আসসালামু আলাইকুম।

সন্তানহীনতা বলতে সন্তানধারণ ক্ষমতাকে দুর্বল বা নষ্ট থাকাকে বোঝায়। একজন দম্পত্তির কাছে সন্তানহীনতার মতো কষ্টকর আর কিছু হতে পারে না। আশির দশকে আবিষ্কৃত হওয়া নোবেল বিজয়ী প্রযুক্তির বাংলাদেশে আগমন ১৯৯৯ সালে। সেবছর বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়। প্রযুক্তিগত দিক থেকে কাটিং এজ দুই একটি পদ্ধতি এখনো আমাদের দেশে প্রচলিত না হলেও বেসিক মেথডে অনেক সফলতার রেকর্ড আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে ১০০ টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতির মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী প্রায় এক মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে! বেশ ব্যয়বহুল হলেও উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কৃত্রিম পদ্ধতিতে সন্তান লাভ করার খরচ অনেক কম। মাত্র ২-৩ লক্ষ টাকায় দুশ্চিন্তিত দম্পতিরা (ঋণ করে হলেও) সহজেই এই পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে লাভবান হচ্ছে।

তাই আমি মনে করি শর’ঈ দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষিত সমাজ ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। কেননা খবরের কাগজে এনিয়ে যে লেখালেখি পড়েছি সেখানে সরাসরি বলা আছে ধর্মীয়ভাবে কোনো অগ্রহণযোগ্যতা নেই জন্য এধরণের প্রযুক্তির ব্যাবহারও দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে সরকারী নীতিমালা বা বাধ্যবাধকতা, নির্দেশনা ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এখনো সেভাবে গোছানোর জন্য কাউকে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছেনা। কেননা মুসলিমপ্রধান আমাদের দেশটিতে কিছুটা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপট মানুষের মনে সবসময় কাজ করে।

এই লেখা কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়। সচেতনতা বাড়ানো আর সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা আমাদের সবারই কর্তব্য। সেই প্রচেষ্টায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে খুব ছোট শিরনামে কিছু পদ্ধতিভিত্তিক পয়েন্ট নীচে তুলে ধরা হলো। উল্লেখ্য যে এখানে মেডিকেল বা সার্জিকাল চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিনা। শুধুমাত্র “এসিস্টেড কন্সেপশান” নিয়ে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ। (বৈবাহিক চরিত্রসীমার মধ্যেই আলোচনাটি রাখছি, মাঝে মাঝে পরপুরুষ বা পরনারীর উদ্ধৃতি আসতে পারে)

১। জরায়ুতে শুক্রাণু প্রতিস্থাপনঃ

এই উপায়ে স্বামীর শুক্রাণুকে স্ত্রীর জরায়ুতে প্রতিতস্থাপন করে প্রাকৃতিকবাভেই নিষিক্ত করার প্রচেষ্টা করা হয় যা পরবর্তীতে ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়ে জরায়ুতে প্রাকৃতিকভাবেই গর্ভের স্বাভাবিক সুত্রপাত ঘটায়।

২। (ইন ভিট্রো) পরীক্ষাগারে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণঃ

এই চিকিৎসায় স্ত্রী ও স্বামীর ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু শরীরের বাইরে গবেষণাগারে সংগৃহীত করে তাকে উর্বর করে ভ্রূণ তৈরি করে তারপর জরায়ুর মধ্যে স্থানান্তর করা হয়। আইভিএফের সফলতার হার বাংলাদেশে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। বিদেশে এই হার শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ। ভ্রূণ স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করার আগ পর্যন্ত কৃত্রিম পদ্ধতি। স্খাপন করার পর স্ত্রীর স্বাভাবিক গর্ভধারণের যেমন অনুভব করেন টেস্টটিউব বেবি নিলেও তেমনি অনুভব করেন। এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা না।

৩। জরায়ুতে সংযোজিত করার আগে ভ্রূণ নিরীক্ষা করাঃ

যাদের জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী সন্তান আছে তাদেরকে এই চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়। আইভিএফ পদ্ধতিতে একাধিক ভ্রূণ নিষিক্ত করে জরায়ুতে স্থানান্তর করার আগে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে কোন কোন ভ্রূণের জেনেটিক সমস্যা আছে যা পরবর্তীকালে দূরারোগ্য রোগের কারণ হতে পারে। সেগুলো বেছে সুস্থ ভ্রূণ স্থানান্তর করা হয় ও বাকিগুলো ফেলে দেয় হয়।

৪। সর্বাধুনিক ‘তিনজনের ঔরসজাত’ সন্তানঃ

এই পদ্ধতিতে স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করার আগে অকার্যকরী মাইটোকন্ড্রিয়াসম্পন্ন স্ত্রীর ডিম্বাণুর চিকিৎসা করা হয়। তৃতীয় অন্য নারীর ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস ফেলে দিয়ে স্ত্রীর নিউক্লিয়াসটি তার জেলিকোটের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দুই নারীর ডিমাণুর সমন্বয়ে একটি সুস্থ ডিম্বাণু তৈরী করা হয়। আর তারপর আইভিএফ পদ্ধতিতে পরীক্ষাগারে ভ্রূণ তৈরী করে স্ত্রীর জরায়ুতে তা স্থানান্তর করা হয়। গতবছর সর্বপ্রথম জর্ডানের এক দম্পতি এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে একটি কন্যা সন্তান লাভ করেছে।

★উপরের সবগুলো পদ্ধতিতেই স্বামী স্ত্রীর শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ব্যাবহার না করে স্পার্ম / এগ ব্যাংক থেকে অন্য অপরিচিত পুরুষ বা মহিলার শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ব্যাবহার করা যেতে পারে। পাশ্চাত্যের দেশে অহরহ স্পার্ম বা এগ ব্যাংক থেকেই পরিচয় গোপণ করে রাখা পুরুষ/দের শুক্রাণু বা মহিলা/দের ডিম্বাণু ব্যাবহৃত হলেও আমাদের দেশে এর প্রচলন এখনো জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।

এরপরের পর্বে ইন শা আল্লাহ একটি বাস্তব ঘটনা শোনাব যেখানে এক স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক্ব দিতে চেয়েছেন আইভিএফ চিকিৎসায় তাকে ধোকার শিকার হতে হয়েছে জন্য। আশা করি সময় নিয়ে সাথে থাকার চেষ্টা করবেন।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

-আবু ‘আব্দিল্লাহ ইবনু আনিস

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা