ছেলেকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়ে বাসায় আনার দুইদিন পরেই ছিল পিরিয়ড ডেট। যেদিন ডেট,ওইদিন ভিসা করার জন্য সারাদিন বাইরে থাকা লাগবে। তাই,ওইভাবেই রেডি হয়ে বের হলাম।কিন্তু,পিরিয়ড হলো না। মনে করলাম,হয়ত অনেক বেশি স্ট্রেস যাচ্ছে,এজন্য। কয়েদিন চলে গেল। তারপরে শিউর হওয়ার জন্য টেস্ট করলাম।অবাক হয়ে দেখলাম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুইটা গাড় দাগ। আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ হয়ত এরমধ্যে উত্তম কিছু রাখছেন।

ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল, ডাক্তার দেখানো চলতে থাকল। আমার অন্য দুইবারও কোন সিম্পটম ছিলনা। এবারও তাই। শুধু ঝাল খাইতে ভালো লাগতো। এতটুকুই। আমার হেল্পিং হ্যান্ড খুব মজা করে ঝাল ভর্তা বানাতো। যদিও জানত না যে আমি প্রেগন্যান্ট। কাউকে জানাইও নাই যদিও।

এরমধ্যে তিনবার ব্লিডিং হলো। আমার রেগুলার ডাক্তার তখন দেশের বাইরে ছিলেন। আর আমার আসলে রেস্ট নেওয়ার অপশন ছিল না। দুইটা বাচ্চাই পাল্লা দিয়ে অসুস্থ ছিল। সাথে আমার ঠান্ডা-কাশি লেগেই ছিল।

এরমধ্যে একবার ডেংগুও হলো বড় বাচ্চার। সাথে আমার নিজেরও অনেক জ্বর। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সময়গুলো পার করে নিছেন।

খুব স্ট্রেস হলেই ব্লিডিং হত। এরপরে হঠাৎ করেই ১২ সপ্তাহের দিকে প্রস্রাবের প্রবলেম শুরু হলো। প্রস্রাবের জন্য বেশি প্রেশার দেওয়াতে আবার ব্লিডিং। তখন একজন ইউরোলোজিস্ট দেখালাম। টেস্ট করার পর আসলো “লো লায়িং প্লাসেন্টা”, সাথে ব্লাডার ক্লিয়ার হচ্ছে না। ইউরোলোজিস্ট

আমাকে গাইনি চিকিৎসকের কাছে রেফার করে দিলেন। আমার ডাক্তার তার কিছুদিন পর দেশে আসাতে রিপোর্ট নিয়ে আমার হাসবেন্ড গেলেন।

ডাক্তার প্রস্রাবের সমস্যাটা কেন হচ্ছে বুঝিয়ে বললেন। রাতে পানি কম খেতে এবং প্রস্রাব আটকিয়ে রাখতে মানা করলেন। আলহামদুলিল্লাহ,এরপরে আর ব্লিডিং হয়নি। আমাকে রেগুলার সব কাজ,বাচ্চাদের দেখাশোনা,ডাক্তারের কাছে যাওয়া, দাওয়াত খাওয়ানো সবই করা লাগছে। এরপরে পাঁচ মাসের শেষের দিকে ইন্ডিয়া যাওয়া লাগছে। আমার ছেলের চেকাপের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, ওর সব ওকে আসে এবং অনেক বড় একটা টেনশন শেষ হয়।দেশে এসে আমার এনোমালি স্ক্যান করলাম। বেবির সব ঠিক আছে। কিন্তু,কম্পলিট প্লাসেন্টা প্রিভিয়া। যদিও সনোলজিস্ট সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন, পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে এইটা উঠে যাবে। টেনশন যেন না করি।

আমার হাসবেন্ড আবার গেলেন রিপোর্ট নিয়ে। এইবার ডাক্তার কিছু রেস্ট্রিকশন দিলেন। সাথে এইটাও বলে দিলেন,যদি না উঠে প্লাসেন্টা। তাহলে সি-সেকশনের জন্য যেন দুইজন ডোনার রেডি রাখি।

আমার দুই বাচ্চাই এর পরে এতবার অসুস্থ হইছে। এদেরকে নিয়ে এতবার ডাক্তার,টেস্ট করতে যাওয়া লাগছে। আমাকে দেওয়া ডাক্তারের কোন রেস্ট্রিকশনই ফলো করতে পারি নাই। উলটা দেখা গেল আমার নিজেরই জ্বর ,বমি হয়ে অবস্থা কাহিল। ২৯ সপ্তাহে এজন্য আবার আল্ট্রাসাউন্ড করানো লাগলো। আমাকে ডক্টর ৩২ সপ্তাহের মধ্যে

একবার যাইতে বলছিলেন। আল্ট্রাসাউন্ড করার পর দেখি ফ্লুইড অনেক বেড়ে গেছে কিন্ত প্লাসেন্টাল পজিশন ঠিক হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। ফ্লুইড বাড়ার জন্য ব্লাড সুগার টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে গেলাম ডক্টরের কাছে। উনি রেফার করে দিলেন, যার কাছে আমি ডেলিভারি করাব এবং আগেরবারও যিনি ডেলিভারি করছেন,তার কাছে।

নতুন ডক্টর সব রিপোর্ট দেখে জ্বরের জন্য নাপা দিলেন আর বুঝিয়ে বললেন জ্বর বেশি হলে বেবির কেন প্রবলেম হবে। আমাকে গ্রোথ স্ক্যান, সাথে আরও কিছু টেস্ট করে দেখা করতে বললেন। পরের রিপোর্টগুলোও সব নরমাল ছিল আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু, এইবার ফ্লুইড আরও বেশি। যদিও ব্লাড সুগারের লাস্ট তিন মাসের এভারেজ রিপোর্ট ও নরমাল। আমার আগের প্রেগ্ন্যাসিতেও সেইম ছিল। এইটা উনি জানতেন। এজন্য আর কিছু বললেন না। ৩৭ সপ্তাহে আবার আল্ট্রা করে আনতে বললেন। ৩৪ সপ্তাহ থেকে আবারও শুরু হলো ফলস পেইন। যদিও এইবার এত ফ্রিকোয়েন্ট না। ৩২ সপ্তাহর পর থেকে আমিও শুরু করলাম ডেলিভারির জন্য প্রিপারেশন। মাঝখানে কিছু সময় আম্মুর বাসায় থাকাতে ঠিকভাবে হাটাহাটি /এক্সারসাইজ কিছুই করতে পারছিলাম না। এজন্য আবার নিজের বাসায় চলে আসলাম।এইবার ডেলিভারির দিন পর্যন্ত রেগুলার ৩/৪ কিমি টানা হেঁটেছি। সাথে বার্থিং বলের এক্সারসাইজ। কয়েকদিন বাদ দিয়ে বলা যায় প্রত্যেকদিনই করছি। সাথে অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল মাতৃত্বের “প্রিনেটাল কোর্সটা ” করার। ইটাও করে ফেললাম। জানাটা আরও গুছানো হলো। অনেককিছু নতুন করে জানছি। রেকর্ডেড থাকায় ক্লাসের পরেও দরকার মত শুনে নিতে পারছিলাম। যেটা আমার লেবারের প্রিপারেশনে অনেক হেল্প করছে।

৩৭ সপ্তাহের আল্ট্রাতে সব ওকে আসলো কিন্তু ফ্লুইড আরও বাড়ছে। ডক্টর হাটাহাটি বাড়াতে বললেন, সাথে পেইনের জন্য ওয়েট করতে বললেন।

শেষের দিকে চলাফেরা করাটা একটা পরীক্ষা, সাথে পেইন কখন উঠবে এইটার অপেক্ষা করাটা আরেক যন্ত্রণা। আমার যেহেতু প্রত্যেকবার ডেটের অনেক আগেই পেইন উঠে যায়। এজন্য সবাইর ফোন দেওয়া শুরু হয়ে গেল, বেবি কবে হবে জানতে। আমি নিজেও স্ট্রেসড হয়ে যাচ্ছিলাম। পেইন কি উঠবে না,নাকি ইন্ডিউস করতে হবে। নানারকম চিন্তা আসতে থাকে কিন্তু পেইন আর আসেনা।😂

৩৯ সপ্তাহের দিকে এসে আমার হাসবেন্ড সিরিয়াস অসুস্থ হয়ে হসপিটালে এডমিট হলেন। আমি বাচ্চাদেরকে আম্মুর কাছে রেখে ওনার সাথে হসপিটালে থাকতাম। রাতে একা বাসায় যেতাম। ওই কয়দিন হাটাহাটি, এক্সারসাইজ কিছুই করা পসিবল হয় নাই।আমার হাসবেন্ডকে যেদিন রিলিজ দিল,ওইদিনই ডক্টরের চেকাপ ছিল। ডক্টর পিভি চেক করে বললেন,আমি আর্লি লেবারে আছি। ৪ সেমি ওপেন হয়ে গেছে সারভিক্স। এডমিট হয়ে যেতে। উনি অগমেন্টেড লেবার প্রসেস করবেন। আমার মেমব্রেন সুইপ করে দিলেন। বললেন পেইন উঠে যাবে।

আমি কোনভাবেই মেডিকেল ইন্টারভেনশন চাচ্ছিলাম না। আমার হাসবেন্ডেরও ফিজিক্যাল কন্ডিশন ভালো ছিল না। বাসায় চলে আসলাম। প্রি-নেটাল কোর্সের ইন্সট্রাক্টর আপুদেরকে নক দিলাম। কি করা উচিত জানার জন্য।

আমার হাসবেন্ড ডক্টরের কথার বাইরে ওয়েট করতে আমাকে এলাউ করছিলেন না। যদিও ওনার নিজের কন্ডিশন তখন অনেক খারাপ ছিল। আপুরা বললেন, ওয়েট করতে এবং বেবির মুভমেন্ট খেয়াল রাখতে। নেচারালি পেইন শুরু হবে।

বাসায় আসার পর আমার হাসবেন্ডের শরীর আবারও খারাপ হয়ে গেল। পরে আমার ডক্টরকে ফোন দিয়ে বুঝিয়ে বললাম সবকিছু। উনি তখন পরের দিন এডমিট হতে বললেন আর নয়ত পেইন উঠলে। ডক্টর এলাউ করাতে আমার হাসবেন্ড আর কিছু বললেন না। আবার মেমব্রেন সুইপ করে দেওয়া হলো পরের দিন।পেইন উঠার কোন নাম নাই। ফলস পেইন ও নাই। একদমই নরমাল সব। ডেইলি মিউকাস প্লাগ যাচ্ছে। আর কিচ্ছু না। আম্মুও বলা শুরু করলেন এডমিট হয়ে যেতে। আরও যখন শুনলেন মিউকাস প্লাগ যাচ্ছে। তখনতো ধরেই নিলেন আমি দেরি করে প্রবলেম ডেকে আনতেছি।

আমার আগের প্রেগ্ন্যান্সির অভিজ্ঞতা + পড়াশুনা করে জানছি। মিউকাস প্লাগ যাওয়া শুধু বডি রেডি হচ্ছে ইন্ডিকেট করে। লেবারের সাইন না।

৫ দিন হয়ে গেছে।কিন্তু পেইনের কোন লক্ষন নাই। এদিকে আমি ৪১ সপ্তাহটাও ওয়েট করতে পারব না। আমার হাসবেন্ডের পরের সপ্তাহে ফ্লাইট। আমি শুধু দুয়া করতেছিলাম আর আপুদেরকে নক দিচ্ছিলাম। আপুরা বললেন যে,ফ্লাইটের ৩/৪ দিন আগেও পেইন না উঠলে এডমিট হতে। এর আগ পর্যন্ত ওয়েট করতে নেচারালি পেইন উঠার জন্য। আমিও তাই চাচ্ছিলাম। আপুদের সাথে কথা বলাতে ডিসিশন নেওয়াটা অনেক সহজ হয়ে গেছিলো। ৬ নম্বার দিনে সকালে টিস্যু দিয়ে চেক করে দেখি “ব্লাডি শো” আসছে তাও সিউর হতে আফিফা আপুকে নক দিলাম। আপুও বললেন “ব্লাডি শো” ই। পেইন উঠে যাবে ২/৩ দিনের মধ্যে। বাসায় কাউকে বললাম না। ওইদিনও টানা ১ ঘন্টা হাটলাম। রাতে বাসায় গেস্ট আসছিলো। খাবার রেডি করে দিলাম।

একটা আনারস খেলাম রাতের ৯ টার দিকে। এরপরে বার্থিং বলের এক্সারসাইজ করতে করতেই কন্ট্রাকশন আসা শুরু হলো। লেবার পেইন উঠলেও যে এত খুশি লাগতে পারে। এটা ওইদিন বুঝছি। 😂

তারপরেও মনে হচ্ছিল “ফলস পেইন” ও হতে পারে। কন্ট্রাকশন কাউন্ট করলাম। না,একদম নিয়ম মেনে টাইম গ্যাপ দিয়ে দিয়ে আসতেছে। যদিও এইটা আমার তৃতীয়বার। আমি খুব ভালো করে জানি পেইনটা কেমন হয়। তাও বিশ্বাস হচ্ছিলো না। আমি ওজু করে এশার নামাজ পড়ে নিলাম।যদিও কন্ট্রাকশনের টাইমটাতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল দাড়িয়ে নামাজ পড়তে। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে দুয়া করলাম, “যেইটা আমার এবং বাচ্চার জন্য উত্তম হয়, আল্লাহ যেন সহজ করে দেন”। এরমধ্যে আম্মুকে ফোন দিয়ে বল্লাম আমার ভাইকে নিয়ে চলে আসতে। বাচ্চাদের কাছে আম্মু থাকবেন।

আমার হাসবেন্ডের শরীর ওইদিন ও খুব খারাপ ছিল। দাঁড়াতে পারছিলেন না ব্যথায়। এজন্য ওনাকে তখনও কিছু জানালাম না। আমি আমার বাসার কাজ,বাচ্চাদের কাজ শেষ করে নিচ্ছিলাম। কন্ট্রাকশনের সময়টা শক্ত কিছু ধরে ওয়েট করছিলাম। ১১ টার কিছু আগে আম্মুরা আসলেন। তখন হাসবেন্ডকে জানালাম হসপিটাল যাওয়ার কথা। আমার তখন ১০ মিনিটে ৩ টা করে কন্ট্রাকশন আসতেছে। শান্ত থেকে অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখায় এতটা পেইনফুল লাগছিল না। মাইন্ড ডাইভার্টের মাধ্যমে পেইন ম্যানেজমেন্ট খুব ভালোভাবে শিখছি।

রাতের খাবার খেয়ে, বাচ্চাদেরকে আদর করে দিয়ে বের হলাম হসপিটালের জন্য। রাস্তায় এসে দেখি কিছুই নাই এত রাতে। অনেকক্ষন ওয়েট করে একটা সিএনজি পাওয়া গেল। কিন্তু,কিছুদুর যাওয়ার পরেই জ্যাম। আমার হাসবেন্ড তো অস্থির হয়ে গেলেন। জ্যাম ছাড়ার জন্য ৯৯৯ এও কল দিয়ে ফেলছেন। এদিকে আমি পেইন নিয়ে হাসিমুখে বসে আছি 😅

যাই হোক,২০-৩০ মিনিট পরে জ্যাম ছাড়ছে। আমি যখন হসপিটালে যাই তখন ১২ টার বেশি বাজে। আগেই বলে দেওয়া ছিল। সোজা লেবার অবজারভেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। লেবার রুমে এই প্রথমবার আরও দুইজনকে পেলাম। আমারতো খুবই খুশি লাগছিলো। একা থাকা লাগবে না। হাসবেন্ডের কাছে জমজমের পানির বোতল ছিল, ওইটা নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আসলাম। আমার হাসবেন্ড ডিউটি ডক্টরকে আলাদা করে বুঝাইয়া বলে দিলেন

” আমি ব্যথা কম বুঝি”😂, আমার যেন খেয়াল রাখে।

ডিউটি ডক্টর এসে পিভি চেক করলেন। একই রকম আছে সারভিক্স। এই ৬ দিনে একটুও ডায়ালেট হয়নাই। বেবিও উপরে। আমার কন্ট্রাকশন রেগুলার গ্যাপে আসছিল। এজন্য বললেন খাওয়া-দাওয়া করতে। যাতে টায়ার্ড না হই। আমাকে আমার মত থাকতে দিয়ে চলে গেলেন। আমার পাশের বেডের পেশেন্ট আপু খুবই সুইট ছিলেন।একদমই নড়াচড়া করেন নাই প্রেগ্ন্যান্সিতে। নরমালের ট্রায়ালে কাবু হয়ে গেছেন।বেবিও নামে নাই। আমি আপুকে পজিশন বুঝাইয়া বলতেছিলাম। যেন বেবির হেড এংগেজ হতে হেল্প হয়। কিন্ত,আপু ব্যথায় চিৎকারই করে যাচ্ছিলেন। ওয়াটার ব্রেক হওয়াতে ওনার শুয়েই থাকা লাগছিল। আমি ওনাকে বুঝাতে গিয়ে আমার যে পেইন উঠছে এটাই ভুলে গেছিলাম😅। ওনার সাথে কথা বলছিলাম আর স্কোয়াট, হিপ রকিং করছিলাম। এর মধ্যে কয়েকবার পি করে আসলাম। যাতে ব্লাডার খালি থাকে এবং বেবির নামতে ইজি হয়। আমার ডক্টর তো খুবই খুশি আমাকে দেখে। অন্য পেশেন্টদের কে বলছিলেন,”দেখ আমার যেইটা বলার কথা,ওইটা ও নিজে থেকেই করতেছে”।

এরপর আরেক ডক্টর বেবির হার্ট রেট চেক করতে এসে, আমার কন্ডিশন আর রিলাক্সলি গল্প করা দেখে বলছেন,

“আপনার মনে হয় পেইন কম হয়”। 😂

পাশেই ওই আপু পেইনে চিৎকার করতেছে। আর আমি দাড়াইয়া দাড়াইয়া ঘড়ি দেখে কনট্রাকশন টাইম দেখে ডক্টরকে আপডেট দিচ্ছি। ডক্টর,নার্স, আয়ারা আমাকে দেখে অনেক অবাক হইছিল। ওই আপুও পরে উঠে দাড়িয়ে হিপ রকিং করছিলেন। সাথে আমি বলতেছিলাম ” চিৎকার না করে সূরা পড়েন, আল্লাহ সহজ করে দিবেন।”

আপু অনেক সুন্দর সুর করে সুরা পড়ছিলেন। পেইনের মধ্যে অনেক শান্তি লাগতেছিল শুনে।এইভাবে যে কখন ৩ টা বেজে গেছে টের ও পাই নাই। আমার কন্ট্রাকশনের গ্যাপ ও কমে আসছে সাথে টাইমও বেড়ে ৫০/৬০ সেকেন্ড হয়ে গেছে। আমি ট্রানজিশন পিরিয়ডে চলে আসছি। এইটা বুঝতেছিলাম। টয়লেটের প্রেশার আসা শুরু হলো । একা একা টয়লেট শেষ করে দাঁড়াতেও জান বের হয়ে যাচ্ছিল। কনট্রাকশন গ্যাপ এ হেঁটে অবজারভেশন রুম থেকে লেবার রুমে চলে আসলাম। আমাকে বেডে উঠে শুতে বলা হলো। আমি শুধু একটা কথাই বারবার মনে করছিলাম:

