আসসালামু আলাইকুম।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মাঝে মুবাশারাহ (যৌন সম্ভোগ) এবং বংশ বৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। মাশা আল্লাহ বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় বৈধ কার্যক্রম হয়ে ওঠে কল্যাণ ও সাওয়াবের কাজ।

মানুষের সামাজিক চাহিদার অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ‘সন্তান লাভ’। এনিয়ে আনন্দ-বেদনা, পরীক্ষা, বিবাদ, গর্ব থেকে শুরু করে বিবাহ-বিচ্ছেদ সবই হয়ে থাকে। কখনো কখনো পরীক্ষা এমন পর্যায়ে দাঁড়ায়, ইসলামের বুনিয়াদি কিছু জ্ঞানের অভাব বা ভুল বুঝের কারণে নিজের অজান্তেই মানুষ বড় ও কঠিন পাপের মধ্যেও নিমজ্জিত হয়ে যায়। আলোচনা শুরুর আগে কুর’আনে পাকের একটি আয়াতের দিকে আলোকপাত করতে চাইঃ

“যমীন ও আসমানের বাদশাহীর অধিকর্তা আল্লাহ, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন,আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন,যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা কোনোটি দেন না। তিনি সব কিছু জানেন এবং সবকিছু করতে সক্ষম। [সুরা শুরা:৪৯-৫০]

এখানে আক্বিদাহগত দিক থেকে একটি বিষয়ে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কারণ এই মূলনীতিটি বুঝতে পারলে বিজ্ঞানের বদৌলতে যে ভ্রূণবিদ্যা সমাজ উপহার পেয়েছে ও তার সাথে জড়িত শর’ঈ আহকাম বোঝা সহজ হবে ইন শা আল্লাহ।

★ উপরের আয়াত থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান ধারণ করা, অধিক সন্তান লাভ করার ইচ্ছা আমাদের উম্মতের সুন্নাহ হলেও সন্তান জন্ম হওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহ নির্ধারিত তাক্বদিরের অধীনে এবং তাই তা জীবনধারণ করার জন্য বা ইবাদতের সফলতা লাভ করার জন্য মোটেই আবশ্যক নয়। কাজেই সন্তান লাভ করার জন্য ফাতাওয়ায় কোনো আহকামের শীথিলতা প্রযোজ্য হবেনা।★

এবিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম ও সাহাবিয়াদের জীবনী থেকেও আমরা উদাহরণ পাই। যেমন, আম্মাজান ‘আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কোনো সন্তান ছিলোনা। কিন্তু তা তাকে ইবাদত থেকে, মুহাদ্দিসাহ হওয়া থেকে, খুলাফায়ে রাশীদিনের উপদেষ্টা হওয়া থেকে বিরত রাখেনি। নারীজীবনের অন্যতম চাহিদা ‘মাতৃত্ববোধ’ থেকে ‘বঞ্চিতা’ হয়েও তিনি বিষণ্ণতায় ডুবে যাননি তাক্বওয়াহ ও তাক্বদীরের উপর অটল বিস্বাসের কারণে। কেননা এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে আল্লাহ কখনোই তার বান্দার উপর জুলুম করেননা। উনার কোনো হুকুমই তাঁর সৃষ্টিকুলের জন্য বোঝা বা অসহনীয় হতে পারেনা।

★কিছু ভাই আছেন সন্তান লাভকে এত গুরুত্ব দেন যে তাকে জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় (জরুরত) মনে করে ভ্রুণবিদ্যাকে স্বাগত জানিয়ে অনেক কিছুর অনুমতি দিয়ে দেন। এব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, জ্ঞান অর্জন করে বড় কোনো গর্হিত ভুলের মধ্যে যেন না পড়ি, সেজন্য এই আলোচনা শুরু করছি।

পরের পর্বে প্রযক্তিগত কিছু পদ্ধতির ব্যাখ্যা করব ইন শা আল্লাহ, যেন এগুলো আসলে উপকারী নাকি অভিশাপ তা বোঝা যায়। আশা করি কষ্ট করে সময় নিয়ে আপনারা পড়বেন। কেননা, আমরা নিজেরা না হলেও পরিচিত আত্নীয় বা বন্ধুদের চিনি যাদের সন্তান নেই এবং অনেকেই হয়তো বিজ্ঞানের সাহায্য নেয়ার চিন্তা করছি বা নিয়েছি।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমাদেরকে তাক্বদীরের উপর অটল থেকে উনার শুকরিয়া আদায় কয়ার তাওফিক্ব দিন।

-আবু ‘আব্দিল্লাহ ইবনু আনিস

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা