নিঃসন্দেহে সন্তানের মৃত্যু বাবা-মায়ের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা। অথচ এই কঠিন সময়ে স্বান্তনার হাত না এগিয়ে দিয়ে বরং সমাজ আমাদের অনেক মাকেই অপয়া, দুর্ভাগ্যগ্রস্ত এবং বংশনাশকারিনী ইত্যাদি অন্যান্য অনেক গালি ও মানসিক নিপীড়নের শিকার করে।
★ অন্যদিকে যেই বাবা-মা এই কঠিন পরীক্ষা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করবেন, তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল প্রতিদান রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম বলেছেন, যখন কোন বান্দার সন্তানের মৃত্যু হয়, তখন মহান আল্লাহ তাঁর ফিরিশতাগণকে বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবয করেছ? ফিরিশতাগণ বলেন, হ্যাঁ। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা তার চোখের মণিকে কেড়ে নিয়েছ? ফিরিশতাগণ বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেন, আপনার প্রশংসা করলো এবং ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লো। একথা শুনে মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর
এবং তার নাম রাখ ‘বাইতুল হামদ’(প্রশংসার ঘর)। [সিলসিলাহ আসসাহিহাহ ১৪০৮, রিয়াযুসসালিহিন ১৩৯৫]
★ আবার অনেক দম্পতির সন্তান গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। সুবহানাল্লাহ, পৃথিবীর বুকে না এসেও সেই ভ্রুণ তার বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে জান্নাতের ফয়সালা করিয়ে নিবে।
মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম বলেন, “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! গর্ভপাত হওয়া সন্তানের মাতা তাতে সওয়াব আশা করলে (ধৈর্যের মাধ্যমে) ঐ সন্তান তার নাভিরজ্জু দ্বারা তাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।” [ইবনে মাজাহ ১৬৭৭]
★ আমাদের ভাই আর বোন যাদের কোল খালি হয়েছে তাদের জন্য দুনিয়াতেই বিশেষ এক প্রশান্তির একটি সুখবর আছে। সেসব চোখের মণিরা আমাদেরই পিতা ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের সাথে এখন খেলছে, আসমানে!
সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের স্বপ্নের বর্ণনায় বলেছেন, “…. …আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে উপনীত হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চতুপার্শে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত বেশি আর কখনো আমি দেখি নি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? আমাকে বলা হলো – ইনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) আর তার আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিৎরাতের (স্বভাবধর্ম) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে।” [বুখারী ৪২৯]
সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি।
তিনি যেন সকল সন্তানহারা বাবা-মা’দের ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে এই অনন্ত পুরষ্কারের মালিক হওয়ার তাওফীক প্রদান করেন।