অসংখ্য মায়েদের কমন প্রশ্ন,
বাচ্চাকে মোবাইল, টিভি না দিলে ওরা করবেটা কি সারাদিন?
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া অবশ্য মুশকিলের ব্যাপার। কেননা শহরের বেশিরভাগ বাচ্চাই দিনের একটা লম্বা সময় চার দেয়ালের ভেতরে কাটায়।
এই চারদেয়ালে তাদের আর কতই ভালো লাগে! আশেপাশে খোলামেলা জায়গা, বাচ্চাদের পার্কও এভেইলেবল না।
আর মায়েদেরকেও সংসারের কাজ সামলাতে হয়।
কাজ সামলাতে গিয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও মোবাইল, টিভি দিতেই হয়।
কিন্তু ব্যাপার হল এই অল্প সময়টা একসময় আর অল্পতে সীমাবদ্ধ থাকে না।
একটা সময় পর বাচ্চারা মোবাইল, টিভিতে এতই আসক্ত হয়ে পড়ে যে বাচ্চাদের প্রাত্যহিক খাওয়া, ঘুমের রুটিন গুলো এলোমেলো হয়ে যায়। আর বাচ্চার রুটিন এলোমেলো মানে পরিবারের সবার রুটিন এলোমেলো।
একটা গুছানো পরিপাটি রুটিনের মোটামুটি শান্ত বাচ্চাটার ক্রমশ অস্থির, খিটখিটে মেজাজ, অকারণ ট্যানট্রাম, খেতে না চাওয়া, ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়া ইত্যাদি অনেক সমস্যাই হতে পারে এই রুটিন এলোমেলো হওয়ার কারণে।
বাচ্চাকে তাই মোবাইল, টিভিতে আসক্ত না হতে দিতে চাইলে কিছু কৌশল অবলম্বন করাই যায়।
প্রথমত,
আপনার সাজানো, গুছানো পরিপাটি সংসার আপনার বাচ্চাকে দিয়ে দিতে হবে। আপনার মেনে নিতে হবে এই ঘর, এই সংসার আপাতত আমার বাচ্চার দখলে। আপনি রান্না করতে গিয়ে রান্নাঘরের বেশিরভাগ জিনিস খুঁজে পাবেন না। আপনার প্রিয় শো পিস, প্রিয় ক্রোকারিজ বাচ্চার বেদখলে চলে যাবে। প্রিয় চাদরের রঙ পালটে যাবে। প্রিয় সোফায় রঙ, বেরঙয়ের কারুকাজ খুঁজে পাবেন।
আলমারির সবচেয়ে উচু জায়গায় আর জিনিস রাখার স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ফ্রিজের সবজি ফ্রিজে খুঁজে পাবেন না।
আর এসবই মানতে হবে হাসিমুখে।
দ্বিতীয়ত,
আপনার নিজের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। বাচ্চার সামনে বসে দীর্ঘসময় মোবাইলে কোন ভিডিও দেখা যাবে না। দীর্ঘসময় টিভি দেখা যাবে না।
বাচ্চারা অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের অনুকরণ করে।
তাই বাচ্চাকে কন্ট্রোল করার আগে নিজেদেরকে কন্ট্রোল করতে হবে।
তৃতীয়ত,
বাচ্চাকে সময় দিতে হবে। বাচ্চার কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কখনও কখনও বাচ্চার খেলার সাথী হতে হবে। সময় আর সুযোগ পেলেই বাচ্চাকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে হবে।
চতুর্থত,
বাচ্চাকে তার বয়স অনুযায়ী কিছু খেলনা এবং বই দিতে হবে। বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে মাঝেমধ্যে খুব মনযোগ নিয়ে তার সাথে আপনার পড়তে বসতে হবে।
আরেকটা জিনিস সম্ভব হলে বাচ্চাদেরকে তার সমবয়সীদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিন।
সর্বশেষ, গুরুত্বপূর্ণ যে কথা না বললেই নয়। রান্নাবান্না ততটুকুই করতে হবে যতটুকু হলে চলে যায়। তিনবেলা আয়েশ করে রান্না না করে এক অথবা দুইবেলায় রান্না শেষ করা। বাচ্চার খাবার প্রস্তুত নিয়েও বাড়াবাড়িতে না যাওয়া। খাবার দাবারের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরও বুঝাতে হবে বাঁচার জন্য মানুষ খায়, খাওয়ার জন্য বাঁচে না।
মোটকথা ঘর এবং বাহির সব মিলিয়ে বাচ্চাকে একটা বাচ্চা বান্ধব পরিবেশ দিতে হবে। কথায় কথায় তাকে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে তাকে তার মতো চলতে দিন। এতে বাচ্চা নিজেও বিরক্ত হবে না। আপনাকেও বিরক্ত করবে না। বাচ্চা শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক দিয়েই উপকৃত হবে।
সতর্কতা:
দীর্ঘ সময় মোবাইল এবং টিভি বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই চেষ্টা করুন বাচ্চাকে যথাসাধ্য এই জিনিস গুলো থেকে দূরে রাখতে। বাধ্য হয়ে যদি দিতেই হয় তাহলে এমন কিছু দিন যাতে বাচ্চা কিছু ভালো জিনিস শিখতে পারে। মোবাইলে, টিভিতে কি দেখছে সেটাও খেয়াল রাখুন। বাচ্চাকে সময় বেধে দেয়া যায়। যে ঠিক এতসময় পর মোবাইল দিয়ে দিতে হবে।
কেননা যত যাই বলুন বাচ্চাকে আপনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না আসলে। কারণ বাচ্চা নিজে একটা স্বাধীন সত্তা। খুব বেশি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও তাই সমস্যা।
তবে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত চিন্তা, নিয়ন্ত্রিত কাজ একটা সুস্থ, স্বাভাবিক সময় উপহার দিতে পারে।
বাচ্চা বেড়ে উঠুক খেলায়, গল্পে, ছুটাছুটিতে। একঘেয়ে ডিভাইস চালিয়ে বাচ্চা না হারাক তার শৈশব।