শিশুরা পড়তে না চাইলে আমাদের মাঝে দুই ধরণের মনোভাব তৈরী হয়। একটি হলো, ছন্নছাড়া হয়ে গেছে, বেয়াদব, খারাপ স্টুডেন্ট, মেধা ভালো না- ইত্যাদি তকমা লাগিয়ে দেয়া, সন্তান/শিশু/শিক্ষার্থীকে একটা নির্দেষ্ট শ্রেণির আওতায় ফেলে দিয়ে নিজে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া।
কিন্তু, একটা মানুষ জন্ম থেকেই জ্ঞান তৃষ্ণা নিয়ে বেড়ে উঠে। জানাশুনার প্রতি মানুষের যে আগ্রহ তা নষ্ট হয় পরিবেশেরই ভুল হস্তক্ষেপের কারণে। যেমন, পড়াশুনার প্রতি একটা নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করে ফেলা বা পড়াশুনার আগ্রহ ও জ্ঞানানুসন্ধিৎসাকে যথাযথ কাজে না লাগানো। এমনকি এই জ্ঞানানুসন্ধিৎসার বিকাশও সঠিকভাবে না ঘটার কারণ পরিবেশেরই প্রভাব।
এই পরিবেশ যতোই দায়সারা হওয়ার চেষ্টা করুক, শিশুর মাঝে বিরূপ দৃষ্টীভঙ্গি তৈরী হওয়ার ব্যাপারটা অস্বীকার করা যায়না। এই ব্যাপারটিকে স্বীকার করতে গিয়ে একদল লোক পড়াশুনাকে মজার করে তুলতে চায়। তাদের মনে হয়, শিশুরা যেহেতু খেলতে ভালোবাসে তাহলে শিশুদের কাছে পড়াশুনাটাকেই মজার ও আকর্ষণিয় করে তুললে তাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। কিন্তু এটাও তো সত্য যে, একাডেমিক পড়াশুনাগুলো ভীষণ মানসিক চাপের দাবী রাখে। আবার কতো বয়স পর্যন্ত তাদের পড়াশুনাকে মজার করতে হবে সেই প্রশ্নটাও উত্তরবিহীন থেকে যায়।
শিশুকে পড়াশুনার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করিয়ে দিয়ে তাদেরকে মানসিক চাপের সাথে মানানসই করে দেয়ার জন্য উপরোক্ত দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে এমন এক পদক্ষেপ নেয়া যায় যাতে তারা পড়াশুনায় আগ্রহী হয়ে উঠবে।
পড়াশুনার প্রক্রিয়ার সাথে শিশুকে পরিচিত করিয়ে দিন
পড়াশুনা করার মূল প্রক্রিয়াটি হলো, কোন বিষয় নিয়ে কৌতুহল বোধ করে সেই বিষয়কে জানার জন্য নানারকম তথ্য ঘাটাঘাটি করা। কয়েকদিন ডুবে থেকে সেই বিষয় নিয়ে জানাশুনার পর জেনে ফেলার তৃপ্তি। অতঃপর, অন্যকে জানানো, “দেখো, আমি এই ব্যাপারটা জেনেছি”। অর্থাৎ, জানার কৌতুহল, তার পিছনে ছুটা এবং জানার পর বিষ্ময় ও তৃপ্তি অর্জন করাটা হলো পড়াশুনা করার সারকথা।
একজন শিশু সচেতনভাবে নিজের কৌতুহল প্রকাশ করতে পারবে না, সে বুঝতেই পারবেনা তার মাঝের কৌতুহলবোধটুকুন আসলে কী! শিশুদেরকে সচেতনভাবে এই কৌতুহলবোধের সাথে পরিচিত করতে হবে এবং তাদের মাঝে কৌতুহলবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তারপর তাদের সেই কৌতুহলকে কাজে লাগিয়ে তাকে বই ও বস্তুর সাথে পরিচিত করতে হবে, শিখাতে হবে সাধারণ জ্ঞানগুলো (ফুল-ফল-পাখির নাম, পতাকার নাম, দেশের নাম, মানচিত্র দেখার কৌশল, বস্তু, ব্যবহার্য সামগ্রির নাম ও ব্যবহার ইত্যাদি)।
সে যখন আমোদিত হবে, চিৎকার করতে থাকবে, জানার আনন্দ যখন তাকে ঘিরে ধরবে, তখন তার পাশে থেকে তাকে আনন্দকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখাতে হবে। তার খুশিতে শামিল হয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এভাবে জানার আনন্দকে যখন সে রপ্ত করতে পারবে তখন নিজে থেকেই “বই” নামক বস্তুটির প্রতি সে ভীষণ কৌতুহল অনুভব করবে। পড়তে চাইবে নিজে থেকেই। তার এই জানার কৌতুহলটুকু কাজে লাগান। সে যখন এটা সেটা জানতে চাইবে, নানারকম প্রশ্ন করে পাগল করে তুলবে তখনই তাদেরকে পড়ার সাথে, বইয়ের সাথে পরিচিত করতে হবে। অর্থাৎ পড়াকে নয়, পড়ার প্রক্রিয়াকে মজাদার করে তুলতে হবে।