পরিবারে নতুন শিশুর আগমন যেমন আনন্দের, তেমনি দায়িত্বেরও বটে। নতুন শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি তার পি-পটি পরিষ্কার রাখা, নিজে পাক-সাফ থাকা এবং ঘরের অন্যান্য  জিনিস পরিচ্ছন্ন রাখা যেন আরেকটা চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা মোকাবেলায় বাজেট ফ্রেন্ডলি, হাইজেনিক, পরিবেশ-সহায়ক একটা উপায় হচ্ছে ওয়াশেবল ডায়পার ব্যাবহার করা।

ওয়াশেবল ডায়পার ব্যবহার নিয়ে অনেকের মনেই নানান রকম দ্বিধা ও প্রশ্ন আছে। এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর এই লেখায় পাবেন ইনশাআল্লাহ।

ওয়াশেবল ডায়পার কী?

ওয়াশেবল ডায়পার হচ্ছে এক ধরনের প্যান্ট, বাচ্চাদের আন্ডারপ্যান্ট এর মতো দেখতে। এটা, waterproof (PUL) কাপড় দিয়ে বানানো। ভেতরে নরম কাপড় (suede cloth/charcoal) থাকে পকেট এর মত। অথবা, শুধু প্যান্টও থাকে। 

আর সাথে থাকে প্যাড যেটা প্যান্টের ভেতর দিতে হয় এবং ও-ই প্যাডই পি-পটি শোষণকরে নেয় । যেহুত এখানে কাপড় ব্যবহার করা হয় তাই এটা ব্যবহারের পর প্রয়োজন মত ধুয়ে শুকিয়া বার বার ব্যবহার করা যায়। এজন্যই এটাকে ওয়াসেবল ডায়পার বলা হয়ে থাকে।

আসুন জেনে নেই কেমন হয়ে থাকে এই ওয়াশেবল ডায়পার।

ডায়পার প্যান্ট ও প্যাড

ওয়াশেবল ডায়পার প্যান্টের আদলে বানানো হয়ে থাকে। কোমরের দুইপাশে বাটন থাকে খোলা এবং লাগানোর জন্য। বাটনগুলো এমন ভাবে সেট থাকে যাতে করে যেকোন সাইযের শিশুকে এটা সহজেই পরিধান করানো যায়। এটা সাধারনত ৩ থেকে ১৮ কেজি ওজনের বাচ্চারা পড়তে পারে।

এই ডায়পার প্যান্টে  ২ লেয়ারে কাপড় থাকে। উপরে লেয়ারে  লিকেজ প্রুফ কাপড় দেয়া থাকে আর ভেতরের কাপড়টা খুব নরম হয়ে থাকে। এই দুই লেয়ারের মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গা থাকে যেটা অনেকটা পকেটের মতো। যার ভেতরে অধিক শোষন  ক্ষমতা সম্পন্ন কাপড়ের প্যাড থাকে। এমনিতে প্যান্টের সাথে সেট হিসেবে কিছু প্যাড কিনতে পাওয়া যায়, আবার যার দরকার তিনি এক্সট্রা প্যাড কিনে নিতে পারেন।

প্যাড হিসেবে মাইক্রফাইবার ও চারকোল প্যাড আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত ও সহজলভ্য।

তবে, একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, মায়েরা চাইলে বাচ্চার ছোট নরম কাঁথা, নিজের ওড়না বা নরম অন্য কাপড় মাপমতন কেটে ভাঁজ করে প্যাড হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন। আমি আমার রিসার্চে দেখেছি, দেশে ও বিদেশে প্রচুর মা  কেনা প্যাডের পাশাপাশি এভাবে প্যাড বানিয়ে ব্যাবহার করেন।

ওয়াশেবল ডায়পার কিভাবে পরাতে হয়

যেহেতু বাটন দেয়া থাকে, তাই পরানো বেশ সহজ। বাচ্চাকে শুইয়ে প্যান্ট ও প্যাড সেট করে বাচ্চার কোমরের মাপ অনুযায়ী বাটন লাগিয়ে দিলেই পরানো হয়ে গেলো। এটার বিস্তারিত বুঝবার জন্য আপনি ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। 

ওয়াশেবল ডায়পার নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

ওয়াশেবল ডায়পার নিয়ে ব্যাসিক ব্যাপারে সবাই বোঝেন। কিন্তু, ব্যাবহার সম্পর্কিত নানান প্রশ্ন আমার নিজস্ব রিসার্চে উঠে এসেছে। এখানে সেগুলোই আলোচনা করছি।

১। বাচ্চার কত বয়স থেকে ওয়াশেবল ডায়পার ইউজ শুরু করা যায়-

ওয়াশেবল ডায়পার একটা হাইজেনিক, হেলদ ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট। এটা আপনি চাইলে বাচ্চার জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই ব্যাবহার শুরু করতে পারেন। সঠিকভাবে পরাতে পারলে এটার কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই আলহামদুলিল্লাহ। তবে, ডায়পারের সাইজ দেখে নিতে হবে যে এটা নবজাতকের ছোট্ট শরীরে ঠিকভাবে ফিট হবে কিনা। এজন্য নিউবর্ণ সাইজ প্যান্ট দেখে কিনতে হবে।

২। বাচ্চার কত বছর পর্যন্ত এটা ব্যবহার করা যায়?

ওয়াশেবল ডায়পারের ব্যাবহার আসলে বয়স নির্ভর না, বাচ্চার ওজন নির্ভর। আমাদের দেশে যে মডেলগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো বেশিরভাগের গাইডলাইনে থাকে ৩-১৫ কেজি ওজন পর্যন্ত বাটন এডজাস্ট করে ইউজ করতে পারার ব্যাপারটা। এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে নতুন মডেল আসছে। তাই, এক্ষেত্রে ওজন হিসেব করেই পরানো হয়।

৩। বাচ্চার বয়সভেদে আলাদা করে বারবার কিনতে হয় কিনা

সাধারনত এক সেট প্যান্ট কিনলেই সেটা বাটন এডজাসট করে ৩-১৫ কেজি ওজন পর্যন্ত পরানো যায়। তাই, বয়সভেদে কিনতে হয় না, নিজের দরকার অনুযায়ী কিনতে হয়।

৪। নিয়মিত ব্যাবহারে কয়টা প্যান্ট ও প্যাড লাগে

ওয়াশেবল ডায়পার ব্যাবহার করতে ইচ্ছুক, এমন প্রায় সব মায়ের একটা কমন জিজ্ঞাসা এটি। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, এই প্রশ্নের ধরাবাঁধা উত্তর দেয়া সম্ভব নয় আসলে।

বাচ্চার বয়স, বাচ্চার ইউরিন পাস করার অভ্যাস, প্যান্ট ও প্যাড শুকানোর ও ধোয়ার সুযোগ ও ব্যাবহার করার সময়- এসবের ভিত্তিতে ডায়পার এর সংখ্যা নির্ভর করবে। কেউ ২৪ ঘণ্টা পরাতে চাইলে তার বেশি লাগবে, কেউ মাঝে মাঝে একটু ব্যাবহার করতে চাইলে কম সংখ্যক ডায়পার লাগবে।

তাই, প্রথমে এক-দুই সেট কিনে ব্যাবহার করে দেখা উচিত যে কয়টা লাগতে পারে, সেই হিসেবে কেনা যেতে পারে। কেউ তিন চার সেট দিয়েই কাজ চালিয়ে নেন, কেউ ১০ সেটের বেশি ব্যাবহার করেন। ব্যাবহারকারীর আর্থিক সামর্থ্যও এখানে একটা ব্যাপার।

তবে, সুবিধা হচ্ছে, আপনি একবার কিনে নিলে এগুলো অনেকদিন ব্যাবহার করতে পারবেন।

৫। ওয়াশেবল ডায়পার পরালে বাচ্চার গরম বেশি লাগে কিনা

এটা নিয়েও অনেকের মনে জিজ্ঞাসা থাকে।

আমি আগেই বলেছি, ওয়াশেবল ডায়পার তৈরি হয় ওয়াটারপ্রুফ ফেব্রিক দিয়ে। এই ফেব্রিক্টা কিছুটা বাতাস চলাচলের সুযোগ দেয়। তবে ভেতরে আবার প্যাড থাকে, তাই এতকিছু পরলে বাচ্চার কিছুটা গরম অনুভুত হতে পারে।

এক্ষেত্রে আমার সাজেশন হচ্ছে, ভালো মানের ডায়পার ও প্যাড ব্যাবহার করা। বাচ্চাকে বাতাস চলাচলের জায়গায় রাখা ও বাড়তি কাপড় কম পরানো। সাধারনত, ওয়াশেবল ডায়পারে বাচ্চার খুব বেশি অসুবিধা হবার কথা না যেহেতু এটি কেবল কোমরে থাকে, তবুও অতিরিক্ত গরমের দিনে একটু খেয়াল রাখা উচিত যেন বাচ্চার অস্বস্তি না হয়। আর শীতে বা ঠাণ্ডার দিনে ওয়াশেবল প্যাড বেশ আরামদায়ক হয়।

৬। ওয়াশেবল ডায়পার টেকসই হয় কেমন

এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে আরেকটি প্রশ্ন করতে হয়, সেটি হচ্ছে- আপনি কেমন মানের ডায়পার প্যান্ট ও প্যাড ব্যাবহার করছেন?

