শিশুর শারীরিক-মানসিক বৃদ্ধিতে খেলা ও খেলনার ভূমিকা

মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়া ছোট্ট এক প্রাণ। বাবা-মা এর কাছে যেন এক জীবন্ত খেলনার নাম। যার হাসিতে হাসি,কান্নায় ভাসি।

জীবন্ত সেই খেলনা পুতুলের হাতে ঠিক কি কি খেলনা তুলে দেয়া যায় তার কোন কূলকিনারাই যেন বাবা-মা খুঁজে পান না।
হাতের কাছে যাই পায়, দামি অথবা কমদামি,সাধ্যের মধ্যে অথবা সাধ্যের বাইরে সব একসাথে নিয়ে এসেও মনে হয় আরও কিছু যদি আনা যেত!

বাচ্চা খেলছে।বাবা-মার চোখের প্রশান্তি।এরচেয়ে সুন্দর দৃশ্য জগতে আর কয়টা হয়। সন্তানের জন্য তাই ঠিক কি কি খেলনা কেনা যায় সেটা নিয়েও চলে গবেষণা। কোনটা শিক্ষামূলক,কোনটা শরীর আর মনের জন্য বিশেষ উপকারী ইত্যাদি কত শত প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য খেলা এবং খেলনা খুব দরকারী জিনিস বৈকি। কিন্তু বাচ্চার খেলনার বস্তু আসলে কি হওয়া দরকার। প্রশ্ন যখন এখানে।আসুন উত্তর খুঁজি মনখুলে….

সবকিছুই বাচ্চার কাছে খেলনা

প্রথমত বাচ্চার আশেপাশে যা থাকে তার সবকিছুকেই বাচ্চা নিজের খেলনা ভাবতে পছন্দ করে। আপনার কাছে যেটা পেয়াজ, রসুন, আদা, লতা, পাতা, ঘাস, হাতুড়ি, পাতিল, চামচ, বোতল, টিস্যু বক্স ইত্যাদি।বাচ্চার কাছে সেসবই একেকটা খেলনা।কারণ তার চোখে সবকিছুই নতুন। বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক এই খেলনার কিন্তু কোন বিকল্প নেই।

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা তার সবই যেন খেলনা।"

খেলনা ও বয়সের সম্পর্ক

দ্বিতীয়ত বাজারে বাচ্চার বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনতে পাওয়া যায়। বাচ্চাকে সেসব খেলনা কিনে দেয়া যায়। এখানে বয়স কিন্তু একটা লক্ষ্যণীয় বিষয়। অনেক সময় শখের বশে চার বছর বয়সী শিশুর খেলনা আমরা চার মাস বয়সী শিশুর জন্য কিনে ফেলি। এতে কি হয়! বাচ্চা অল্প সময়ের ব্যবধানে জিনিসটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বাচ্চার যতদিনে সেই খেলনা নিয়ে খেলার বয়স হয় ততদিনে জিনিসটা পুরাতন হয়ে যায়। তাই বাচ্চার বয়স অনুযায়ী খেলনা কিনুন।

টাকার অপচয় হবে না আবার বাচ্চা সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটা হাতে পাবে।

খেলনা হিসেবে বই

বাচ্চাকে বই কিনে দেয়া যায়। দোকান থেকে শুরু করে ট্রেন, বাস থেকে শুরু করে ভ্যান সব জায়গাতেই সব রকম দামের বই পাওয়া যায়। বাচ্চা খেলতে খেলতে বই চিনতে শিখছে। বই চিনতে গিয়ে বইয়ের প্রতি, পড়াশোনার প্রতি ভালবাসা জন্মাচ্ছে। কি দারুণ না!

রিলেটেড লেখাঃ শিশুদের যেভাবে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলবেন

প্রকৃতির সান্নিধ্যে খেলা

বাচ্চাকে ঘরের জিনিস এবং বাজার থেকে খেলনা কিনে দিলেও বাচ্চাকে মাটি, ধুলাবালি নিয়ে খেলতে দেয়াটা কিন্তু খুব জরুরী। অনেক বাবা-মা যেটা করতে দেন না। মনে করে নোংরা,ধুলাবালি গায়ে লাগবে। অথচ বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি আসাটা অত্যন্ত জরুরী।

মাটিতে খালি পায়ে হাটা সুন্নত। গবেষকরা বলেন মাটিতে খালি পায়ে হাটলে মানসিক বিষাদ দূর হয়।

খেলার সহচরও দরকার

বাচ্চাকে খেলনা দিয়েই কিন্তু শেষ হয় না। বাচ্চার খেলার জন্য একজন সঙ্গীও প্রয়োজন। বাচ্চাকে সামাজিক করার জন্য, তার একাকিত্ব দূর করার, মানসিক গঠন সুন্দর হওয়ার জন্য এটা জরুরী। বাবা-মা হিসেবে কখনও আপনি তার খেলার সঙ্গী হোন তো কখনও তার বয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিন।

থাক না আপনার গোছানো বাসা,বাচ্চার গোছানো কাপড় একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাচ্চার শরীর এবং মনের গঠন ঠিকঠাক হচ্ছে এই ঢেড়।

সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছেঃ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