"বাচ্চা খায় না"……
বাচ্চা জন্মের পর থেকে এই শব্দটা বাচ্চার সামনে আমরা কতবার উচ্চারণ করি?
বাচ্চা যতবার খায় না তারচেয়ে অনেক অনেক বেশিবার।
প্রতিবার খাওয়ার সময়,….কারও সাথে দেখা হওয়ার সময়,…. ফোনে কথা বলার সময়,…. আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে,…. বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার সময়,…. বন্ধুদের সাথে খেলার সময়,….
এমনকি বাচ্চা ঘুমানোর সময়ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন " বাচ্চা খায় না"।
বাচ্চা কি খায় না? ডিম খায় না, দুধ খায় না, কলা খায় না, পেট ভরে ভাত খায় না…. বাচ্চা একেবারে কিছুই খায় না।
এইযে আপনার বাচ্চা খায় না, বাচ্চা খেতে চায় না, তার খাবারে এত অনীহা…..
নিজেকে নিজেই একবার প্রশ্ন করুন!
বাচ্চার এই না খাওয়ার জন্য অভিভাবক হিসেবে আমি-ই দায়ী না তো?
বাচ্চার কোন শারীরিক সমস্যা মনে হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান, ওষুধ খাওয়ান।
কিন্তু এর বাইরে তার একটা মাইন্ডসেট আপনি ছোটবেলা থেকেই সেট করে দিচ্ছেন।
সেটা হল "বাচ্চা খায় না" শব্দটা।
"বাচ্চা খায় না" কথাটা ছোটবেলা থেকে তার মগজে ঢুকে গিয়েছে। তার অবচেতন মন খুব সচেতনভাবে স্থির করে নিয়েছে "বাচ্চা খায় না"।
বাচ্চা ধরেই নেয়, অবশ্যই আমি খাই না। বাচ্চার অবুঝ মন বুঝে যায় সে খাবে না, সে খেতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক।
আপনার কথার প্রভাব, কাজের প্রভাব, বাচ্চার প্রতি আপনার আচরণের প্রভাব অবশ্যই বাচ্চার উপর পড়বে।
আপনার কথা তার মন এবং মগজে আজন্মকাল স্থায়ী হয়ে বসে থাকবে।
আপনি ভাবতেও পারবেন না আপনার একটা কথা, একটা ইতিবাচক মন্তব্য আপনার সন্তানকে কোথায় পৌঁছাতে পারে। আবার আপনার নেতিবাচক মন্তব্য গুলোও তার জীবনে ঠিক তেমন প্রভাব ফেলবে।
তাই জন্মের পর থেকেই " বাচ্চা খায় না" শব্দটাকে আপনার কথার অভিধান থেকে বাদ দিন।
বাচ্চার সামনে তার খাওয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন।
এতে যা হবে….
প্রথমত আপনার নিজের মধ্যে সন্তুষ্টির মনোভাব তৈরি হবে। যেটা আপনার সন্তানের মধ্যেও সন্তুষ্ট বোধের জন্ম দিবে।
আপনি যখন বলবেন, মাশাআল্লাহ। আমার বাচ্চাটা কি সুন্দর করে খেতে পারে। সে ধরে নিবে সে এই খাওয়ার কাজটায় পারদর্শী। খাবারকে তাই সে আগ্রহ নিয়ে খাবে।
তার সামনে যেকোন খাবার এলে সে খুতখুত করবে না। এটা খাব না, ওটা খাব না বলে আপনার মাথায় পোকা উঠাবে না। সব ধরনের হালাল খাবার খেতে পারা যে ভালো কাজ এটা সে শিখবে ছোটবেলা থেকেই।
আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েও খাবারে ভুল খুঁজবে না।
একটা ইতিবাচক আচরণ কখনও একটা পরিবার, সমাজ, দেশকে বদলে দিতে পারে। ইতিবাচক শব্দকে ব্যবহার করতে পারলে নেতিবাচকতা বাচ্চার মন, মগজে ঢুকবে না।
অভিভাবক হিসেবে সব ধরনের নেতিবাচক শব্দ বাচ্চার সামনে পরিহার করা একান্ত কর্তব্য। সেইসাথে "বাচ্চা খায় না" নামক মুখস্থ বিদ্যাটাও আপাতত বাদ দিন।