু ওনাকে এখন এসব বুঝানোর মতো অবস্থায় ছিলাম না। বিছানায় বসলে আরাম লাগতেছিলো কিন্তু ব্যথাও চলে যাচ্ছিলো। আমার এত ক্লান্ত লাগতেছিলো বলার মতো না। মনে হচ্ছিলো হাজার বছর ধরে ঘুমাই না। তাই বসে থেকেই কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিচ্ছিলাম। কিচ্ছুক্ষণ পর যখন মনে হলো যে এভাবে থাকলে ডিলে হয়ে যাবে অনেক তখনি উঠে হাটাহাটি শুরু করলাম। এতে পেইন বেড়ে যাচ্ছিলো যেটা আমি চাচ্ছিলাম।সাড়ে পাঁচটা কি ছয়টা পর্যন্ত এমন ব্যথাই ছিলো ৩ মিনিট গ্যাপে আসতেছিলো ১ মিনিট থেকে চলে যাচ্ছিলো। ছয়টার দিকে আমার হাজবেন্ড যেয়ে ওই ডক্টরকে নিয়ে আসে সাথে করে। উনি এসে পিভি চেক করে। কতটুকু খুলছে বলে নাই। উনি আমার হাজবেন্ডকে কিছু মেডিসিন, ইঞ্জেকশন, স্যালাইন আনতে পাঠায়। এত সকালে সব ফার্মেসি বন্ধ। আমার হাজবেন্ড তো পাগলের মতো শহরের এই মাথা থেকে সেই মাথা ঘুরতেছে এসবের জন্য। তারপর সব নিয়ে আসে বাসায়। কিন্তু ডক্টর দেখতেছে যে স্যালাইন দিছে সাথে স্যালাইনের সেট দেয়নাই। এবার সেটার জন্য আবার পাঠাইছে হাজবেন্ডকে। এদিকে উনি পিভি চেক করে হয়তো বুঝতে পারছে যে মাত্র ৫-৬ সেমি খুলছে বাকিটা খুলতে আরো অনেক সময় লাগবে আমি ততক্ষন পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারবো কিনা এজন্য আমাকে ব্যথা কমার ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয় যেটা আমার পছন্দ হয়নি৷ আর ওনাকে তখন না করার মতো এনার্জিটাও আসলে ছিলোনা। পেইন আসলে বলতেছিলাম যে আমি আর পারতেছিনা কিন্তু পেইন চলে গেলে রেস্ট নিচ্ছিলাম আর নিজেকে বুঝাচ্ছিলাম যে আর অল্প কিছুক্ষন আমি পারবো, আল্লাহ সহজ করে দাও। পরিস্থিতি সহজ হওয়ার একটা দোয়া শিখেছিলাম এক আপুর দেয়া পোস্ট থেকে সেই দোয়া ছাড়া আর কিছুই তখন মনে পড়তেছিলোনা৷ পেইন আসলেই আর সহ্য করতে পারতেছিনা বলে বসে যাচ্ছিলাম পেইন ম্যানেজ করার জন্য কিন্তু কোন চিৎকার বা কান্নাকাটি কিছুই করিনি। আমি আসলেই অনেক বেশি টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম। ডক্টর ইঞ্জেকশনটা দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলছে যেটার খেসারত আমাকে দিতে হইছে। ইঞ্জেকশন টা দেয়ার পর পরই আমার ট্রাঞ্জেশন স্টেপ শুরু হয়ে গেছে বুঝতে পারছি। এটার তীব্রতা ভয়াবহ রকম বেশি। ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছিলাম। ব্যথায় যখন বসে গেছি তখনই বিকট শব্দ করে পানি ভেঙ্গে যায়। শব্দ শুনে নিজেও থতমত খেয়ে যাই । ডক্টর তো খুশি। উনি বলতেছে লেবার তো ভালই প্রোগ্রেস করতেছে। আর আমি মনে মনে বলতেছিলাম যে আপনি এই ইঞ্জেকশন টা না দিলে আরো ভাল প্রোগ্রেস করতো। ওনার প্ল্যান ছিলো এখনি স্যালাইন দিয়ে পেইন বাড়িয়ে বাবু বের করে ফেলার। যেটা সচরাচর রুটিন প্র্যাক্টিস হিসেবে হাসপাতাল গুলোতে করে থাকে। উনিও নিশ্চই ব্যাতিক্রম হবেন না। আর ঠিক এই কারনেই আমার মন মতো পজিশনে থাকতে পারিনাই ডেলিভারির সময়। আমি চাচ্ছিলাম এটলিস্ট স্কোয়াট পজিশনে থেকেই পুশ করতে তাইলে যদি টিয়ার বা এপিশিওটমি কিছুটা এভোয়েড করতে পারি। কিন্তু সবকিছু কি আর মন মতো হয়? দুইটা বালিশের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে থেকেই পুশ করতে হইছিলো আমাকে।
পানি ভেঙ্গে যাওয়ার পর পরই দেখলাম ব্যথার ধরন কিছুটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। এবং টয়লেট করে দিবো এমন ফিলিংস আসা শুরু হলো এখন পেইনের সাথে। কিন্তু ইঞ্জেকশন টা দেয়ার কারনে এখন তো আর পেইন এসে থাকতেছেনা। আনুমানিক সোয়া সাতটা করেই আমার পুশিং স্টেজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাথা এসে না থাকায় আমি আর পুশ করতে পারতেছিলাম না। এদিকে ডক্টর তো পাগলের মতো আমার হাজবেন্ড কে কল দিচ্ছে সেট পাইছে কিনা, তাড়াতাড়ি যেন নিয়ে আসে। আমি কান দিয়ে শুনতেছিলাম খালি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছিলাম আল্লাহ ও সেট নিয়ে আসার আগেই যেন আমার বাবু দুনিয়াতে চলে আসে। আমাকে যেন এই স্যালাইন মানে ব্যাথা বাড়ার ওষুধ নিতে না হয়৷ এরপর অনবরত পরিস্থিতি সহজ হওয়ার দোয়াটা পড়তেছিলাম তখন এতটুকুই মনের মধ্যে আসছিলো। আর চাচ্ছিলাম বাবু হয়ে যাক হাজবেন্ড আসার আগেই। এই তাড়না থেকে আমিও ভুল করে ফেললাম। যতটুকু ব্যথা আসতেছে যে কয়েক সেকেন্ড থাকতেছিলো ততটুকুর মধ্যেই আমি খুব বেশি প্রেশার দিয়ে বাবু বের করে ফেলতে চাচ্ছিলাম। ডক্টর দেখলো বাবুর মাথা কাছাকাছি চলে আসছে। উনি বুঝতেছে যে আমি বেশি প্রেশার দিচ্ছি, পরে উনি মনে করায় দিলো যে ব্যথা চলে গেলে আর প্রেশার দিওনা। একেতো ইঞ্জেকশন দিয়ে দিছে, এর উপর চিৎ হয়ে শোয়া কিভাবে পেইন বাড়বে? কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাচ্ছিলাম যে আল্লাহ আপনি চাইলেই সম্ভব। আমার জন্য সহজ করে দিন। ওনার এই একটা ভুলের কারনে আমাকে আধা ঘন্টা বা তারো বেশি সময় লাগছে পুশিং স্টেজ টা পার করতে। দোয়া করতে করতে দেখি পেইনের তীব্রতা অটোমেটিক বাড়তেছে আলহামদুলিল্লাহ। পুশিং আর্জ আসতেছে। আমিও চেষ্টা করতেছি কিন্তু এত্ত ক্লান্ত যে আর শক্তিই পাচ্ছিলাম না। উনি সাইড কেটে দিলো। এরপর সাতটা চল্লিশের পর যে পেইন টা আসলো তাতেই শরীরের সব শক্তি দিয়ে পুশ করলাম। আল্লাহু আকবর! বাবুর মাথাটা যখন বের হচ্ছিলো সাথে সাথে অন্যরকম অনুভূতি চলে আসলো। জান্নাতী অনুভূতি কেমন তা জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত তো বুঝা যাবেনা কিন্তু মনে হচ্ছিলো আমি জান্নাতেই আছি। আরো শক্তি দিয়ে বাবুর বাকি অংশ টাও বের করার চেষ্টা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ সাথে সাথে দেখি ব্যথা, কষ্ট সব গায়েব। কেমন যেন যুদ্ধ জয় করার মতো অনুভূতি কাজ করতে লাগলো। আমি তো বাবুকে দেখা মাত্রই সালাম দিলাম। আর তাকবীর,তাহমীদ, তাহলীল পড়তে থাকলাম অনবরত। আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলোনা যে আমি এটা করতে পারছি। আল্লাহর কুদরতের কোন শেষ নাই আসলে। এটা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হইছে সম্পূর্ণ। প্রেগনেন্সি রিলেটেড জ্ঞান অর্জন করা, এক্সারসাইজ করে বডিকে প্রিপেয়ার্ড করা আর ডায়েট মেইনটেইন করা ছাড়া আমার কোন ভূমিকাই ছিলোনা আসলে। কারন পুরো প্রেগনেন্সিতে আমি যতটুকু না ইবাদত করতে পারছি তার থেকে বেশি আমি শুধু দোয়াই করতে পারছি। এত বেশি বেশি দোয়া করছি যে নিজের কাছেই খারাপ লাগা শুরু হলো যে জীবনের এতগুলো বছর পার করে ফেললাম অথচ দোয়ার গুরুত্ব কি সেটাই বুঝলাম না। আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামত, রহমত আমার সন্তানের উসিলায় আল্লাহ এই গুরুত্ব টা আমাকে বুঝায় দিলেন আলহামদুলিল্লাহ!!!….
