আপনি চান আপনার সন্তান দ্বীন এবং দুনিয়া দুইদিক দিয়েই সফল হোক।
পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানের দুনিয়াবি সফলতার জন্য যা যা করা লাগে তার সব ব্যবস্থাই মোটামুটি করে ফেলেছেন। অথবা কিভাবে আরও ভালো কিছু তাকে দেয়া যায় সেই চিন্তাই করছেন।
যেমন একটা ভালো স্কুল, ভালো টিচার, ভালো পরিবেশ, ভালো খাবার দাবার, ভালো চিকিৎসা ইত্যাদি।
নিজের সমস্ত পরিশ্রম, স্বপ্ন কেবল সন্তানের উন্নতি।
পিতা-মাতা হিসেবে এটাই তো স্বাভাবিক। পিতা-মাতার জীবনে সন্তানের মঙ্গল চিন্তার বাইরে আর কিছুই থাকে না।
সন্তানের দুনিয়াবি উন্নতির জন্য যা যা করা দরকার তা তো করলেন ঠিক আছে।
কিন্তু তার দ্বীনি উন্নতির জন্য কি করলেন?
উত্তর হিসেবে….
যদি উপযুক্ত পরিবেশ থাকে তাহলে তাকে মক্তবে পাঠালেন। মক্তবে আরবিটা মোটামুটি শিখল।
ব্যস, সন্তানের দ্বীনি শিক্ষাও হয়ে গেল।
আর শহুরে আধুনিক জীবনে মক্তব না পাওয়া গেলে বাসায় হুজুর রাখলেন।
আরবিটা মোটামুটি শিখল, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন টুকটাক শিখলো।
ব্যস, হয়ে গেলো দ্বীনি শিক্ষার ভিত।
তারপর স্কুলের পড়াশোনার চাপে পড়ে বাচ্চাটা একসময় কোরআন তেলাওয়াত ভুলতে শিখলো। নামাজের অনেক কিছুই ধীরে ধীরে ভুলে যেতে লাগলো।
যদিও ছেলে বাচ্চাকে শুক্রবার দিন নিয়ম করে জামাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম… শুক্রবারে জামাতে হাজিরা দিলেই দ্বীন পালন হয়ে যায়।
একসময় ঠিক এই সন্তান যদি নামাজ না পড়ে,….
কোরআন তেলাওয়াত না পারে….
গোসলের ফরজ বিধান না জানে…..
কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম সেটা না জানে….
কিন্তু সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায়।
পিতা-মাতা হিসেবে আমরা সন্তানকে সফল বলি আর নিজেদেরকেও সফল পিতা-মাতা বলি…..
ঠিক এই সন্তানই যদি শেষ বয়সে পিতা-মাতার হক আদায় না করে, হালাল-হারাম বেছে না চলে পিতা-মাতা হিসেবে আমরা হাপিত্যেশ করি।
কিন্তু এই দায়টা কার?
শুধুই সন্তানের?
এই যে সন্তান জানে না জানাজার নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়….
পিতা-মাতার হক কিভাবে আদায় করতে হয়….
পিতা-মাতার জন্য কিভাবে দোয়া করতে হয়…..
কেন জানে না সে?
কারণ আপনি তার দুনিয়ার ভিত মজবুত করেছিলেন। দ্বীনের ভিত নয়।
নিশ্চয়ই বলবেন…..
আমি তাকে নামাজ আদায় করতে বলতাম…..
কোরআন তেলাওয়াত করতে বলতাম…..
শেষ বয়সে এসে সন্তানকে পর্দা করতেও বলতাম…..
তাকে আমি আল্লাহর পথে চলতে বলতাম। বলতাম তো…
হ্যাঁ, শেষ বয়সে মোটামুটি সব ধরনের বাবা-মা ই সন্তানকে আল্লাহর দেখানো পথে চলতে বলে। কারণ তারা তখন সত্যিই অনুধাবন করে সময় শেষ হতে চলেছে।
কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে…..
তার শেখার বয়সটা ছিল শিশুকাল। যখন সে আপনার করা প্রতিটা কাজের অনুকরণ করতো। সন্তান কাজের অনুকরণ করে, কথার নয়।
পিতা-মাতা হিসেবে আপনি কখনও তার সামনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেননি।
অথচ আপনি চান আপনার সন্তান পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুক।
আপনার সন্তান তার শিশুকাল, কৈশোর আর যৌবনে আপনাকে কখনও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে দেখেনি।
সে সালাতের গুরুত্ব কিভাবে বুঝবে?
সে তার পিতাকে কখনও নজরের হেফাজত করতে দেখেনি, সে তার মাকে কখনও পর্দা করতে দেখেনি।
সেই ছেলেটা কিভাবে বড় হয়ে নজরের হেফাজত করবে?
সেই মেয়েটা কিভাবে বড় হয়ে পর্দাকে সম্মান করবে? নিজে পর্দা করবে?
সে তো আপনাকেই অনুকরণ করেছে…..
আপনি তাকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু আপনি তাকে রাসূলের আদর্শ বুকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখাননি।
সে ছোটবেলা থেকে আপনাকে রিলস, টিকটক, সিনেমা, গান শুনতে দেখেছে।
সে কিন্তু আপনাকে হারাম ত্যাগ করতে দেখেনি। বরং হালাল ত্যাগ করে হারামকে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখেছে।
সেও তাই একদিন আপনার মতোই হালাল ত্যাগ করেছে। আর হারামেই আরাম খুঁজে বেড়িয়েছে।
আপনি করলার বীজ বপন করে মিষ্টি ফল পেতে চাচ্ছেন। আপনি শেষ বয়সে এসে চাচ্ছেন আপনার সন্তান আল্লাহকে ভালবাসুক।
বলা হল, সন্তান এবং সম্পদ পরীক্ষার উপকরণ। আপনি পরীক্ষায় ভুল উত্তর লিখে গোল্ডেন প্লাস কামনা করলে দায়টা আপনারই।
সামান্য একটা উদাহরণ….
একজন বেপর্দা মেয়ে চার জন পুরুষকে জাহান্নামে নিতে পারে। কারা এই চারজন? পিতা, স্বামী, বড় ভাই এবং বড় ছেলে।
এই বিধান কিন্তু আপনা আপনি আসে নি। আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
বুঝেন তাহলে দ্বীন শেখা এবং শেখানোর গুরুত্ব।
আপনার সন্তান আপনার জন্য একই সাথে সদকায়ে জারিয়া আবার একইসাথে গুনাহে জারিয়া।
তার ভালো আমল গুলো যেমন আপনার আমলনামায় যোগ হবে। তেমনি খারাপ আমল গুলোও আপনার আমলনামায় যোগ হবে।
কারণ রব আপনার সন্তানকে আপনার কাছে দিয়েছিল আমানত স্বরূপ।
আপনি আমানত রক্ষার পুরস্কার যেমন পাবেন। ঠিক তেমনি আমানতের খিয়ানত করার শাস্তিও পাবেন।
এখন আপনি পুরস্কার চান নাকি শাস্তি চান সেটা নিতান্তই আপনার ইচ্ছা।