“Trust ur body, follow ur instinct”

তাই আমি ইনস্টিংক্ট ফলো করে,না শুয়ে হিপ রকিং করছিলাম। ওইভাবেই ভালো লাগছে মনে হচ্ছিল। এরপরে আমার বমির ফিল হওয়া শুরু হলো। যেইটা প্রত্যেকবার এই টাইমে হয়। সাথে নিচের দিকে চাপ লাগছিল। ডক্টরকে ডাকতে বললাম।ডক্টর আমাকে চেক করে দেখেন কমপ্লিটলি ডায়ালেটেড। কিন্তু, ফ্লুইড বেশি থাকায় বেবির হেড তখনও এনগেজড হয় নাই । ডক্টর হাত দিয়ে ফ্লুইড লিক করে দিয়ে, হেড ম্যানুয়ালি বসিয়ে দিয়ে বললেন,কন্ট্রাকশন আসলে পুশ করতে। আমি এতক্ষণ পর্যন্ত ক্যানুলাও করি নি। ডেলিভারির পরে কিছু মেডিকেশন লাগতে পারে। এজন্য এই পেইনের মধ্যে ক্যানুলা করা হয়। যদিও আমি কিছুই টের পাই নাই। ট্রানজিশন পিরিয়ডে আসলে সবার যে মনে হয় “আমি আর পারব না”। এত সময় হাসতে থাকা আমিও দেখলাম এর ব্যতিক্রম না। আমি পেইনে অস্থির হয়ে চিন্তা করতেছিলাম

“এপিডুরাল কেন নিলাম না,বাচ্চা আর বের হবে না,ব্লা ব্লা…” (এখন চিন্তা করলেও হাসি পায়)

পেইনে এতটাই অস্থির হয়ে গেলাম যে,কন্ট্রাকশন ছাড়াই পুশ করতে থাকলাম। যার জন্য পুশিং টাইমটা দীর্ঘ হইছে। আর আমি ডক্টরকে আগেই বলে রাখছিলাম “এপিসিওটমি” না দিয়ে হয় কিনা দেখতে। আমি পুশ ঠিকমত না করাতে কয়েক জায়গায় ছিড়ে যাচ্ছিল এবং বাচ্চাও বার বার আটকে যাচ্ছে দেখে উনি আমার পারমিশন নিয়ে খুবই ছোট্ট কাট দিলেন। ফাইনালি, ৫০ মিনিটের মত পুশ করার পর ৩.৮ কেজি ওজনের আমার পুত্র রাত ৪:১৩ তে দুনিয়াতে আসেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমার পেটের উপর রেখে দেওয়া হয়। ১০ মিনিট পর আমি কর্ড কাটার পারমিশন দেওয়ার পর কর্ড কাটা হয়।ডক্টর যদিও বিরক্ত হইছেন এই ডিলের জন্য। বেবিকে নেওয়ার পর, আমার ব্লিডিং বেশি হওয়াতে ওইটা মেনেজ করে স্টিচ দিতে অনেক সময় লাগে। আলহামদুলিল্লাহ, খুবই অল্প সেলাই লাগে। যেইটা কয়েকদিন যত্ন নেওয়ার পর খুব ভালোভাবে হিল হয়ে গেছে। ব্লিডিং এর জন্য ৮ ঘন্টা অবজারভেশনে রেখে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়।

হাসিমুখে বাসায় গেছি, আমার অন্য বাচ্চাদের কাছে, তাদের নতুন ভাইকে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ।

অনেক ডিফিকাল্ট এবং কমপ্লিকেটেড প্রেগন্যান্সি আল্লাহ তার রহমত দিয়ে অনেক সহজে পার করে দিছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।