প্রেগন্যান্সি (গর্ভাবস্থা) কোনো অসুস্থতা নয় — এটা একেবারেই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক একটি অবস্থা।
তবে এই সময় শরীরে অনেক হরমোনাল ও শারীরিক পরিবর্তন হয়, যার ফলে কিছু অসুবিধা বা অস্বস্তি (যেমন বমি, ক্লান্তি, কোমর ব্যথা ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে। এগুলো রোগ নয়, বরং শরীরের অভিযোজনের অংশ।
💡 সংক্ষেপে বলা যায় —
প্রেগন্যান্সি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
শুধু বিশেষ যত্ন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রাম দরকার।
ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শে থাকলে মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকে।
🩺 ১. চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে
অসুস্থতা বা রোগ মানে শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা, ক্ষতি বা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়া।
কিন্তু প্রেগন্যান্সি হলো শরীরের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া— একজন নারীর শরীর স্বাভাবিকভাবেই গর্ভধারণ ও শিশুকে বেড়ে ওঠার উপযোগী হয়।
এটি রোগ নয়, বরং প্রজনন ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রমের ফলাফল।
👉 তবে গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতা (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে — এগুলো আলাদা চিকিৎসা প্রয়োজন করে।
অর্থাৎ, গর্ভাবস্থা নিজে অসুস্থতা নয়, কিন্তু গর্ভাবস্থায় অসুস্থতা হতে পারে।
🧬 ২. শারীরবৃত্তীয় (শরীরের কার্যাবলী) দিক থেকে
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে — যেমন স্তন বড় হওয়া, জরায়ু প্রসারিত হওয়া, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ইত্যাদি।
এগুলো রোগের লক্ষণ নয়, বরং শরীরের নতুন জীবনের জন্য মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া।
শরীর আসলে “শিশু লালন-পালনের জন্য প্রস্তুত” হচ্ছে — এটি শক্তির একটি নিদর্শন, দুর্বলতার নয়।
🧠 ৩. মানসিক ও সামাজিক দিক থেকে
অনেক সময় সমাজে প্রেগন্যান্ট নারীকে “রোগী” ভেবে আচরণ করা হয়, যা সঠিক নয়।
🌸 গর্ভাবস্থা একদিকে শারীরিক পরিবর্তন, অন্যদিকে মানসিক শক্তি ও মাতৃত্ববোধের বিকাশের সময়।
নারী এই সময়টাতে আরও সংবেদনশীল ও সৃজনশীল হয়ে উঠে। গর্ভাবস্থা কোনো অসুস্থতা নয়, বরং এটি জীবনের নতুন সূচনা।
🎯 কিন্তু তিক্ত সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে প্র্যাগ্নেন্সিকে এক ধরনের অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বমি লাগা, খেতে না পারা, ক্লান্তি, বিষণ্নতা ইত্যাদি সমস্যাকে অধিক হারে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মায়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।
যার ফলে অনেকেই ফিজিক্যাল এক্টিভিটিস, ফিজিক্যাল মুভমেন্ট একেবারেই কমিয়ে দেন।
কারও যদি শারীরিক কোন জটিলতা না থাকে, ডাক্তার কোন ধরনের বেড রেস্টের কথা না বলেন তাহলে একজন মা চাইলেই স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেই পারেন।
কোন ধরনের কাজ না করে সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকলে শারীরিক জটিলতা বরং বাড়ে। সাথে যোগ হয় মানসিক ক্লান্তি, বিষণ্নতা।
প্রোডাক্টিভ কাজ শুধু শরীরের জন্য নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও দরকারি।
পর্যাপ্ত পরিশ্রম না করলে আপনি কোনভাবেই পর্যাপ্ত খেতে পারবেন না, ঘুমাতে পারবেন না।
অথচ এই সময়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
✅ প্রেগনেন্সিতে আপনি চাইলেই নিজেকে ভালো কিছু কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
যেমন,
🪴 আপনার ছাদে অথবা বারান্দায় গাছ লাগাতে পারেন। সকাল অথবা বিকালে গাছের পরিচর্যা করতে পারেন।
💐 গাছ, ফুল, লতাপাতা আপনার অবসর সময়ে বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠার উত্তম মাধ্যম হতেই পারে।
🪡🧶 আপনি ঘরে বসে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করতে পারেন। যেমন বেবি কাথা, কাপড় সেলাই করতে পারেন। জামায় ডিজাইন করতে পারেন।
হস্তশিল্পের টুকটাক কাজ করতে পারেন।
📚 বইয়ের মতো উত্তম বন্ধু আপনি অল্পই পাবেন। আপনার ক্লান্ত সময়ে কিছু ভালো বই হয়ে উঠতে পারে উত্তম সঙ্গ।
প্যারেন্টিং, মাতৃত্ব, শিশুপালন বিষয়ক বই গুলো আপনার মাতৃত্বের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। যা গর্ভধারণ পরবর্তী জীবনেও অনেক উপকারে আসবে।
📿 তাছাড়া আপনি এ সময় প্রতিদিনকার ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, সীরাহ, হাদিসের বই পড়তে পারেন। এতে মানসিকভাবে আপনি প্রশান্তি অনুভব করবেন।
🥘🍲 শারীরিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখতে খাবারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু প্র্যাগ্নেন্সিকালীন সময় রান্না করাটা অনেক সময় বিরক্তিকর কাজ মনে হয়। কিন্তু নিজের এবং বাচ্চার শারীরিক সুস্থতার কথা চিন্তা করে একটা সুষম খাবার গ্রহণ খুবই দরকারি।
যে সময়টাতে শরীর একটু ভালো লাগে আপনি চাইলেই টুকটাক নিজের পছন্দের খাবারটা নিজেই রান্না করে ফেলতে পারেন।
🚶♀️🧘♀️ পর্যাপ্ত হাটাচলা, ব্যয়াম শরীরের পাশাপাশি মনকেও প্রফুল্ল রাখে। ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন এপসে আপনি প্র্যাগ্নেন্সিকালীন অনেক ভালো এক্সারসাইজ সহজেই পেতে পারেন।
✅ প্র্যাগ্নেন্সিতে একজন মাকে এটা মনে রাখতে হবে গর্ভধারন কোন অসুস্থতা নয়। তাই অসুস্থতার অযুহাত দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক জীবন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
🚫 এই বিচ্ছিন্নতা একসময় পোস্টপার্টাম সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলে।
বাচ্চা লালন পালনের কাজকে একঘেয়ে মনে হতে থাকে। ক্রমশ নিজের এবং বাচ্চার প্রতিও বিরক্তির জন্ম নিতে পারে।
নিতে পারে স্বামী, স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কে টানাপোড়েন।
🎁 প্রেগনেন্সি, সন্তান জন্মদান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্ত হওয়া। এটার জন্য তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে স্বাভাবিক জীবন চালানোর চেষ্টা করা, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে।
