শিশুর আবেগ ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া

লিখেছেন Samiha Nabila

শিশুরা কিছু না বুঝেই মুখস্থ করে যাবে- এমন ধারণাটি ব্যাপক ও বিশদ আলোচনার দাবী রাখে। কেননা শিশুরা কথা শেখার পর আনুমানিক ৩ বছর থেকেই পরিবেশের অনুভূতিগুলো বিশ্লেষণ করতে শুরু করে। ৮ বছরের আগ পর্যন্ত তারা কোন ব্যাখ্যা ও যুক্তির বুঝ ছাড়াই বিশ্লেষণ করে বসে ঠিকই, তবে তারা শব্দ ও কথাগুলোর সাথে পরিচিত হতে শুরু করে।

আর, জীবনের বিকাশ যখন তাদেরকে যুক্তি-ব্যাখ্যার বুঝ দিতে শুরু করে, তখন এই শব্দগুলোই তাদের হাতিয়ার হয়।

অনেক সময় ৪-৫ বছরের শিশুদের সাথে কথা বললে তাদের থেকে পরিবার সম্পর্কে যেমন ধারণা পাওয়া যায় তা কিছুটা এমন হয়, "এরা আমার বাবা-মা না। এরা আমাকে আদর করেনা", অথবা, " আমার নতুন মা লাগবে, এই মা আমাকে আদর করেনা"।

এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, শাসনকে তারা সম্পর্কহীনতার দিকে টেনে নিচ্ছে। বাবা-মায়ের সবসময়ের আদরের মাঝে থেকে শাসনটা তারা মেনে নিতে পারছেনা। কিছু কিছু বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই মেটামুটি আদর আর শাসনের ভারসাম্যের মাঝে থাকে তাদের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। কিন্তু যারা শাসনের সাথে পরিচিত থাকেনা তাদের জন্য ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

আরেকটা লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তারা শাসনটাকে কোন না কোনভাবে ব্যাখ্যা করছেই। অর্থাৎ, ব্যাখ্যা করার প্রবণতা তাদের মাঝে দেখা দেয়। এটি তাদের জৈবিক একটি চাহিদা যে তাদের কাছে অনুভূতির স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে।

এজন্যই, ৪-৭ বছর অবধি তাদের মাঝে যেসব আবেগ দেখা দিবে, আচরণের যেসব ত্রুটি দেখা দিবে, সেগুলোও ব্যাখ্যা করে তাদের কাছে অনুভূতিটি পরিষ্কার করে তুলতে হবে। আর আচরণ ব্যাখ্যা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন তার বাহ্যিক আচরণটাকেই ব্যাখ্যা না করা হয় বরং তার অভ্যন্তরীণ চিন্তাটা বের করে যেন তার সামনে তুলে ধরা হয়। এই ব্যাখ্যাগুলো অনুভূতির বুঝ আসার পর থেকে তাদের সম্বল হয়ে উঠবে।

যেমন, তাদের মাঝে হিংসা বা ক্রোধের আচরণ দেখা গেলে অভ্যন্তরীণ চিন্তাটা বের করে তাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু তারপরও হয়তো দেখা যাবে তারা হিংসাত্মক বা ক্রোধাত্নক আচরণ করেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন নয় যে তারা ইচ্ছা করে এমনটা করছে, বরং ব্যাপারটা উপলব্ধি করার মতো যোগ্য তারা এখনো হয়নি বলে করছে।

এখানে, প্রচলিত একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরেকটু স্পষ্ট হবে। এই যেমন- প্রেগন্যান্সির ছবি দেখলে বাচ্চারা মনে করতে পারে তাদেরকে খেয়ে ফেলা হয়েছে। তারা জিজ্ঞেস করে, কেন খেয়েছো আমাকে? জবাবে তাদেরকে যতই বুঝানো হোক তাদের খাওয়া হয়নি, তারা বুঝবেনা। কারণ, তারা এটাই জানে, খাবার খেলেই পেটে কিছু যায়। যদি পেটে কিছু থাকতে হয় তাহলে তাদেরকে খাবার খেতে হবে। এমন সময়ে তাদের অভ্যন্তরীণ ভাবনা অর্থাৎ, তাদের পয়েন্ট অব ভিউকে ব্যাখ্যা করে জবাব দিতে হবে। তাদের পয়েন্ট অব ভিউটা হলো, কিছু না খেলে পেটে কিছু যাওয়া অসম্ভব। এই পয়েন্টটাকে তুলে তাদেরকে জবাব দেয়া যায় এভাবে- তুমি মনে করছো শুধু খেলেই পেটে কিছু যেতে পারে অন্যথায় না। কিন্তু যখন এটা শিশুদের প্রশ্ন, তখন পেটেই শিশুরা বেড়ে ওঠে। তাদেরকে আলাদা করে গিলতে হয়না, চিবাতে হয়না।

এখানে তাদের চিন্তাটাকে কীভাবে বের করে আনা যায় সেটার একটা উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। তবে, এমন পরিস্থিতিতে নিজে কথা বলার চেয়ে শিশুটিকে কথা বলতে দেয়ার সুযোগটা বেশি দিতে হবে। নিজে স্থির থাকতে হবে।

আবার, এমন হতে পারে ভিন্ন কোন বিষয়ে তাদের আগের আচরণটিই ফিরে এসেছে। এমন সময়ে পরিস্থিতি বুঝে আবারো তাদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে। নিজেকে সব পরিস্থিতিতে ধরে রাখার বুঝটা ৮ বছরের পর থেকেই তাদের মাঝে আসা উচিৎ। তখন তারা ঠিকই ধরতে পারে কোন আচরণটি কেন ঘটছে এবং কিভাবে নিজেকে প্রকাশ/নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এজন্য তারা আবেগের সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা রাখতে চায়। যদি তাদের মাঝে কোন আবেগের ভুল ব্যাখ্যা চলে যায়, তখন তারা ভুলভাবেই ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করবে। মানুষের আচরণের ভুল অর্থ বুঝবে, নিজেরা অপ্রত্যাশিত আচরণ করতে থাকবে। কিন্তু যদি সঠিক ব্যাখ্যা তাদের মাঝে থাকে, তাহলে সেভাবেই আচরণগুলো বিশ্লেষণ করবে।

সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছেঃ মার্চ ১৭, ২০২৩