আপনার করা আঘাত পেয়ে যে আপনার
বুকে এসেই মুখ লুকায়
সে আপনার সন্তান
আপনার প্রিয়তম সন্তান
তারে আপনি কিভাবে মারেন ?
তারে আপনি ক্যান মারেন ?
শক্ত কঠিন, স্বার্থপর দুনিয়ার বুকে
কষ্ট যাতনায়, আঘাত, ব্যর্থতায়
আপনার আচলখানা যার জন্য
দুনিয়ার সবথেকে বড় আশ্রয়কেন্দ্রের
সবথেকে বড় তাবু
জন্ম থেকে যে জানে আপনার মতো
কেউ নাই, কিচ্ছু নাই
তারে আপনি কিভাবে মারেন?
তারে আপনি ক্যান মারেন?
কই যাবে সে আপনাকে ছেড়ে?
রব তো তাকে আপনার কোলে নাও দিতে পারতো
দিতে পারতো অন্য কারও বুকে, অন্য কারও কোলে
আপনার কোলটা থাকতে পারতো আজন্ম খালি
রব আপনাকে ভালবেসে তাকে আপনার বুকে, আপনার কোলেই দিল
দুনিয়ার এত বড় নিয়ামত, এত বড় আমানত
রবের দেয়া আমানতের খেয়ানত ক্যান করেন?
কিভাবে করেন?
তারে আপনি তুচ্ছ কারণে ক্যান মারেন?
আপনার জীবনের আঘাত, যন্ত্রণা, অপ্রাপ্তি আর ব্যর্থতা ক্যান ছোট্ট একটা শরীরে ঢেলে দ্যান?
অতটা সে বুঝে না, যতটা আপনি বুঝেন
অতটা মানিয়ে, অতটা গুছিয়ে সে চলতে পারে না
আপনি মা, আপনি বাবা আপনি তার শিক্ষক
ছাত্রের ভুল ছাত্রকে শিখায় আর
শিক্ষকের ভুল ছাত্রের জীবন নষ্ট করে দেয়…..
জানেন না বুঝি!
বাচ্চাকে আদরের পাশাপাশি শাসন করাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু লক্ষ্য রাখা জরুরী সেই শাসন যেন সীমাকে লংঘন না করে। লগু পাপে গুরু শাস্তিতে কী কী হতে পারে, তার একটা ছোট তালিকা দিচ্ছি।
- বাচ্চার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে।
- বাচ্চার মধ্যে ভয়ের জন্ম দিতে পারে।
- তার মধ্যে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত আঘাত তাকে বেপরোয়া করে তুলতে পারে।
- আপনার প্রিয় সন্তানের সাথে আপনার অলিখিত দূরত্ব তৈরি হতে পারে। ছোটবেলা স্মৃতিতে স্থায়ী হয় সবচেয়ে বেশি। স্থায়ী স্মৃতিতে তাই আদর এবং শাসনের সামঞ্জস্য খুব জরুরী।
বাচ্চা অন্যায় করলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। বুঝতে না চাইলে তাকে যেকোন একটা সুবিধা থেকে দূরে সরিয়ে শাস্তি দেয়া যায়।
বাচ্চার গায়ে হাত তুলা শাসনের চূড়ান্ত পর্যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলে বাচ্চার গায়ে হাত তুলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে।
নিষেধাজ্ঞা আছে ইসলামে।
রাসূল(সাঃ) বাচ্চাদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। নিজ নাতিরা নামাজের সময় রাসূলের পিঠে চড়ে বসে থাকত। কিন্তু তিনি সামান্যতম বিরক্তও হতেন না।
হাদিসে এসেছে, বাচ্চাকে কখনও এমনভাবে আঘাত করা যাবে না যেটা চেহারাতে প্রকাশ পায়। দশ বছরের পর বাচ্চাকে প্রহার করা যাবে একান্ত বাধ্য হয়ে। তবে সেটা ফরজ বিধান পালন নামাজের জন্য।
আবার এখনকার দিনে অনেকেই বাচ্চাকে হাতে মারেন না। কিন্তু অত্যন্ত শক্ত কঠিন গলায় শাসন করেন। ভাবেন আমি তো আর গায়ে হাত তুলছি না। কিন্তু এটাও অত্যন্ত ক্ষতিকর একটা ছোট বাচ্চার জন্য।
এটাও বাচ্চার মনে ক্রমশ ভয়, শংকা, আত্মবিশ্বাসহীনতা, চুপ হয়ে যাওয়া, নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
তাই বাচ্চাকে মুখে শাসন করা অথবা হাত দিয়ে মার দেয়ার আগে ভাবুন…..
- কেন বাচ্চা এমনটা করছে।
- তার কথা শুনুন। তাকে বুঝার চেষ্টা করুন।
- তাকে একটু সময় দিন।
- তাকে বুঝিয়ে বলুন। একবার না বুঝলে বারবার বুঝিয়ে বলুন।
আর কিছু জিনিস বাচ্চাদের সহজাত স্বভাব। কোনটা সহজাত এবং কোনটা সহজাত নয় সেটা জানার এবং বুঝার জন্য পড়ুন - বই কিংবা ইন্টারনেটে।
★ তার কিংবা নিজের রাগের সময় রবকে ডাকুন একান্তচিত্তে। কল্যাণের সাথে সন্তান এবং নিজেকে শান্ত হওয়ার দোয়া করতে থাকুন।
★ প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সর্বোপরি সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক পড়াশোনা করুন। অতিরিক্ত প্রায়োরিটি এবং অতিরিক্ত শাসন দুটোই বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
বাচ্চার অকারণ জেদ থামাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করুন….
- তার চোখে চোখ রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- তার পাশে থেকে অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়ার ভাব ধরে তাকে অবহেলা করুন। যেন আপনি কিছুই দেখতে পারছেন না, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
- বাচ্চার অতিরিক্ত জেদ থামাতে তার মনযোগ অন্য কোন বিষয়ে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।
- বাচ্চার অতিরিক্ত জেদ নিয়ন্ত্রণে কোরআনের কিছু সূরা ঘরে ছেড়ে রাখতে পারেন। এটা বিশেষ কার্যকর বটে।
আর হ্যাঁ, বাচ্চার জেদ নিয়ন্ত্রণ করার আগে অতি অবশ্যই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন, নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
বাচ্চার গায়ে হাত তোলাকে না বলুন।
বাচ্চাকে মেরে বাচ্চার কান্না এবং নিজের কান্না….
কোনটিই সুখকর অনুভূতি নয়।