বাচ্চা জন্মের পর বাচ্চা দেখতে আসা বাচ্চার আত্মীয়রা সাধারণত যেভাবে বাচ্চা দেখে….
বাচ্চার হাত দেখি, বাচ্চার আঙুল দেখি, বাচ্চার কান দেখি?
হুম, বাচ্চার হাত, আঙুল, কান কালো হলে বড় হয়ে বাচ্চা কালো হয়।
অতি আগ্রহী কেউ কেউ আবার বাচ্চার গোপনাঙ্গও দেখেন।
তো কেন দেখেন, কেন করেন এমন কাজ?
ওই যে অত্র এলাকায় প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।কার বাচ্চা কেমন হয়েছে সেজন্য।
তারা কিন্তু প্রতিবেদন জমা দিয়েই ক্ষান্ত হোন না। বরং খুব গভীর জ্ঞানও দান করে যান।
যেমন যাওয়ার সময় বলে যান, মেয়ে তো কালো। কিছু টাকা পয়সা জমাও। কালো মেয়ে কিভাবে বিয়ে দিবে?
আর সাথে যোগ হয় আরও কিছু কথা।
মা কালো, বাচ্চা তো কালো হবেই। অথবা বাচ্চা অমুকের রঙ পাইছে। বাচ্চা লম্বা কি খাটো হবে সেটাও যোগ হয় সেই তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে বটে। কিন্তু এই যে জন্মের শুরু থেকেই বাচ্চার রঙ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা সেটা কিন্তু শেষ হয়নি।
এটা যে শুধুমাত্র পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়রা করে এমন নয়।
এমন অনেক বাবা আছে যারা সন্তানের গায়ের রঙ কেন কালো হল সেই নিয়ে মায়ের উপর মানসিক অত্যাচার চালায়। বাচ্চকে কোলে নেয় না। আদর করে না। এমনকি অনেক মা ও আছে যারা সন্তানের গায়ের কালো রঙ মানতে পারে না।
পরিবারের ফর্সা সদস্য পরিবারে যতটা মূল্যায়ন পায়, কালো সদস্য যেন ঠিক ততটাই অপদস্ত হয়।
এই ঘটনা গুলো গ্রাম কিংবা শহর, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সব সমাজেই খুঁজে পাবেন।
ভাবা যায় কতটা ভয়ংকর!
বাচ্চাটা বড় হয় এক ভয়ংকর মানসিক ট্রমা নিয়ে!
সে জানে, সে বুঝে সে অবাঞ্চিত। কারণ সে কালো। তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কালো হওয়া!
ছোটবেলা থেকে তাকে শুনতে হয় তুমি কালো! তোমার জন্য তাই নেই কোন আলো!
তাকে বলা হয় জীবনে অনেক বড় কিছু হতে হবে! কারণ তুমি কালো!
আর এটা ঘটে সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রেই!
ছোটবেলা থেকেই তাকে মানতে হয় একদিন পাত্রপক্ষ এসে তাকে রিজেক্ট করে যাবে! তার বিয়ের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে হবে বর!
কারণ সে কালো!
কালোর কোল আলো করে যদিবা একদিন সন্তান নামের আলো আসে সেখানেও কিন্তু ছাড় নেই।
অথচ বাচ্চাটার কালো হওয়ার পিছনে তার নিজস্ব কোন হাত নেই। তার রঙ চাইলেই সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অথচ জনমভর এক না করা অপরাধের শাস্তি বয়ে বেড়াতে হয় তাকে!
বাচ্চার গায়ের রঙ নিয়ন্ত্রণ করে মেলানিন নামক এক হরমোন। যে হরমোন সৃষ্টি করেছেন উপরওয়ালা। অথচ এই দায় সমাজ দেয় বাচ্চাকে, বাচ্চার মাকে, বাচ্চার বাবাকে আর তার পরিবারকে।
এই সমাজ একটা জীবন্ত মানুষকে ভিতর থেকে মেরে ফেলে কালো হওয়ার অপরাধে।
যারা এই কাজ গুলো করে, যারা কালো আর সাদার সমালোচনা করে তাদের অনেকেই দেখবেন তথাকথিত ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত। অথচ তারা জানে না তারা যে কাজটা করছে সেটা কতটা গুরুতর অন্যায়।
রাসূল (সাঃ) এর এক সাহাবী ছিলেন। নাম তার জুলাইবিব। জুলাইবিব দেখতে এতটাই অসুন্দর ছিলেন যে কেউ তার সাথে মিশতো না। অথচ এই জুলাইবিব ছিলেন রাসূল (সাঃ) এর অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী। জুলাইবিব রাসূলের এতটাই প্রিয় ছিলেন যে জুলাবিব যখন শহীদ হোন রাসূল(সাঃ) তখন আমার জুলাইবিব, আমার জুলাইবিব বলে কান্না করছিলেন।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা আত্-তীনের ৪নং আয়াতে বলেছেন, "আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।”
যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সুন্দরতম আকৃতিতে। যেখানে রাসূল (সাঃ) সাদা-কালোর তফাৎ করেননি সেখান সমাজের কতিপয় মানুষ কেন এমন করে।
কারণ তারা কোন সত্যিকারের মানুষের পর্যায়ে পড়ে না।
আর পিতা-মাতা হিসেবে আপনার চোখে সে কালো, যার চোখে আপনার সন্তান কালো। বাচ্চা জন্মের পর থেকেই যারা এই হেন কাজ গুলো করে তাদেরকে অভিভাবক হিসেবে আপনি নিরব সমর্থন দিবেন না। বরং আপনি প্রতিবাদ করুন।
কেননা অন্যায় মেনে নেয়াও আরেকটা অন্যায়।
অভিভাবক হিসেবে এটা বুঝা উচিত এই কথা গুলোর প্রতিবাদ না করলে আমার প্রিয় সন্তান সারা জীবন অন্যের কটু বাক্য বয়ে বেড়াবে।
মানুষ সুন্দর তার সততায়, তার বিশ্বাসে তার কাজে। মানুষকে তার গায়ের রঙ কিংবা আকৃতি দিয়ে বিচার করা জঘন্যতম অন্যায় কাজ। সন্তান কালো কিংবা ফর্সা। পিতা মাতার কাছে সে বরাবরই চিরসুন্দর।