আমার রিসার্চ অনুযায়ী, প্রচুর মা আছেন যারা এক বাচ্চার জন্য ব্যাবহার করে আরেক বাচ্চার জন্যও একই ডায়পার ব্যাবহার করছেন। তার মানে, ভালো মানের প্যান্ট ও প্যাড নিলে ২ বছরের বেশি টানা ব্যাবহার করা যায়। যত্ন করে ব্যাবহার করতে হবে।

৭। ওয়াশেবল ডায়পার কি বাজারের ওয়ান টাইম ডায়পারের মতই সার্ভিস দেবে?

এই প্রশ্নটি আসলে একটি ভুল প্রশ্ন। কারন, বাজারের ডায়পারে কেমিক্যাল থাকে, কৃত্রিম ফেব্রিক ইউজ করা হয়। তাই সেগুলো একবার অনেকক্ষণ রাখা যায় ও এরপর ফেলে দিতে হয়।কিন্তু ওয়াশেবল ডায়পার কেমিক্যাল মুক্ত একটি জিনিস। এর কাজ হচ্ছে পি পটি প্যান্টের ভেতরে আটকে রাখা। তাই, এই দুই ধরনের প্রোডাক্টে তুলনা করাটাই ভুল। দুই জিনিসের দুইরকম সার্ভিস হবে। আপনার যেটা যখন যেভাবে সুবিধা, সেভাবে ব্যাবহার করবেন।

৮। এগুলো কি ২৪ ঘণ্টা ইউজ করা যাবে? স্কিন প্রব্লেম হবে?-

এই প্রশ্নের উত্তর আমার এতোক্ষণের আলোচনার ভেতরেই আছে। তারপরেও ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলি-

ওয়াশেবল ডায়পার সঠিক নিয়ম মেনে ২৪ ঘণ্টা পরানো যাবে এবং সারা বিশ্বে প্রচুর মা এভাবে ব্যাবহার করছেন। এক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চাকে পরিষ্কার ও আরামদায়ক প্যান্ট ও প্যাড দিতে হবে এবং দুই তিন ঘণ্টা পর পর কিছুক্ষণের জন্য ডায়পার ফ্রি রাখতে হবে।

 ওয়াশেবল ডায়পার ব্যাবহারে কোন ত্বকে সমস্যা হয় না। আপনি ঠিকভাবে ব্যাবহার করবেন, বাচ্চার কোন সমস্যা হবে না। তবে, বাচ্চার যদি এমনিতেই এলারজি প্রব্লেম থাকে, তাহলে সমস্যা হতেই পারে। আসল কথা হচ্ছে, ওয়াশেবল ডায়পার নিজে একটা হাইজেনিক প্রোডাক্ট আর বাকিটা নির্ভর করছে আপনার যত্নের উপর।

৯। একটা প্যান্ট পরিয়ে একটানা কতক্ষণ রাখা যাবে?-

ওয়াশেবল ডায়পার ব্যাবহার করতে ইচ্ছুক এমন মায়েদের মনে সবচে বেশি আসা একটু প্রশ্ন হচ্ছে এটি। এর উত্তর হচ্ছে- সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।

ওয়াশেবল ডায়পার ক্লথ ফেব্রিক দিয়ে তৈরি, কোন কেমিক্যাল নেই এতে, তাই বাচ্চা ইউরিন পাস করলে কাপড় ভিজে গেলেই বদলে দিতে হবে।

এখানে কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে-

  • বাচ্চার বয়স- একদম নবজাতক বাচ্চা একটু পর পর হিসু পটি করে। সেক্ষেত্রে ঘন ঘন ডায়পার চেঞ্জ করতে হবে।
  • বাচ্চারা একটু বড় হয়ে গেলে পি পটি করার সময়ের গ্যাপ বাড়ে, সেক্ষেত্রে ডায়পার একটু দেরিতে চেঞ্জ করলেও হবে।
  • কোন বাচ্চার অভ্যাস খুব বেশি পি পটি করা, আর কোন বাচ্চার অভ্যাস দেরিতে পি পটি করা, তাই এক একজনের এক এক সময়ে চেঞ্জ করে দিতে হবে।
  • বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী যেহেতু অভ্যাস চেঞ্জ হয়, তাই সময়ও বদলায়।  এক এক জনের অভিজ্ঞতা তাই এক এক রকম হয়।