ডক্টর টা ওনার ডক্টরলি প্র্যাক্টিস ছাড়া আমাকে শান্ত রাখতে খুব খুব হেল্প করছে। আমাকে শান্ত ভাবে,ঠান্ডা ভাবে বুঝাইছে, আমাকে প্যাম্পার করছে যেটা আমার ডেলিভারি অনেকটাই সহজ করছে আলহামদুলিল্লাহ।
জন্মের সময় বাবুর গলায় কর্ড প্যাচানো ছিলো এটা ছাড়া বাবু সম্পূর্ণ সুস্থ্য আলহামদুলিল্লাহ।
প্রিন্যাটাল ক্লাস থেকে বাবুর ল্যাচিং, ব্রেস্টফিডিং, ব্রেস্টের যত্ন এগুলো জানা থাকায় এই বিষয় গুলো আলহামদুলিল্লাহ অনেক সহজ হয়ে গেছে। কোর্সের সাথে জড়িত প্রত্যেককে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিক।
ইউটিউবে যে দৌলার ভিডিও দেখেছিলাম ওনার দুইটা কথা আমার মনে গেঁঁথে গেছিলো যা আমাকে অনেক সাহস দিছে।
“Mommas you are built to birth”
“knowledge is power “
পরের কথা টা ছোটবেলা থেকে জেনে আসলেও এটার সত্যতা আমি আমার প্রেগনেন্সিতে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। জানার কোন শেষ নাই। আর যত বেশি জানবেন তত বেশি সহজ হবে আপনার জার্নিটা। জীবনের যেকোন পর্যায়ে পরীক্ষার আগে আমরা খুব ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে নেই কিন্তু কেনো জানি প্রেগনেন্সির মতো, মা হওয়ার মতো এত বড় একটা পরীক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিতে খুব নারাজ। যদি সামর্থ্য, সুযোগ থাকে তবে প্রত্যেকের উচিত প্রেগনেন্সি রিলেটেড জ্ঞান অর্জন করা। আত্মবিশ্বাস, সাহস বাড়ানোর জন্য, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নাই।আর এটার জন্য প্রিন্যাটাল কোর্স অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটা একটা সম্পূর্ণ গাইডলাইন। এবার আপনি যেখান থেকেই করেন না কেনো। কোর্স করতে না পারলে প্রেগনেন্সি রিলেটেড বই (যেমন -আমানি বার্থ, মা হওয়ার দিনগুলোতে, মা হওয়ার গল্প ইত্যাদি) গুলো পড়বেন। প্রেগনেন্সি রিলেটেড গ্রুপ গুলোতে এক্টিভ থাকবেন, ইউটিউবে বিভিন্ন উপকারী চ্যানেল আছে খোঁজ নিয়ে বের করে ভিডিও গুলো দেখবেন। অনেক উপকৃত হবেন ইন শা আল্লাহ। হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি না হলে শুরু থেকে বা সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার থেকেই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আর ব্যায়াম করার দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিবেন। আর উঠতে বসতে দোয়া করবেন একীন আর ইখলাসের সাথে। প্রেগন্যান্সির পুরো সময়টা দোয়া কবুলের সময়। তাই যত বেশি পারবেন অনবরত দোয়া করবেন। দোয়া কবুলের মুহুর্ত গুলো মিস করবেননা কোনভাবেই। আল্লাহর ফয়সালার উপর ভরসা রাখবেন, সন্তুষ্ট থাকবেন এতেই দেখবেন সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিও অনেক সহজ ভাবে আল্লাহ পার করায় দিবে।
আরেকটা বিষয়, আফটার ডেলিভারি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন দেখা দেয়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে আমলে না নিলেই বিপদ। নিজেকে যথেষ্ট হাসি খুশি রাখতে হবে। যে মানুষ গুলোকে আপনি ভালোবাসেন, যারা আপনাকে বুঝে, সাহায্য করবে, সাপোর্ট করবে চেষ্টা করবেন এই মানুষগুলোর সাথে রাখার। বাবু হওয়ার আগের জীবন আর পরের জীবন সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম হয়। এই নতুন জীবনের সাথে অভ্যস্ত হতেও সময় লাগে। আগে থেকে যত বেশি মানুষিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাবে, এই জীবনে অভ্যস্ত হতেও তত সহজ হবে।
আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেক মা হতে চাওয়া নারীকে মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদন করার তৌফিক দিক। সবার মা হওয়ার জার্নি টা সহজ করে দিক। আমাদের মা মেয়ের জন্য সবার কাছে অনেক অনেক দোয়া চাই।