প্রসঙ্গ যখন বাচ্চার ম্যানার বা আচরণ শিক্ষা

আমরা চাই সন্তান হোক দেশ সেরা।
সন্তানকে তাই সবসময় সেরাটাই দিতে চাই। বাজারের সবচেয়ে সেরা মাছ, মাংস। দোকানের সবচেয়ে সুন্দর জামাটা।
সন্তানকে সেরাটা দিতে অতিক্রম করি সাধ্যকেও।
কিন্তু সাধ্যের মধ্যে যে সেরাটা দিতে আমরা ভুলে যাই সেটার নাম সুশিক্ষা। বাচ্চার খাবার, পোশাক যতটা গুরুত্ব পায় আচরণগত ব্যাপারটা যেন ততটাই অবহেলিত হয়। অথচ তার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ কিন্তু তার সামগ্রিক আচরণ।
শারীরিকভাবে পরিপুষ্ট সন্তান সততাকে ধারণ করতে পারেনি। বাবা-মার ইহকালীন কিংবা পরকালীন জীবনে এরচেয়ে বড় পরাজয় কিন্তু আর কিছুতেই নেই। সন্তানের শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে একটি সঠিক, সুন্দর মানসিক বিকাশের কোন বিকল্প হয় না।

বাচ্চার আচরণগত যে যে সমস্যা গুলো আমরা এড়িয়ে যাই সাধারণত। যা একেবারেই অনুচিত।

▪️ বাচ্চা একটা ভুল করেছে। আমরা বলি "ছোট মানুষ। বুঝে না। বড় হলে বুঝবে।" বিল্ডিংয়ের ভিত শক্ত না হলে যেমন বিল্ডিং অল্প কারণেই ধ্বসে পড়ে তেমনি ছোট বয়সে সঠিক জিনিস না শেখালে বড় হয়ে সেটা ঠিক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

▪ বাচ্চা খেলতে গিয়ে সহপাঠীর গায়ে হাত তুলেছে। রাগে অথবা খেলাচ্ছলে। আমরা হাসিচ্ছলে উড়িয়ে দিয়ে বলি, বাচ্চারা একসাথে হলে এমনটা করেই।

কিন্তু এটা যে মোটেই ভাল কাজ নয় এটা তাকে বুঝাতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে তার সহপাঠী তার ভাই, বন্ধু। তার সাথে সবসময় হাসিমুখে কথা বলতে হবে।

▪️ বাচ্চা পরিবারের ছোট বড় সদস্যের গায়ে কিল, ঘুষি দিচ্ছে। আমরা বলি, আরেহ, বাচ্চা মানুষ তো।

বড়দের গায়ে হাত তুলা অন্যায়।কিল, ঘুষি কোন খেলা কিংবা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। ছোট মস্তিষ্কে এই ধারণা দিতে হবে। নয়তো বড় হয়ে সে আপনার সাথেও অনুরূপ আচরণই করবে।

▪️ কোন বাসায় কিংবা দাওয়াতে গিয়ে বাচ্চা অন্যের জিনিস নষ্ট করেছে। কারও গাছের ফুল, পাতা ছিড়েছে। অভিভাবকরা তাতে বিশেষ নজর দেয় না।

কিন্তু তাকে বুঝাতে হবে অন্যের জিনিস নষ্ট করা অন্যায়। তার প্রিয় খেলনা যেমন তার শখের তেমনি অন্যের জিনিসও অন্যের শখের। তাকে বলুন কারও অনুমতি ছাড়া কারও জিনিসে হাত দিতে হয় না।

▪️ বাচ্চা মিথ্যা কথা বলেছে। অভিভাবক হিসেবে কড়া বকা, শক্ত মাইর অথবা এড়িয়ে যাওয়া। এই হয় কাজ।

কিন্তু সত্য তো এটাই, মিথ্যা সকল পাপের জননী। বাচ্চা একটা বয়সে মিথ্যা বলে। কিন্তু এটা যেন তার স্বভাবজাত বৈশিষ্টে পরিণত না হয় সেদিক লক্ষ্য রাখা জরুরী।

▪️ বাচ্চা অল্পতেই চিৎকার করে কথা বলে। এই চিৎকার করে বলা কথাকে স্বাভাবিকভাবে নেই।

কিন্তু তাকে বুঝাতে হবে কথা বলার সময় আস্তে, নরম সুরে বলতে হবে।

▪️ বাচ্চা নিজের জিনিস কাউকে নিতে দেয় না। কিন্তু অন্যের জিনিস দেখে হামলে পড়ে। নিজের খাবার, নিজের খেলনা, নিজের জামা একান্ত ব্যক্তিগত মনে করে।

বাচ্চা যখন এই আচরণ করে তখন তাকে ভাগাভাগি করে নেয়ার গুরুত্ব বুঝান। তাকে বলুন অন্যের সাথে জিনিস শেয়ার করতে হয়। তাহলে আল্লাহ তাকে আরও অনেক অনেক মজার জিনিস দিবেন। বরং তার নিজের হাতে অন্যকে দিতে বলুন।

▪️ আদরের আতিশয্যে বাচ্চা যা চায় তাকে তাই দেয়া হয় তৎক্ষনাৎ। এতে তার ধৈর্য্যধারণ ক্ষমতা কমে যায়।

চাহিদার বস্তুটি সবসময় দিয়ে দিলে প্রয়োজন আর পরিমিতিবোধ তৈরি হয় না।

▪️ বাচ্চাকে রবের প্রতি ভালবাসা শেখান। তাকে বুঝান কিছু চাইতে হলে আগে আল্লাহর কাছে চাইতে হয়।

▪️ বাচ্চা গালি দিয়েছে। কাউকে মুখ ভেংচি দিয়েছে। কারও জামা কাপড় ধরে টান দিয়েছে।

বাচ্চাকে কখনও স্পষ্ট শব্দে "না" বলাটাও জরুরী। তাকে পজিটিভ কথা, পজিটিভ কাজ শেখানো অভিভাবকদের দায়িত্ব।

▪️ কাজ করলে বাচ্চা পড়াশোনা করতে পারবে না। এই ধারণা থেকে বেড়িয়ে বাচ্চাকে তার নিজের কিছু কাজ নিজেকে করতে বলুন। তাকে দিয়ে ঘরের খুব সহজ কিছু কাজ করান। এতে সে একসময় দায়িত্ববান হয়ে উঠবে।

▪️ এছাড়া ছোটবেলা থেকে বাচ্চাকে শেখান ঘরে ঢুকে সালাম দিতে হয়। কেউ কিছু দিলে ধন্যবাদ দিতে হয়। বড়রা কথা বললে মাঝখানে কথা বলতে হয় না। বিনয় বিশ্বাসের ভিত।

সন্তান….
একই সাথে যে সদকায়ে জারিয়া আবার একই সাথে গুনাহে জারিয়া। সন্তানকে শেখানো ভাল কিংবা মন্দ আচরণ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সন্তানের আচরণ ঠিক করার আগে নিজেদের আচরণ ঠিক করা জরুরী।
উদাহরণ হিসেবে আপনি চান আপনার সন্তান সু আচরণের অধিকারী হবে অথচ আপনি হবেন উল্টো এমনটা ঠিক না। মনে রাখতে হবে সন্তান আপনার কথা শুনে নয় বরং সে আপনার নিত্যকার কাজ গুলো দেখে শিখে। তার প্রথম শিক্ষক আপনি।

সন্তান ঘরে ঢুকে তখনই সালাম দিবে যখন আপনি দিবেন। আপনার সন্তান তখনই নামাজী হবে যখন আপনি নামাজ পড়বেন।

আপনি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলেন, শান্ত নাকি কর্কশ কন্ঠে সে তারই অনুকরণ করবে।

আপনার ধৈর্য্য, আপনার শেয়ারিং, কেয়ারিং, আপনার মূল্যবোধকে ধারণ করা মানুষটা আপনার সন্তান।
তাইতো বাচ্চার আচরণ ঠিক করার আগে অভিভাবক হিসেবে বাবা-মায়ের আচরণ ঠিক করা বেশি জরুরী

সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছেঃ মে ২, ২০২৫