আসসালামু আলাইকুম।
আমার আজকের লেখাটি একটি ছোট্ট গল্প। ভ্রূণবিদ্যা পৃথিবীতে কতখানি এগিয়েছে তার একটি ছোট্ট উদাহরণ মাত্র।
আমার একজন শিক্ষক, ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহর ছাত্রদের একজন; আল্লাহ উনাকে ও সকল উলামাদের হিফাজত করুন। হঠাৎ এক বিকেলে ফোন করে বললেন খুব মন দিয়ে যেন উনার কথা শুনি, কেননা এক দম্পতির সংসার নির্ভর করবে আমার দেয়া উত্তরের উপর!! সাথে সাথে মনের মধ্যে একটি অজানা ভয় ধরে গেল।
এক- তালাক্বের ফয়সালা আর দুই- আমি কোথাকার কোন অযোগ্য, সে কিনা উস্তাদকে মতামত দিব? এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মাফ চাওয়ার আগেই উনি বললেন এটি চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি নতুন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই মাশওয়ারাহ করা দরকার। তখন ফাতওয়াহর ভয় ছুটে মনের মধ্যে উস্তাদের প্রতি সম্মান আরো বেড়ে গেল, মনে হলো আসল আলেম কে তার প্রমাণ আজকে আরেকবার পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।
উস্তাদ ইলমের এতখানি ভার নিয়েও যে বিষয়ে সন্দেহ আছে বা পরিষ্কার হওয়া দরকার তা নিয়ে প্রশ্ন করতে এতটুকু দ্বিধা বোধ করেননি। বরং উনার বিচারে পুরো বিষয়টি না বুঝে ফাতওয়াহ দেয়া যাবেনা এবং ভুল হয়ে যেতে পারে জন্যই আলোচনা করা। সুবহানআল্লাহ! আর আমরা জ্ঞানের অহমিকা আর ডিগ্রী নিয়ে কি ভাবটাই না দেখাই.. যাহোক, গল্পে আসি-
ইংল্যান্ডে বসবাসরত এক দম্পতি বহু চেষ্টা করেও সন্তান লাভ করেননি। কিন্তু সরকারী হাসপাতালের ফার্টিলিটি সুবিধা নিতে এখনো উনাদের নাম আসেনি; বা আদৌ আসবে কিনা তা মনে পড়ছেনা। তাই নিজেদের সাধ্যমতো খুঁজে দেখে উনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউরোপের একটি দেশে গিয়ে আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নিবেন। সেই সুবাদে প্রথমবার দুইজন একসাথে ছুটিতে গিয়ে নিজেদের নুতফাহ (আরবীতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু দুটিকেই নুতফাহ বলা হয়) সংরক্ষণ করে ফার্টিলিটি ক্লিনিকের হিমাগারে রেখে আসেন। প্রথম ধাপের ফর্মালিটি পুরা করে উনারা আবার পরবর্তীতে গিয়ে নিষিক্ত ভ্রূণ স্থানান্তর করার কাজটি করে আসবেন বলে নির্ধারণ করেছিলেন।
অতঃপর যখন ভ্রূণ স্থানান্তর করার সময় হয় তখন চাকুরি বা ছুটি সংক্রান্ত কোনো অনিবার্য কারণে সংশ্লিষ্ট ভাইয়ের আর ইউরোপে যাওয়া হয়নি। কারণটাও এখন সঠিক মনে পড়ছেনা। উনার স্ত্রী অন্যদিকে নিজে যেতে পারবেন জন্য একাই সফরে বের হন জরায়ুতে ভ্রূণ স্থানান্তর করার জন্য। ভুল হয় এই সফরেই। মারাত্মক ভুল।
আমাদের গল্পের সেই বোন, আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করুন- ক্লিনিকে গিয়ে ভ্রুণ নিজের জরায়ুতে স্থানান্তর করে অন্তঃস্বত্তা হয়ে তার স্বামীর কাছে ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু সন্তান লাভের জন্য এতই মরিয়া হয়ে ছিলেন যে শর’ঈ গন্ডী কখন যে পার করে ফেলেছেন তার খেয়াল রাখতে পারেননি। সুবহানআল্লাহ। উনি যখন ক্লিনিকে ফিরে যান তখন জানতে পারেন যে উনার ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। সেজন্য সুস্থ ভ্রূণ নিষিক্ত করা সম্ভব হবেনা।
এখন উপায়? উপায় একটা আছে- তা হলো, ক্লিনিকে সংরক্ষিত অন্য মহিলার সুস্থ ডিম্বাণু কিনে নেয়া যেতে পারে। আর সেই ডিম্বানুকে উনার স্বামীরই পূর্বসংরক্ষিত শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করে উনার নিজের জরায়ুতেই স্থানান্তর করে নিতে রাজী হলে ক্লিনিক সেব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে। তো আমাদের বোন স্বামীকে না জানিয়ে, নিজেই কনসেন্ট ফর্ম স্বাক্ষর করে সে কাজটি করে ফেলেছেন! তাহলে অর্থ কি দাঁড়ালো, উনার জরায়ুতে উনার স্বামী ও অন্য একজন মহিলার সন্তান বড় হচ্ছে। এখানে উনি সারোগেট মাদার। মানে শুধু পেটে ধরবেন তিনি, সন্তানটি আসলে উনার নিজের স্বামীর ঔরসজাত হলেও, উনার নিজের কিন্তু না। সুবহানআল্লাহ।
স্পার্ম ব্যাংক থেকে অপরিচিত পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার কথা ইউরোপে সাধারণত শোনা গেলেও, অন্যের ডিম্বাণু নিয়ে তৃতীয় কারো জরায়ুতে স্থানান্তর করার ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই উস্তাদের সেই ফোন করা। কেননা ওই ভাই যখন জানতে পেরেছেন তার স্ত্রী অন্য মহিলার নুতফাহর সাথে উনার নুতফাহ মিলিয়ে অন্তঃস্বত্তা হয়ে এসেছেন, তখন তালাক্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। আল্লাহ আমাদের ওই ভাইকে সবর দান করুন ও এই পরীক্ষা থেকে সহজে উদ্ধার করুন।
এমতাবস্থায় কি করা উচিত, উস্তাদ কি ফাতওয়াহ দিয়েছেন সেটা বললাম না, সেটা এখানে বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, ভ্রূণবিদ্যা আরো অগ্রগামী হয়েছে এবং হবে। এবং এভাবেই যিনার প্রসার প্রকাশ্যে সমাজে এখন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে।
এই প্রযুক্তি আমরা যে দেশেই থাকি না কেন একটু দেরিতে হলেও পৌছাবেই। এখন এনিয়ে আমরা কতখানি সচেতন? ভারত বাংলাদেশে সারোগেসি বিজ্ঞাপন এখনর আর বিরল নেই। কিভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দিলে, কোন পদ্ধতিতে জীবন চালালে আল্লাহ খুশী হবেন আর কোন পদ্ধতিতে উনি নারাজ হবেন, তার তোয়াক্কা করা শিখবে- তা কি একটু খতিয়ে দেখছি আমরা?
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
-আবু ‘আব্দিল্লাহ ইবনু আনিস