সারকথা হচ্ছে, কোন মায়ের অভিজ্ঞতায় বা অনলাইনে কোন বিক্রেতা পেইজের পোস্টে যদি লিখে- ৪-৫ ঘণ্টা রাখা যাবে, তাহলে সেটা দেখেই বিশ্বাস করবেন না।  এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে এমন ডায়পার এখনো বাজারে আসেনি।

কখন চেঞ্জ করতে হবে এটা বাচ্চার  পি-পটির সাথে সম্পর্কিত, ঘড়ির সাথে নয়।  

১০। বাচ্চা প্রস্রাব করলে সেটা থেকে ভেজা ভাব হয়ে ঠাণ্ডা লাগে কিনা

ওয়াশেবল ডায়পার মানেই সেটা ভিজে গেলে বদলে দিতে হবে। এখন কোন ব্যাবহারকারী যদি সময়মত না বদলে দেন, তাহলে ভেজা ভাব থেকে বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগতেই পারে। এক্ষেত্রে ডায়পারের নিজস্ব কোন ত্রুটি নেই, ব্যাবহারের উপর ব্যাপারটা নির্ভর করবে।

১১। শুধু প্যাড/ ইন্সারট পালটালেই হবে নাকি  ডায়পারও পালটাতে  হবে?

সাধারন নিয়ম হল, যা ভিজবে, তা পাল্টাবে। প্যাড ভিজে গেলে প্যাড তো অবশ্যই বদলে দিতে হবে, যদি একই সাথে প্যান্টও ভিজে যায় তবে সেটাও পাল্টাতে হবে। আর প্যান্ট না ভিজলে সেটা আবার ব্যাবহার করা যাবে।

১২। এগুলো ধোয়ার নিয়ম কি?

সাধারন কাপড়ের মতই ধোয়া যায়। জাস্ট একটু বেশি ধোয়া লাগে যেহেতু বাচ্চার পি পটির গন্ধ বা ময়লা থাকে। এছাড়া তেমন কোন অসুবিধা নেই।

পটি লাগলে সেটা সরিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

১৩। কিভাবে শুকাতে হবে?

ওয়াশেবল ডায়পারের ম্যানুয়ালে বলা থাকে , রোদে শুকানোর জন্য। তাই চেষ্টা করা দরকার রোদেই শুকানোর।

তবে রোদ ছাড়াও ফ্যান বা প্রাকৃতিক বাতাসে শুকানো যায়। তবে রোদ লাগাতে পারলে ভালো।

১৪। ধুয়ে নিলেই কি এগুলো পাক হয়ে যাবে?

প্রায় অনেক মুসলিম মায়ের মনেই এই ব্যাপারে প্রশ্ন আসে। উত্তরটা হচ্ছে, ওয়াশেবল ডায়পার অন্য কাপড়ের মতন নিয়ম মেনে ধুয়ে নিলেই পাক হয়ে যায়। ডায়পার বা প্যাড নাপাকি ধরে রাখেনা।

১৫। ওয়াশেবল ডায়পার কি  ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যাবে? কিভাবে?

ওয়াশেবল ডায়পার ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যায়।

অন্য কাপড়ের মতই ধোয়া যায়। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, পি করা ডায়পার সরাসরি মেশিনে দেয়া গেলেও পটির ডায়পার বা প্যাড থেকে পটি সরিয়ে সেটা মেশিনে দিতে হবে।

১৬। কোথায় পাবো ওয়াশেবল ডায়পার?

আপনি যদি ইতোমধ্যেই ওয়াশেবল ডায়পার কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এখন আপনার মনে নিশ্চয় এই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে- কোথায় ভালো মানে ওয়াশেবল ডায়পার কিনতে পাওয়া যাবে?

উত্তর হচ্ছে, অনলাইন এবং অফলাইন, দুই জায়গাতেই বেশ ভালো মানের ওয়াশেবল ডায়পার পাওয়া যায়। নানান দাম ও ডিজাইনের ডায়পার আছে। একটু খুঁজে খুঁজে ভালোটা কিনে নিতে হবে।

১৭। দাম কেমন?

