বাচ্চা খেতে চায় না – এটা সব মা’দের সাধারণ অভিযোগ। মূলত বাচ্চাকে খাওয়ানো নিয়ে বাবা-মা’র যুদ্ধ শুরু হয় বাচ্চাকে সলিড খাবার দেয়ার দিন থেকে। একটা বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তবে সবার আগে আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দোয়া করা উচিত যেন বাচ্চা সলিড ভালোভাবে খায়। সাথে বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস যেন ভালো হয় ইনশাল্লাহ।
এই লেখা মূলত অামার মেয়ে যাইনাবকে খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বানানো একটা ফেসবুক অ্যালবামের লিখিত রূপ, যেখানে অাপনি অামার কিছু রেসিপি ও টিপস পাবেন।
কেন এই এ্যালবামঃ
আমার কাছে অনেকেই জানতে চায় আমি যাইনাবকে কি কি খাবার দেই। এমনকি আমি হোমমেইড কি কি খাবার দেই তার রেসিপিও অনেকে জানতে চায়। এছাড়াও আরও একটা কারণ হলো আমি নিজেও যাইনাবের সলিড শুরু করার সময় অনেক কনফিউজড ছিলাম কিভাবে কি দিবো আর কি দিবোনা?? তাই আমার এই এ্যালবাম যদি কারও কাজে লাগে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্।
তথ্যের উৎসঃ
আলহামদুলিল্লাহ্ এইখানের ব্রিসবেনের Lady Cilanto Children’s Hospital এর ডাক্তার আমাকে অনেক সুন্দর করে সলিড নিয়ে আইডিয়া দিয়েছিলেন। সাথে অথেনটিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর আল্লাহর রহমতে আমার টুকটাক Motherly intuition আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছে আমার এই সলিড জার্নিতে আলহামদুলিল্লাহ্।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
১) আমাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছে কেন আমি যাইনাবের খাবারে লবন বা চিনি দেইনা। আশা করি তাঁরা এই লেখা থেকে আইডিয়া পাবেন আর ছবিতেও কিছু কথা আছে যা পড়লেও বুঝতে পারবে। লবন বাচ্চার কিডনীকে অাক্রান্ত করে তাই আমি এটা দেওয়ার একদম বিরোধী। কারণ আমার মায়ের জীবন থেকে আমি দেখেছি একজন কিডনী রোগীর কত কষ্ট!
২) আমাদের জন্য রান্না করা খাবার আমি এখনই যাইনাবকে দেইনা (অনেকেই পছন্দ করেন নিজেদের জন্য রান্না খাবারই বাচ্চাকে প্রথম থেকে অভ্যস্ত করাতে; এইটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার) দুইটা কারণে ১) লবন থাকে বলে আর ২) স্পাইসি বা মসলাযুক্ত বলে।
৩) বাচ্চাকে যদি ব্লেন্ড না করে স্ম্যাস করে খাওয়ানো যায় তাহলে খুবই ভালো। আমি ব্লেন্ড করি কারণ যাইনাব স্ম্যাস করা খাবার খেতে পারেনা এখনও চোকিং করে, আলহামদুলিল্লাহ্।
বাচ্চার সলিড বা শক্ত খাবার শুরু করাঃ
সলিড শুরু নিয়ে আমরা নতুন মায়েরা সবাই কম বেশী চিন্তিত থাকি। কখন দিবো, কি দিয়ে শুরু করবো এমন হাজারো প্রশ্ন। আমারও ছিলো। আমি তাই অস্ট্রেলিয়ান, বাংলাদেশী কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছিলাম সলিড শুরু করা নিয়ে। সাথে নিজেও বেবী সেন্টার সহ অন্য ভালো সাইট থেকে পড়াশুনা করার চেষ্টা করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু কথা।
১) সলিড শুরু করার সময়ঃ ৪-৬ মাসের মধ্যে ( যদি বাচ্চার ওজন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে আর বুকের দুধে প্রয়োজন মিটে তাহলে ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো)। যারা ৪ মাস পূর্ণ হলে শুরু করতে চান তাদের কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবেঃ
- আগে দেখতে হবে বাচ্চার মধ্যে সলিড শুরু কোন লক্ষণ আছে কিনা। যেমনঃ বাচ্চা দুধ খেয়েও পেট ভরছেনা; বাচ্চা হেলান দিয়ে বসতে পারে; বাচ্চা আপনার খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকে আর খেতে চায়।
- ৬ মাসের আগে বাচ্চাকে কার্বোহাইড্রেট দেওয়া যাবেনা কারণ বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র (Digestive System) কার্বোহাইড্রেট হজমের জন্য প্রস্তুত থাকেনা।
- বাচ্চাকে প্রথম থেকেই পুরো খাবার সলিড দিয়ে না দেওয়া ভালো। বাচ্চার প্রধান খাবার থাকবে দুধ সাথে সলিড, শুধু মাত্র অভ্যস্ত করানোর জন্য। ডাক্তার আমাকে বলেছিলো আগে অথবা পরে দুধ খাওয়াতে সাথে অল্প শক্ত খাবার।
- আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম শুধু একটা আইস কিউব পরিমান খাবার দিয়ে এরপর পর্যায়ক্রমে পরিমাণ বৃদ্ধি করেছি।
২) খাবারের ধরনঃ প্রথমে ফলের অথবা সব্জির পিউরি অথবা বয়সোপযোগী সিরিয়াল দিয়ে শুরু করা যায়। এরপর আস্তে আস্তে খিচুড়ি শুরু করা যায়।
৩) অায়রনের গুরুত্বঃ ৬ মাস হয়ে গেলে বাচ্চার আয়রন যুক্ত খাবার খুব দরকার। তাই চাইলে আয়রনযুক্ত সিরিয়াল দেওয়া যায় আর নয়তো আয়রন সমৃদ্ধ ফল বা সবজি যেমন আপেল, পিয়ারস, মটরশুটি, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া এমন অনেক কিছুই দেওয়া যায় পিউরি করে।
৪) Trial & Error: যেকোন নতুন খাবার টানা ২/৩ দিন দিয়ে দেখতে হবে বাচ্চার এলার্জির সমস্যা হয় কিনা। যদি না হয় তাহলে এরপর নতুন কিছু যোগ করা ভালো। একসাথে কয়েক রকম নতুন জিনিস না দেওয়া ভালো।
৫) খাবার আটকে যাওয়া (Choking): সলিড শুরু করার সময় সবচেয়ে বড় যেই ভয়টা কাজ করেছে আমার তা হলো Choking. পরে ইন্টারনেট থেকে ভিডিও দেখেছিলাম Choking এর সময় বাচ্চাকে কিভাবে সাহায্য করতে হয় যা আমার অনেক উপকার করেছিলো। তাই এই ব্যাপারটা সবার জেনে নেওয়া উচিত।
৬) ভর্তা বনাম ব্লেন্ড করা খাবারঃ বাচ্চাকে ভর্তা (Smash) করে খাওয়াবেন নাকি Blend করে তা আপনার বাচ্চার উপর নির্ভর করে। ব্লেন্ড করে খাওয়াতে অনেকেই নিষেধ করে কিন্তু অনেক বাচ্চা আছে যারা ব্লেন্ড করা ছাড়া ছাড়া খেতে পারেনা, কারণ খাবার গলায় অাটকে (Choking) যায়। সেই ক্ষেত্রে প্রথমে Blend করে খাওয়ানো শুরু করে পর্যায়ক্রমে খাবারের ঘনত্ব বাড়িয়ে একটু আস্ত নরম খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করানো যায়।
৭) খাবার সংরক্ষণঃ পিউরি সহ অন্যান্য বেবী ফুড চাইলে কয়েকদিনের জন্য রান্না করে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। তবে ভাত, খিচুড়ি, ওটস এইগুলো প্রতিদিন রান্না করাই ভালো।
৮) খাবারের সাথে পানিঃ সলিড শুরু করলে বাচ্চাকে অল্প অল্প করে পানিও খাওয়ানো উচিত। পানি চামচ, ফিডার অথবা সিপ্পি কাপে দেওয়া যায়।
অার কথা না বাড়িয়ে অ্যালবাম শুরু করা যাক।
খাবার সংরক্ষণ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত:
বাকী পর্বগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন