শিশুর গলায় কিছু আটকে দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা হলে কী করবেন?

বাচ্চারা স্বভাবতই অনুসন্ধিৎসু এবং ১ থেকে ৫ বছরের বাচ্চারা হাতের নাগালে পাওয়া সবকিছু্ই মুখে দিয়ে দেখতে চায়। বাচ্চাদের এই প্রবণতা তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার অংশ। আশার কথা হলো বাচ্চারা সবকিছু মুখে দিতে চাইলেও গলাধঃকরণ করতে পারে না। মার্বেল, পয়সা, খেলনার অংশবিশেষ, বৃদ্ধদের কৃত্রিম দাত, ঘড়ির ব্যাটারির মতো ছোট জিনিসগুলো বাচ্চাদের জন্য ঝুঁকির কারণ।

বাচ্চার গলায় কেবল অখাদ্য আটকায় এমনটা না। আপনার শিশু যদি শক্ত খাবার (সলিড) খেতে শুরু করে, তাহলে সেই খাবারও গলায় আটকে দমবন্ধ হবার মতো অবস্থা হতে পারে। এছাড়া নবজাতকের ক্ষেত্রে অনেকসময় বুকের দুধপানের সময় ভারসাম্য হারিয়ে গলায় দুধ আটকে দমবন্ধ অবস্থা হতে পারে। 

শিশুর গলায় কিছু আটকে দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা হলে কী করবেন? 1

প্রতিরোধ:

এই বিপদ থেকে বাচ্চাকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো এসব ক্ষুদ্র জিনিসগুলো বাচ্চার হাতের নাগাল থেকে দূরে রাখা। অনেক সময় এটা করা সম্ভব হবে না, বিশেষ করে যখন আপনার বাচ্চা খেলে এবং খেলনা ভাঙতে বেশি আগ্রহী। এক্ষেত্রে তার উপর ক্রমাগত নজরদারি করাই ভাল বিকল্প।

আপনার শত সতর্কতা সত্ত্বেও বাচ্চা কোন কিছু গিলে ফেলতে পারে। হতে পারে এটা আপনার বা বাসার অন্য কারও চোখের সামনে বা অগোচরে। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যনালী এধরনের বস্তু গিলে ফেলতে পারে, আর কিছু ক্ষেত্রে শিশু গলায় আটকে দমবন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। যদি শিশু অসুস্থতা ছাড়াই হঠাৎ কাশতে শুরু করে এবং তার মুখে দেয়ার অভ্যাস সম্পর্কে আপনি অবগত থাকেন, তাহলে মোটামুটি নিশ্চয়তাসহ ধরে নিন বাচ্চা এমন কিছু গিলে ফেলেছে যা তার করার কথা না।

সলিড খাচ্ছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে যা করণীয়:

  • খাবার (যেমন খিচুড়ির সবজি) খুব ছোট টুকরো করুন
  • শক্ত খাবার ভর্তা বা গ্রেট করুন
  • দরকার মতো ভাপে সেদ্ধ করে নিন।
  • বাচ্চাকে কান্না বা হাসির সময় খাওয়াবেন না
  • প্রতিবার খাবার মুখে দেয়ার আগে নিশ্চিত হোন মুখ খালি আছে কি না।

নবজাতকের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ানোর সময় মা দুধের নিপল দুই আঙ্গুলের মাঝে কাঁচি’র ভঙ্গিতে ধরে রাখবেন এবং দুধের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করবেন যতদিন না বাচ্চা নিজের ভারসাম্য বুঝতে শিখে।

প্রতিকার:

  • যদি গিলে ফেলা বস্তুটি আপনি খালি চোখে দেখেন এবং মনে করছেন বের করতে পারবেন, তাহলে হাত বা সহায়ক কোন কিছু দিয়ে তা বের করার চেষ্টা করুন। যদি মনে হয় তা বের করা কঠিন, বা বের করতে গিয়ে বাচ্চা কষ্ট পাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন।
  • যদি বাচ্চা কাশি দেয়, তবে তাকে আরো জোরে কাশি দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। অনেক সময় এটা কাজে দেয়।
  • যদি বাচ্চা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বা অধিক কষ্টের ভঙ্গি করে, তবে দেরী না করে যে কোন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিন।

নবজাতক বা শক্ত খাবারে অভ্যস্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিতে থাকুন। দমবন্ধ অবস্থা সিরিয়াস না হলে এই পদ্ধতি ভাল কাজ করে।

তবে বাচ্চার দমবন্ধ অবস্থা বেশ জোরালো বা সিরিয়াস হলে (যেমন বাচ্চা শ্বাস না নেয়া বা সাড়া না দেয়া) নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন:

  • বাচ্চাকে আপনার হাতের উপর উল্টো করে নিন, যাতে তার মাথা নিচের দিকে আপনার হাতের মুঠোয় থাকে, আর তার দেহ আপনার কনুইয়ে থাকে। চেয়ারে বসে আপনার হাতকে আপনার উরুর উপর বা কোন বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন। বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকবে।
  • এরপর বাচ্চাকে তার পিঠে মোটামুটি জোরে ৫ বার চাপড় দিন যা হাতের শক্তিকে পিঠ থেকে মাথার দিকে প্রবাহিত করবে। কতটা জোরে দিবেন এটা আপনি নিজে ঠিক করুন।
  • এতে যদি বাচ্চার শ্বাসনালি পরিষ্কার না হয় তাহলে বাচ্চা কাঁদবে না বা শব্দ করবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে হাতে উল্টো করে নিন, তার বুকের হাড় যেখানে ভি আকৃতিতে চামড়ার সাথে মিশেছে সেখানে ৫বার আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। 

এই পদ্ধতি বেশ কয়েকবার করে দেখুন বাচ্চা কাশি বা কান্না কোনটা করছে কি না। আরো কিছু ফাস্ট এইড টেকনিক দেখতে এই ভিডিওটি দেখুন।

তথ্যসূত্র:

১. ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস - ইউকে

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সারওয়াত জাবীন আনিকা
এমবিবিএস
KMC (IMCS) - এ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত

ছবি কৃতজ্ঞতা joffi - Pixabay থেকে

সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছেঃ এপ্রিল ১১, ২০২০