ওয়াশেবল ডায়পারের ডিজাইন ও মান অনুযায়ী দাম হয়। ২৫০টাকা প্রতি সেট থেকে ৭০০ টাকা প্রতি সেট, এরকম দাম মার্কেটে আছে। কোথাও একটু বেশিও আছে।

নিজ নিজ সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে হবে।

ওয়াশেবল ডায়পার নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

ওয়াশেবল ডায়পার নিয়ে কিছু ভুল ধারনা ব্যাবহারকারীদের মধ্যে প্রচলিত। আশা করি, আমার আলোচনা থেকে নিচের ভুল ধারনা থেকে আপনারা মুক্ত হবেন।

১।  একটা ওয়াশেবল ডায়পার প্যান্ট একটানা চার পাঁচ ঘণ্টা পরিয়ে রাখা যাবে।(না)

২। বার বার বদলাতে হবে না। (বদলাতে হবে)

৩। বাজারের ওয়ান টাইম ডায়পারের হুবাহু বিকল্প। (হুবাহু নয় তবে বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার হয়।)

৪। ওয়াশেবল ডায়পার পরালে ঠাণ্ডা লাগে বাচ্চার।(বদলে দিলে লাগবে না কখনোই)

ওয়াশেবল ইউজে পাওয়া কিছু অসুবিধা ও সমাধান

১। প্যান্টের সাইডে লিক করে

এরকম হতে পারে। পড়ানোর ধরণ ঠিক না হলে, ডায়পার এর মান ভালো না হলে, বা বাচ্চা বেশি নাড়াচাড়া করলে প্যান্ট সরে গিয়ে লিক করতে পারে। এক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে।

২। শুকাতে সময় লাগে

এটা আসলে স্বাভাবিক একটা সমস্যা। ওয়াশেবল ডায়পার তৈরির ম্যাটেরিয়াল এমন যে এটা একটু ভারী হয়, তাই শুকাতে একটু সময় নেয়। সেক্ষেত্রে ভালো করে ধুয়ে চিপে নিয়ে শুকাতে হবে ও এক্সট্রা সেট রাখতে হবে ব্যাবহারের জন্য।

৩। ডায়পার প্যান্ট ভিজে যায়

বাচ্চার হিসুর পরিমান বেশি হলে বা ভেতরের প্যাড খুব হালকা হলে এই সমস্যা দেখা যায়। তাই ভালো মানের ডায়পার ব্যাবহার করুন, ভালো প্যাড বা ইনসার্ট ব্যাবহার করুন, এই সমস্যা কমে যাবে।

৪। বাচ্চার উরুতে বা কোমরে দাগ হয়ে যায়

যেহেতু ওয়াশেবল ডায়পারে সেট করার জন্য ইলাসটিক দেয়া থাকে, তাই দাগ হতে পারে। তবে মাপমতো পরালে এরকম খুব একটা হয় না। খুব টাইট করে পরানো যাবেনা।

ওয়াশেবল ডায়পার ব্যবহারে কিছু উপকারি টিপস

যারা ওয়াশেবল ডায়পার ব্যাবহার করা শুরু করেছেন এবং করবেন বলে ভাবছেন, তারা নিচের টিপসগুলো খেয়াল রাখতে পারেন।

যেমন-

১। ওয়ান টাইম ডায়পারের সাথে ব্যালেন্স করে ইউজ করতে পারেন। দিনের বেলায় ওয়াশেবল ও রাতে বা দূরে জার্নিতে ওয়ান টাইম ডায়পার- এভাবে অনেকেই ব্যাবহার করেন।

২। বাচ্চার ঘুমের সময় ওয়াশেবল দিলে ডবল প্যাড দেয়া- বাচ্চারা ঘুমালে পাতলা প্যাড না দিয়ে একটু ভারী প্যাড দেবেন। চারকোল প্যাড এক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে। এতে বাচ্চা আরামে ঘুমাবে।

৩। খুব কম সময়ের জন্য বাচ্চাকে ডায়পার দেয়ার দরকার হলে, মেহমান আসলো, একটু ঘুরতে নিয়ে যেতে বা নামাজে দাঁড়ালে- তখন ওয়ান টাইম না দিয়ে ওয়াশেবল দেয়া যায়।

৪। কাঁথা বা ওড়না দিয়ে প্যাড বানিয়ে ইউজ করা যায়। আমাদের দেশে এবং অন্য দেশে প্রচুর ব্যাবহারকারী এভাবে আলাদা প্যাড বানিয়ে নেন। এটাও বেশ সুবিধাজনক।

আশা করি লিখাটি আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিবে। আপনাদের আরও কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে ভুলবেন না যেন!

সম্পাদনাঃ জান্নাতুল ফারহানা রুপা

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা