গর্ভধারণ একজন নারীর জন্য খুব স্বাভাবিক ও আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এই সময়ে একজন নারীর শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। গর্ভধারণের সময় নারীর মাসিক ঋতুচক্র বা পিরিয়ড বন্ধ থাকে, যা সন্তান প্রসবের পর আবার শুরু হয়। প্রসবের পর পুনরায় পিরিয়ড ব্যাপারটি যদিও একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তবে এই সম্পর্কে অনেক মায়েরই সঠিক তথ্য জানা নেই।

আজকের লিখায় প্রসবের পর পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে।

প্রসবের পর প্রথম রক্তস্রাব- নিফাস

সন্তান প্রসবের পর নারীর যোনিপথ দিয়ে রক্তস্রাব যায়, যা সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইসলামের পরিভাষায় একে বলা হয় নিফাসএটি পিরিয়ড নয়। নিফাস বন্ধ হবার পর বা কিছু সময় বিরতিতে স্বাভাবিক পিরিয়ড শুরু হয়। একে পোস্টপার্টাম পিরিয়ডও বলে

প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হয় কখন?

নিফাস শেষ হবার পর ঠিক কখন পিরিয়ড শুরু হবে, এই প্রশ্নের উত্তর প্রতিটি নারীর জন্য আলাদা।  আপনি আপনার খুব কাছের কয়েকজন নারীকে জিজ্ঞেস করলেই এই তথ্যের সত্যতা পেয়ে যাবেন।

কিছু নারীর ক্ষেত্রে প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হতে ৬-১২ সপ্তাহ লাগতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে ২ বছরও লাগতে পারে। কারো আবার নিফাস শেষ হবার পরপরেই নিয়মিত পিরিয়ড শুরু হয়ে যেতে পারে।

দ্রুত বা দেরীতে পিরিয়ড হবার কারণ

পিরিয়ড শুরুর ক্ষেত্রে এই যে তারতম্য, এটি হবার একটি কারণ হচ্ছে মা তার বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন নাকি বাইরের দুধ দিচ্ছেন এর উপর।

একজন মা যখন সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং করান , তখন “প্রল্যাক্টিন” নামের হরমোন নিঃসরণ হয় ও মায়ের দেহে এই হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই প্রল্যাক্টিনের কারণে নারীর ওভুলেশন বা ডিম্বস্ফুটনে বিলম্বিত হয়। ফলস্বরূপ, পিরিয়ড দেরীতে হয়।

একজন মা যদি বাচ্চাকে নিয়মিত ব্রেস্টফিডিং করান, তবে সেই মায়ের দেহে “প্রল্যাক্টিন” বেড়ে গিয়ে অভুলেশন কমে যাবে, ফলে পিরিয়ড দেরীতে শুরু হবে।

আর একজন মা যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ান, তবে প্রল্যাক্টিনের পরিবর্তন হয়না বলে সেই মায়ের পিরিয়ড দ্রুত হবার সম্ভাবনা থাকে।

আবার, বাচ্চার সলিড জার্নি শুরুর পর বুকের দুধ খাওয়ানো কমে যায়, ওই সময় অনেকের পিরিয়ড হতে পারে।

তাই বলা যায়, প্রসব পরবর্তী পিরিয়ড কখন হবে এটি খানিকটা নির্ভর করে ব্রেস্টফিডিঙের উপর, যার নেপথ্যে রয়েছে “প্রল্যাক্টিন” হরমোনের প্রভাব।

মনে রাখা দরকার, প্রসবের পর পিরিয়ড দেরীতে হোক বা আগে, এতে সাধারণত কোন সমস্যা নেই। তবে, আপনি যদি মনে করেন খুব বেশী দেরী হচ্ছে , তবে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিতে পারেন।

পিরিয়ড হবার পূর্বে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে কোন সমস্যা আছে কি না?

প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হোক বা না হোক, নিফাস শেষে সুস্থ হলেই শারীরিক সম্পর্ক করা যায়। মা যদি মনে করেন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন তবে শারীরিক সম্পর্ক করায় কোন বাঁধা নেই। বরং সুন্দর দাম্পত্যের জন্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহ দেয়া হয়।

প্রসব পরবর্তী পিরিয়ড নিয়ে ভুল ধারণা- “পিরিয়ড না হলে কন্সিভ হবে না”

প্রসবের পর পিরিয়ড নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, “পিরিয়ড হবার আগ পর্যন্ত প্রটেকশন ছাড়াই শারীরিক সম্পর্ক করলে কন্সিভ বা গর্ভধারণ হয়না”। এই ভুল ধারনার ফলে অনেকেই অনাকাংখিত গর্ভধারণ করেন যা সেই মায়ের জন্য খুব কঠিন পরিস্থিতির জন্ম দেয়।

সঠিক তথ্য হচ্ছে, পিরিয়ড শুরু হোক বা না হোক, এই সময়ে শারীরিক সম্পর্কের ফলে গর্ভধারণ সম্ভব এবং প্রচুর নারী পিরিয়ড হবার আগেই গর্ভধারণ করেন।

কেউ যদি এ সময় কন্সিভ করতে না চান, তাকে অবশ্যই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

প্রসব পরবর্তী পিরিয়ডে পরিবর্তন আসে কি?

প্রসবের পর আবার যখন পিরিয়ড শুরু হয়, তবে সেখানে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। যেমন, পিরিয়ডের স্রাবের পরিমাণে পরিবর্তন হতে পারে, আগের চেয়ে বেশি ব্যাথা হতে পারে, ব্লিডিং এর পরিমাণ, সময় ইত্যাদি পরিবর্তিত হতে পারে।

সবার ক্ষেত্রেই এক রকমের পরিবর্তন হবে না। এবং এই পরিবর্তন নিয়ে দুশ্চিন্তা করারও কিছু নেই যদি না খুব বেশি অসুবিধা হয়।

প্রসবের পর পিরিয়ডে পরিবর্তন আসা খুব স্বাভাবিক বিষয়। তাই এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক তথ্য জানুন ও নিজের যত্ন নিন।

তথ্যসূত্র

১। ডেলিভারির পর প্রথম পিরিয়ড
২। সন্তান প্রসবের পর­ দীর্ঘসময় মাসিক বন্ধ থাকলে করণীয়
৩। Periods after Pregnancy
৪।What to expect from your first period after pregnancy

লেখাটি রিভিউ করেছেন: আফিফা রায়হানা