সবেমাত্র অ্যাবিগেইল শ্রিয়ারের লেখা “Bad therapy: why the kids aren’t growing up” বইটি পড়ে শেষ করেছি।

এটি আমার পড়া সবচেয়ে eye-opener বইগুলির মধ্যে একটি। এটি যেকোন অভিভাবক, যে কোন শিক্ষকের জন্য পড়া আবশ্যক এবং স্কুল পরিচালনা করেন এমন মানুষদেরও পড়া আবশ্যক।

বইটি লেখক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন কেন বাচ্চাদের এত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, বিশেষকরে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে যখন বর্তমানে সবাই সচেতন এবং অনেকেই এর উন্নতির জন্য অনেক কাজ করছেন।

বাচ্চাদের মাঝে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা ইত্যাদি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি, যদিও তাদের জীবনমান আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল। বিষয়গুলো মেলানো যাচ্ছে না, তাই না?

বইয়ের কথায় আসা যাক! বইটি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকওয়ে:

বাচ্চা কী ভাবছে বা কেমন বোধ করছে এটা নিয়ে তটস্থ থাকার কারণে ভালো চেয়ে মন্দ বেশি হচ্ছে

কেউ যদি নিজের আবেগ নিয়ে সবসময় চিন্তা করে এবং প্রতিটা মুহূর্তেই খেয়াল করার চেষ্টা করে এখন কেমন লাগছে এটা তার মানসিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে নেতিবাচকভাবে। আপনার প্রতিমুহূর্তের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু যদি হয় আপনার ভালোলাগা বা মন্দলাগা, তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনি সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অনুভব করবেন এবং বিষন্ন থাকবেন।

বর্তমান আমরা সব সময় বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করি তার কেমন লাগছে, সে খুশি কিনা, তার মন ভালো কিনা ইত্যাদি। এবং বারবার এ ধরনের প্রশ্ন করার কারণে বাচ্চারা নিজেদেরকে দুর্বল ধরে নেয়, যদিও এ ধরনের নেতিবাচক আবেগকে তারা সহজেই ম্যানেজ করতে পারে।

বাচ্চাদের সব কাজ করে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা এমন জেনারেশন তৈরি করছি যারা কিছুই করতে পারে না

আমরা যারা জেনারেশন এক্স, আমাদেরকে সব সময় বলা হয়েছে ” হজম করে ফেলো”, ” সমস্যা নেই তুমি তো বেঁচে আছো”, অথবা ” ব্যথার জায়গায় একটু থুতু লাগিয়ে দাও”। একটু বড় হয়ে আমরা সবাই ধরে নিয়েছি এগুলো আসলে ব্যাড-পারানটিং, কারণ আমাদের ইমোশনকে পাত্তা দেয়া হয় নাই। এবং আমরা একপ্রকার শপথ নিয়েছি বাচ্চাদের সাথে এরকম করবো না।

ঠিক এই কারণেই আমাদের বাচ্চারা যেকোনো ছোট বিষয়কে অতি নাটকীয়ভাবে বিশাল করে তোলে, এবং তারা ধরে নিয়েছে পুরো দুনিয়া তাদের আবেগ অনুভূতি কেন্দ্র করে ঘুরবে।

সুস্থ মানসিক অবস্থা বা আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে শুধু চিন্তা বা থেরাপি যথেষ্ট না, কাজ করতে হবে

দুশ্চিন্তা থেকে বের হওয়ার জন্য আপনি শুধু এটা নিয়ে ভাবলেই হবে না। মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী অনুভব করার জন্য আপনি নিজের মনের অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করতেই থাকবেন সেটা যথেষ্ট না।

ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ করার মাধ্যমেই আপনি দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন, কারণ আপনার মনে হবে আপনি তো পারেন, আপনি একজন সক্ষম মানুষ।

বাচ্চাদেরকে আমরা যে ননস্টপ অ্যাটেনশন থেরাপি দিচ্ছি এর কারণে ক্ষুদ্র তুই ক্ষুদ্র বিষয় তাদের ক্ষুদ্রতা থেকে বের হয়ে বৃহত্তর বিষয়ে পরিণত হচ্ছে, সিরিয়াস রূপ ধারণ করছে। অবশ্যই আমি জেনুইন, মনোযোগ দাবি করে এমন সমস্যাকে অবহেলা করার কথা বলছি না।

অসুখী হবার সেরা উপায় সুখী হওয়ার চেষ্টা করা

আমরা এবং আমাদের সমাজ আমাদের বাচ্চাদেরকে ক্রমাগত বুঝাচ্ছি যে তাদের সুখী থাকা উচিত এবং আমরা তাদেরকে এটা নিয়ে প্রশ্নও করি।

সমস্যা হল সুখের অনুভূতি এমন কিছু না যেটা ২৪ ঘন্টা৭ দিন আপনি ক্রমাগত অনুভব করতে থাকবেন। বরং এগুলো এমন অনুভূতি যেগুলো আসে এবং চলে যায়।

সন্তুষ্টিবোধ, মানসিক স্থিরতা এগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এবং সবচেয়ে সুখী এমন বাচ্চারা সেসব ফ্যামিলি থেকে আসে যেখানে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা বিদ্যমান এবং পরিবারে শক্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলে

এই পয়েন্টটা আমার সাথে একেবারেই মিলে গেছে

আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ বোধ করি এজন্য যে আমার দুইটা বাচ্চা হাই স্কুলে যায়, তারা পড়াশোনায় বেশ ভালো করছে, সবার প্রতি তাদের সম্মানবোধ আছে, আচার-আচরণ ভালো এবং আমরা কদাচিৎ তাদের প্যারেনটিং করি।

তারা যখন ছোট ছিল তখন আমরা বেশ শক্ত নিয়মের মধ্যে হাতে তাদেরকে বড় করেছি। রাতে ঘুমানোর সময়, পারিবারিক বিভিন্ন নিয়ম কানুন, কোন কাজটা আমরা কিভাবে করব ইত্যাদি নানা বিষয়ে আমরা খুব কড়া ছিলাম। আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা ভাবতো আমরা বাড়াবাড়ি করছি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা উচু গুনগতমান সেট করেছিলাম এবং বর্তমানে এর ফলাফল দেখতে পাচ্ছি। আমি খুব আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করি শক্ত নিয়মকানুন মানেই সুখী বাচ্চা। একই সাথে আবার বুঝতে পারি এরকমই হওয়ার কথা, কারণ বাচ্চারা জানেনা তাদের কি করতে হবে এবং বাউন্ডারি সেট করে দিলেই তারা ভালো থাকে।

স্কুলকে আমি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ক্রমাগত তাদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা ভালো চেয়ে খারাপ করে

সবসময় আমরা বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করি বাচ্চাদেরকে

  • তুমি কি নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছ?
  • তুমি কি সুইসাইড করার কথা ভেবেছো?
  • তুমি কি কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো?

ইত্যাদি ইত্যাদি আরও নানা question। এসব প্রশ্ন নিজেদেরকে নিয়ে তাদের ধারণা তৈরি করে দেয়, এক ধরনের ভঙ্গুর ব্যক্তিত্ব নিয়ে এরা বড় হয় যারা বাস্তব দুনিয়াতে ঠিকমতো খাপ খাওয়াতে পারে না।

এইসব কাজের মাধ্যমে আমরা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছি যেটা আমাদের ইতিহাসে বিরল।

এছাড়াও আরো অনেকগুলো দারুন বিষয় আছে কিন্তু আমি আজকে এখানে থামছি।

একটা দারুন বই, সুযোগ হলে এখনই বইটা কিনে পড়ে ফেলুন। কোন রকম আর্থিক বিনিময়ের জন্য বাড়িয়ে বলছি এমন না, বরং বইটা আমি দারুণভাবে এনজয় করেছি এবং নিঃসন্দেহে প্যারেন্ট হিসেবে এটা আমাকে প্রভাবিত করেছে।

জেসন হেমসের টুইট থেকে অনুদিত। সোর্স

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা