বসতে শেখার পর অনেক বাচ্চারাই ইংরেজি ডব্লিউ এর মতো করে দুই পা শরীরের দুইদিকে দিয়ে বসা শুরু করে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। হাঁটু ভেঙ্গে বসে দুই হাঁটু বাঁকিয়ে শরীরের দুই পাশে দিয়ে বসলে অনেকটা ডব্লিউর (W) মতো বসার পজিশন হয়। হাঁটু আর ঊরু অনেকসময় একসাথে লাগানো অবস্থায় থাকে, আবার ছড়িয়ে বসতে পারে। বাচ্চার কিছু সময়ের জন্য এরকম করে বসাটা কোন সমস্যা না। এটা তখনি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে যখন বাচ্চা অনেক লম্বা সময়ই ধরে এভাবে বসে থাকবে অথবা তার বসার ভঙ্গি সবসময়ই এরকম হবে। অনেক বাবা মায়েরা জানেন না, এইভাবে বসা বাচ্চাদের জন্য মোটে ঠিক নয়।
কেন এভাবে বসা উচিত নয়?
ডব্লিউ পজিশনে বসলে বাচ্চাদের কোমর ও পায়ের মাংসপেশি ছোট ও শক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে বাচ্চাদের কাজে সমন্বয়, ব্যালেন্সে সমস্যা তৈরি হয়, গ্রস মোটর (Gross Motor) ডেভেলপমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। এই পজিশনে বাচ্চার কোমরের হাড় নড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে ইতিমধ্যে যাদের হিপ ডিসপ্লেসিয়া (Hip Dysplasia) আছে।
এভাবে বসা বাচ্চারা সহজে তাদের শরীরের উর্দ্ধভাগ ঘুরাতে সক্ষম হয় না। এতে এক হাত ঘুরিয়ে অন্যপাশে এনে কাজ করা, বা দুই হাতে কাজে লাগাতে হয়, এমন কাজ বাচ্চারা সহজে করতে পারে না। এটা পরবর্তীতে তাদের লেখার দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি স্কুলে টেবিলে বসে যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলোও প্রভাবিত করতে পারে।
বাচ্চাদের এই পজিশনে বসা তাদেরকে নিজেদের শরীরের ওজনকে এক পাশ থেকে আরেক পাশে নিতে পারার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বিশেষ করে বাচ্চারা যখন দাঁড়ানো শুরু করে কিংবা দৌড়ানো বা লাফ দিতে চেষ্টা করে, তখন এটা তাদের জন্য সমস্যাসংকুল হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, এভাবে বসা বাচ্চারা তাদের শরীরের ডানদিকে থাকা জিনিস কেবল ডান হাত দিয়ে ধরতে চায়, এবং বাম দিকে থাকা জিনিস কেবলই বাম হাত দিয়ে ধরতে চায়। এতে এক হাত দিয়ে শরীরের অন্য পাশের জিনিস ধরায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ফলে পরবর্তীতে হাতের কর্ম সমন্বয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ডব্লিউ পজিশনে বসা বাচ্চাদের ট্রাঙ্ক মাসল (Trunk muscle) ডেভেলপ করে না। এরকম বাচ্চারা নিজেরা সোজা হয়ে বসার জন্য অন্য কিছুর উপর ভর দেয়।
কিভাবে এইভাবে বসা দূর করা যায়?
বাচ্চাদের কোন কিছু করতে সরাসরি না করে লাভ হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তখন বারবার “এইভাবে বসো না” বলাটা কাজে দেয় না। এর চাইতে ভালো হয়, যদি বাবা মায়েরা বাচ্চাদের কিভাবে বসতে হবে, সেটা বলে দেন। ডব্লিউ পজশন বসার বিকল্প হিসেবে বাচ্চাকে যেভাবে বসতে বলতে পারেনঃ
- হাঁটু ভাজ করে কোনাকুনি করে বসা(Criss-cross)
- দুই পা একদিকে দিয়ে বসা
- সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসা
- ছোট টুলের উপর বসা
এইসব বসার ধরনগুলো বাচ্চাকে দুই হাত একই সাথে শরীরের দুই পাশের স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। একই সাথে তারা শরীরের ভর সহজেই এক পাশ থেকে অন্য পাশে নেয়া শিখে যাবে। সোজা হয়ে বসার জন্য তারা এতে সহজে তাদের পিঠ ও পেটের মাংসপেশিকে ব্যবহার করতে পারবে।
বাবা-মায়েদের জন্য টিপস
- যখনই দেখবেন বাচ্চা ডব্লিউ পজিশনে বসে আছে, তখনই তা সংশোধনের ব্যবস্থা করুন। বাচ্চাকে ঠিকভাবে বসতে ক্রমাগত উৎসাহ দিন। এভাবে বারবার ঠিক করে দেয়াতে প্রচুর ধৈর্য্যের প্রয়োজন।
- বাচ্চাকে সঠিকভাবে বসার অন্যান্য অপশনগুলো জানান যে সে কিভাবে বসতে পারে আর সঠিক অপশনগুলোর ভেতর তার পছন্দেরটা বেছে নিতে উৎসাহী করুন।
- তারপরও যদি ডব্লিউ পজশনেই বসতে চায়, ছোট টুল রাখুন সাথে। তাতে বসতে বলেন, এতে অন্তত পা ঝুলিয়ে বসতে পারবে।
- এমন সব খেলা খেলতে বাচ্চাকে উৎসাহ দিন যাতে সে তার চার হাত পা ব্যবহার করতে পারে। যেমন ছোট টানেলের ভেতর দিয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে খেলা।
- কিছু বেয়ে উঠতে হয়, এমন খেলা বাচ্চাদের পায়ের পেশীকে মজবুত করে।
- পা ও কোমরে হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে মাংসপেশি সুগঠিত হবে।
যেসব বাচ্চারা শুরু থেকেই এভাবে বসে অভ্যস্থ, তারা হয়ত বারবার এভাবেই বসতে চাইতে পারে। এমনকি বাবা-মায়েরা বলে দেবার পরও তারা অভ্যস্থতার জন্য এভাবে বসতে পছন্দ করতে পারে। কিন্তু এটা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ন বাচ্চাদের ঠিকভাবে বসার জন্য বারবার মনে করিয়ে দেয়া, এবং একই সাথে কোনভাবে তারা বসতে পারে সেটার নির্দেশনা দেয়া। এভাবে বাচ্চাদের বসার ভঙ্গি ঠিক করে দিয়ে বাবা-মায়েরা তাদের ঠিকমতো বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারেন।
উল্লেখ্য- সদ্য হামাগুড়ি বা সদ্য হাটতে শেখা বাচ্চা কিছুটা এভাবে বসতে পারে৷ চিন্তিত না হয়ে বারবার ঠিক করে দিতে হবে।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবেরিনা সালাম সারাহ
MBBS, PGT (Pediatrics)
Medical Officer, Pediatrics & Neonatology Department, Bangladesh Specialized Hospital
সম্পাদনায়: হাবিবা মুবাশ্বেরা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ব্রিলিয়াঞ্জে টুইশন ডট কম