আচ্ছা আমরা কি জানি আমাদের মডার্ন স্কুল সিস্টেমটির বয়স যে মাত্র ১৫০+ বছর?

তার আগে তাহলে কীভাবে মানুষ শিক্ষিত হতো?

– তার আগে মানুষ হাজার বছর ধরেই মূলত হোমস্কুলিং করে আসছে।

আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে আমাদের “মডার্ণ স্কুল সিস্টেম” এর যাত্রা শুরু হয়। যেখানে ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারদের মত বাচ্চাদেরকে ব্যাচ করে নির্দিষ্ট ক্লাসে রেখে নির্দিষ্ট বিষয় সেই নির্দিষ্ট বয়সের মাঝেই শেষ করতে হবে। যেখানে ৬-১৮ বয়সের বাচ্চারা আসলে তাদের শৈশব কৈশর একটা গন্ডির ভেতর থেকে, গৎবাধা নিয়ম কানুনের মাঝে নিজেদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে থাকে এবং প্রথম হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লম্বা একটা সময় ব্যয় করে।

সেই প্রথম হওয়া রেজাল্ট আসলে বাস্তব জীবনের জন্য কতোটা প্রয়োজনীয়?

এরপর হঠাৎ করে স্কুল –কলেজের গন্ডী পার করে বাস্তব জীবনের কাজকর্মে এসে পড়লে তারা বুঝে উঠে না কোথা থেকে কীভাবে জীবন শুরু করবে! কারন ততোদিনে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গিয়েছে যা তারা স্কুলের ইঁদুর দৌড়ে থাকায় খেয়াল রাখতে পারেনি! এছাড়াও লম্বা একটা সময় স্কুল – কোচিং এ ছুটতে ছুটতে প্রয়োজনীয় লাইফ স্কিল গুলোও সঠিকভাবে শিখে উঠেনি! এখন কী তবে আবার শুরু থেকে শুরু করবে? সেটাই বা কোথা থেকে হবে?

১২টা বছর পার করার পর সন্তানদের যদি কুকিং স্কিল না থাকে, মানি ম্যানেজমেন্ট না বুঝে, অর্গানাইজিং স্কিল না থাকে, একটা ল্যাঙ্গুয়েজের উপর পাকাপোক্ত জ্ঞান না থাকে, নীতি নৈতিকতা জীবনে কীভাবে কাজে লাগে/বাস্তবায়ন করবে সেটা না বুঝে, সফট স্কিলস না বুঝে তাহলে এতো গুলো বছর আসলে বাচ্চাদের আমরা কি শেখালাম? পাই/পীথাগোরাস এর উপপাদ্য? নেক্সট জেনারেশান কে বাস্তব জীবনের জন্য উপযুক্ত করে বেড়ে তুলতে স্কুলিং এর পাশাপাশি বিকল্প চিন্তা করার জরুরত কি আমরা বুঝতে পারছি?

আমরা এখনো বোকার মত সব দায়িত্ব স্কুলের উপর ছেড়ে দিয়ে বসে আছি কিন্তু নিজেদের জেনারেশান দিয়ে আমাদের বুঝাটা খুব জরুরি ছিলো যে, স্কুল কলেজের ১২-১৫ বছরে আমরা একটা বিরাট সময় খরচ করে এসেছি এমন এক কারিকুলাম অনুসরন করে, যেটা প্র‍্যাক্টিক্যাল লাইফের সাথে সম্পর্কহীন!

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্কুলিং সিস্টেমের সীমবদ্ধতার কারণে প্রচলিত স্কুলিং এর পাশাপাশি হোমস্কুলিং একটা ভাল অপশন, তবে আমি কখনোই একমাত্র অল্টারনেটিভ বলতে পারবো না। কারণ, আমাদের পরিবেশ- সমাজ এবং মানুষের মন মানসিকতা এখনো “অনলি হোমস্কুলিং” ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠেনি।

তবে যারা স্রোতের বিপরীতে হেটে দারুন কিছু পরিবর্তন আনার মত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা সফল হবেন ইন শা আল্লাহ। এবং যারা নানা কারনে স্কুলিং ছাড়া অল্টারনেট কোন অপশানে যেতে পারছেন তারা স্কুলিং এর পাশাপাশি বাচ্চাদেরকে প্র্যাক্টিক্যাল লাইফের জন্য বিভিন্ন স্কিল গ্রো করার পেছনে সময়, শ্রম এবং অর্থ একদম ছোট থেকেই ইনভেস্ট করা শুরু করতে পারেন।

স্কুলের বিপক্ষে লেখা আমার উদ্দেশ্য না, আমাদের সিস্টেমের কারনে স্কুলিং টা প্র‍্যাক্টিক্যাল লাইফ বেইজড হয়না। ফিনল্যান্ড বা জাপানের স্কুলগুলোতে ছোট থেকেই এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যেন স্কুলের গন্ডী পার হতে না হতেই তারা নিজেদেরকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

আপনি যদি সন্তানের স্কুলিং নিয়ে সচেতন হোন, তাহলে নিশ্চয় আপনার চোখে পড়েছে আপনার লাইফস্টাইলের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় স্কুলিং এর মাধ্যমে চলে আসে। আমরা চাইলেও স্কুলিং সিস্টেমে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে পারিনা কেননা আমাদের “সিস্টেমের” ভেতরই অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

তবে, একজন প্যারেন্ট হিসেবে যেকোন সীমাবদ্ধতা কাটাতে আপনাকেই সক্রিয় হতে হবে, সন্তানের জন্য সময়, অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে।

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা