ধরুন আপনার বাসায় একটি তিন বছর বয়সে বাচ্চা রয়েছে। হঠাৎ একদিন খেয়াল করলেন ওর সাথে যে বাচ্চাগুলো খেলে তারা ওর তুলনায় কথাবার্তায় অনেক পারদর্শী। বিষয়টি আপনাকে ভাবিয়ে তুলল। আপনার বাচ্চা অন্য বাচ্চাদের মত অনর্গল কথা বলতে পারছে না বা এই বয়সে যতটুকু ভাব বিনিময় করা দরকার, ততটুকু ভাব বিনিময় করতে পারছে না।

বয়স অনুযায়ী শিশুর কথা বলার মাইলস্টোন

আমরা যারা প্রথমবার মা বাবা হই, তারা বাচ্চাদের ধাপে ধাপে বিকাশটা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না। আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারিনা কোন বয়সে বাচ্চার কতটুকু ভাষাগত যোগ্যতা অর্জন করার দরকার। তাই আমাদের জেনে নেওয়া উচিত বাচ্চা কোন বয়সে কতগুলো শব্দ বলার যোগ্যতা অর্জন করবে।

  • ৬ মাসঃ শিশুর বয়স যখন ৬ মাস তখন সে বাবা দাদা এই জাতীয় শব্দগুলো বলার যোগ্যতা অর্জন করবে
  • ৯ মাসঃ ৯ মাসে শিশু তার নাম ধরে ডাকলে সে ফিরে তাকাবে
  • ১৮ মাসঃ শিশুর বয়স ১৮ মাস হবার আগেই সে অন্তত দশটি শব্দ বলতে পারবে
  • ২৪ মাসঃ ২ বছরে পৌঁছানোর আগেই শিশু ৫০ টি শব্দ বলার যোগ্যতা অর্জন করবে
  • ৩৬ মাসঃ ৩ বছর বয়সে শিশু সাধারণ বাক্য বলার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবে

শিশুর ভাষা বিকাশের মাইলস্টোন গুলোকে আরো বিশদভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, আমরা এখানে শুধুমাত্র প্রাথমিক কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলাম।

বয়স অনুযায়ী শিশুর কথা বলার মাইলস্টোন, স্পিচ ডিলে আছে কি না মিলিয়ে নিন

ধাপে ধাপে উন্নতি

শিশুর আশেপাশে সাধারণত যারা থাকেন বিশেষ করে শিশুর মা বাবা বা পরিচর্যা কারী বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন তাদেরকে এ ভাষার বিকাশের সময়টি খুব মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং শিশুকে সাহায্য করতে হবে যেন তার উপযুক্ত বয়সে সে উপযুক্ত ভাষা বিকাশ করতে পারে।

আমরা জানি জন্মের পরেই প্রতিটা শিশুর ধাপে ধাপে যে উন্নতি হয় যেমন কাত হওয়া উপর হওয়া বুঝতে পারা হামাগুড়ি দেওয়া দাঁড়াতে পাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি এগুলো সবগুলোই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। দেরিতে কথা বলা হচ্ছে এই সমস্ত ধাপে ধাপে উন্নতি গুলোর মধ্যে একটি কমন খুব সাধারণ একটি ডেভেলপমেন্টাল delay.

গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ০৫টি বাচ্চার ভেতরে একটি বাচ্চার অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় কথাবার্তায় পিছিয়ে থাকে। কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে আবার আচরণগত সমস্যাও দেখা যায়। যেমন ধরা যায় অনেক বেশি পরিমাণে রাগ করা, জিনিসপত্র ছুড়ে মারা, অন্যদেরকে কামড়, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা, দেয়ালে মাথা ঠকড়ানো ইত্যাদি। এ সমস্ত লক্ষণগুলো আমরা তখনই দেখি যখন এসব বাচ্চারা তাদের মনের ভাব ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা।

বদমেজাজ – কথা বলতে না পারার প্রভাব

মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারায় এসব বাচ্চা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষিপ্ত থাকে। ব্যাপারটি খুব সাধারণ, যেটা আমাদের বড়দের ক্ষেত্রেও হয়। বড়দের মাঝেও এই ধরনের ক্ষিপ্ত ভাব কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যখন আমরা আমাদের মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারি না। আমরা বড়রা হয়তোবা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিন্তু শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন না। ফলে ভাব প্রকাশ করতে না পারার যে ক্ষোভ তার কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেরিতে কথা বলা খুবই সাময়িক এবং সাধারণ সমস্যা, যা থেকে খুব সহজে উত্তরণ হওয়া যায়। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর মা বাবা বা পরিচর্যাকারী (care giver) বা যারা শিশুটির আশে পাশে থাকেন তাদেরকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ স্পিচ থেরাপিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হয় কিছু বাড়তি পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য।

স্পিচ ডিলে যখন বিপদের চিহ্ন

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেরিতে কথা বলা হতে পারে কোন “সতর্কীকরণ চিহ্ন”, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেরিতে কথা বলা বাচ্চাদের অন্য কোন ধরনের বড় সমস্যার একটি উপসর্গ মাত্র।

  • বাচ্চাটি যদি কোন ধরনের স্নায়বিক রোগে ভুগে থাকে
  • বাচ্চাটির যদি কোন কানের সমস্যা হয়ে থাকে
  • বাচ্চাটি যদি অন্য কোন জায়গায় দুর্বলতা থাকে যেমন আলজিব্বায় সমস্যা বা ঠোঁট কাটা থাকা
  • বাচ্চা যদি অটিজম সংক্রান্ত কোন সমস্যায় আক্রান্ত হয়

একারণে একটা বাচ্চা যখন বেড়ে উঠে তখন তার আশেপাশে যারা থাকেন, সেটা বাবা-মা কিংবা মুরব্বী কেউ,তাদের অবশ্যই সতর্কতা ও মনযোগের সাথে বাচ্চাকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কোন ধরনের অস্বাভাবিকতার সন্দেহ হলে অবশ্যই স্পেশালিস্টের পরামর্শ নেয়া জরুরী। কারণ সমস্যার আশু-সনাক্তকরণ সমাধানকে সহজ করে।

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা