জন্ম দিয়েই জনক-জননী! পিতা-মাতা তারা কখন!

পৃথিবীর সব বাবা-ই বটবৃক্ষ হয় না!
পৃথিবীর সব মা-ই ইনসাফকারী হয় না!

পৃথিবীর সব বাবা-ই সন্তানের জন্য আশীর্বাদ হয় না!
পৃথিবীর সব মায়ের আঁচলেই সুশীতল আশ্রয় মিলে না!

কিছু বাবা কেবলই জনক হয়!
কিন্তু কখনও অভিভাবক হয় না!

কিছু মা কেবলই জন্মদাত্রী হয়!
কিন্তু হয়ে উঠে না সন্তানের শান্তির কারণ!

কিছু বাবা, কিছু মা কেবলই জন্ম দেয়!
কিছু বাবা, কিছু মা জানেই না, বুঝেই না সন্তান শব্দের মানে!

সেইসব বাবার কাছে, সেইসব মায়ের কাছে
সন্তান কেবলই এক অলিখিত প্রয়োজন!

আয়োজন করে প্রয়োজন মিলানোই যাদের লক্ষ্য
তারা আর যাই হোক বাবা অথবা মা নয়!

এক সন্তানকে শুন্য করে আরেক সন্তানকে যারা পূর্ণ করতে চায় তারা কিভাবে একজন বাবা অথবা মা হয়ে উঠতে পারে। যাদের কাছে সন্তান মানে আমানত নয় তাদেরকে কোন সংজ্ঞায় পিতা-মাতা হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়! যারা নিজের প্রয়োজনে, নিজেদের প্রয়োজনে সন্তানের উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালায় তারা কিভাবে বাবা-মা হয়!

পৃথিবীর অনেক বাবা-মা আছে যাদের কাছে সন্তান কেবলই প্রয়োজন! যখন টাকা প্রয়োজন, তখন সন্তান প্রয়োজন। আয়োজন করে প্রয়োজন মিটাতে না পারলেই সন্তান হয়ে উঠে বিভীষিকার নাম!
অনেক বাবা-মাই আছে যারা এক সন্তানের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাকি সব সন্তানদের মধ্যে সমতা বিধান করতে চায়। যেন সন্তান মানেই টাকা উৎপাদনের হাতিয়ার! যেন সন্তানের কোন ব্যক্তিগত জীবন থাকতে নেই! থাকতে নেই কোন চাওয়া, পাওয়া!
সেইসব বাবা-মায়েরা প্রতিনিয়ত সন্তানকে বুঝায় বাবা-মা হিসেবে তারা সন্তানের জন্য ঠিক কি কি করেছে! ঠিক কতটা কষ্টে সন্তান বড় করেছে, কত টাকা খরচ করেছে, কত কি ত্যাগ করেছে তা প্রতিনিয়ত বুঝাতেই থাকে!
আর বুঝাতে থাকে সন্তান হিসেবে সে যা করছে তা একেবারেই তুচ্ছ। অথচ এই বাবা-মায়েরা হয়তো কোনদিন জানতেই চায়নি সন্তানের কোন প্রয়োজনের কথা। সন্তানের কষ্ট কোনদিন তাদের কষ্ট দেয় না। সন্তানের অভাব কোনদিন তাদের চোখে পড়ে না। তারাও কিন্তু বাবা-মা!
আর তাদেরই কথার আঘাত, কাজের স্বভাব যে ফেরেশতা তুল্য তার প্রমাণ রাখতেও তারা দ্বিধা করে না।

আমরা বৃদ্ধাশ্রমের গল্প শুনে আঁতকে উঠি।
এতিম বাচ্চার কান্নায় আমাদের ভেতর হু হু করে উঠে। কিন্তু সেইসব সন্তান যাদের জীবনে অভিভাবক থেকেও থাকে না অভিভাবকত্বের গল্প।
সেইসব সন্তানের ভেতরকার যন্ত্রণার কথা আমরা কখনও টের পাই না। অথচ সেইসব সন্তানেরা বয়ে বেড়ায় বরফ শীতল যন্ত্রণা কিংবা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভা!

আপনি যদি মনে করেন সন্তানের প্রয়োজন পূরণ করতে পারবেন না….
সন্তানের জন্য উপযুক্ত অভিভাবক হয়ে উঠতে পারবেন না….
তার আর্থিক, মানসিক কোন প্রয়োজন পূরণ করতে পারবেন না….
সন্তানকে শারীরিক, মানসিক যন্ত্রণা দেয়া ব্যক্তিগত অধিকার হিসেবে মনে করবেন….
সন্তান শব্দের আমানতদারিতা, ইনসাফ পূরণ করতে পারবেন না….
তবে ভাববেন, একবার নয়, অসংখ্যবার ভাববেন….
আপনি কি সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা!
সন্তানকে সন্তানের স্বীকৃতি দেয়া, তার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করা পিতা-মাতার দায়িত্ব! আর দায়িত্ব নেয়ার আগে দায়িত্ব পালন নিয়ে ভাবুন। সন্তান জন্ম দিয়ে তাকে আগাছার মতো লাগামছাড়া করে ছেড়ে দেয়া পিতা-মাতার কাজ নয়!

আমাদের সমাজে এইরকম অবিবেচক, দায়িত্বজ্ঞানহীন বাবা-মায়ের সংখ্যা একেবারেই অল্প নয়।

সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছেঃ ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