বাচ্চা কি খাবার জন্য প্রস্তুত? সাইন- কি দেখে বুঝবেন?
- বাচ্চার বয়স প্রায় ছয় মাস।
- হাই-চেয়ারে কোন সাপোর্ট ছাড়া বসতে পারে।
- নিজের মাথা কন্ট্রোল করতে পারে ভালোমতো। পরিষ্কারভাবে মাথা নাড়িয়ে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
- হাত বাড়িয়ে খাবার ধরতে পারে এবং মুখে নিতে পারে।
অন্যান্য- বাচ্চা খাবারের প্রতি আকর্ষন দেখাবে।
- আপনি খাবার চাবানোর সময় আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সাধারনত বাচ্চার চার থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে (যেহেতু এক একবাচ্চার মাইলস্টোন এক এক সময়) আপনি এই সাইনগুলো দেখতে পারেন। এগুলো একাধিক একসাথে থাকতে পারে। প্রথম ছয় মাস বাচ্চার একমাত্র খাবার যা লাগে, তা হল মায়ের বুকের দুধ বা বাচ্চাদের জন্য তৈরি ফর্মূলা।
কেন ছয় মাসের আশেপাশে?
এ সময় বাচ্চার শরীরে যে আয়রন রিজার্ভ থাকে, তা শেষ হয়ে আসে। অবশ্যই এসময় শিশুকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে, যাতে করে সে এনিমিয়ায় আক্রান্ত না হয়।
কোন ধরনের খাবার দিয়ে শুরু করবেন?
৬-৯ মাসঃ শুরু করুন বুকের দুধ দিয়ে, তারপর বাইরের খাবার দিন।
৯ মাস বা তার বেশীঃ আগে বাইরের খাবার দিন, তারপর বুকের দুধ।
তিন ধরনের গ্রুপে ভাগ করা যায় বাচ্চার খাবারঃ
- মাংশ বা মাংশের বিকল্প খাবার, এবং আয়রন সমৃদ্ধ বেবি সিরিয়াল।
- শাকসবজি।
- ফলমূল।
প্রথম থেকেই বিভিন্ন টেক্সচারের (পিউরী, কাঁটা চামচে ম্যাশ করা, ছোটো ছোটো টুকরা করা) খাবার দিন বাচ্চাকে। প্রথম মাস থেকেই বাচ্চাকে বিভিন্ন টেক্সচারের খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে তার এক বছর বয়স থেকেই সে বাড়ীর অন্যান্যদের সাথে তাদের জন্য বানানো খাবার খেতে পারে।
খাবারের পরিমাণ এবং কত বার দিবেন?
আপনার শিশু যদি শুরুতেই পরিমাণে খুব কম খায়, দুঃশ্চিন্তা করবেন না। বাচ্চার পাকস্থলী ছোটো থাকে শুরুতে, পরে তা নিজ থেকেই বড় হবে। বাবা-মা হিসেবে আপনার কাজ হল খাবারের গুনগত মান ঠিক রাখা।
মনে রাখতে হবে-
- বাবা-মা খাবারের গুনগত মান অক্ষুণ্ণ রাখবেন, কতটুকু খাবে বাচ্চা তার পরিমাণ ঠিক করবে।
- বাচ্চার রুচিকে সম্মান করুন।
- যতক্ষণ বাচ্চা খেতে চায়, ততক্ষণ খাওয়ান। না চাইলে বন্ধ করুন।
- বাচ্চাকে জোর করে খাওয়াবেন না।
কিভাবে বুঝবেন বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেয়েছে?
বাচ্চা মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানাবে।
চামচ দূরে ঠেলে সরিয়ে দেবে।
সে নিজেই খাওয়া বন্ধ করবে।
খাবারে এলার্জি প্রতিরোধ করতে হলে
অনেক বাচ্চারই এক এক ধরনের খাবারে এলার্জি থাকে। কোন বাচ্চার ডিমে এলার্জি থাকে, কারো বাদামে থাকে, আবার কারো দুধে থাকতে পারে। এ থেকে প্রতিরোধ করতে হলে-
- নতুন খাবার একটা করে শুরু করুন। কয়েক রকমের খাবার একসাথে দেবেন না শুরুতেই। প্রথমেই খিচুড়ি খাওয়াতে যাবেন না।
- একটা খাবার শুরু করার দুই-তিন দিন পর অন্য খাবার দিন। যাতে কোন খাবারে এলার্জি থাকলে সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়।
কিভাবে বুঝবেন এলার্জি আছে?
চামড়া ফুলে ওঠা, বমি, স্টুলের সাথে রক্ত, কফ-কাশি, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা।
পরিবারে কারো যদি এলার্জি থেকে থাকে, তবে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন এলার্জি জনিত ঝুঁকি এড়াবার জন্য। তবে এ ভয়ে বাদাম, ডিম, মাছ শুরু করা থেকে বিরত থাকবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা বাচ্চাদের পিনাট-বাটার দিতে বলেন, যাতে করে বাদামে এলার্জি থাকলে সেটা আগে থেকে বোঝা যায়।
বাড়িতে তৈরি পিউরী
সাবধানতাঃ বাচ্চার খাবারে চিনি, লবণ, অধিক তেল-মশলা যোগ করবেন না। এতে খাবারের প্রকৃত স্বাদ বাচ্চা পাবে না।
খাবার কেনা এবং তৈরী করা
- ফ্রেশ খাবার অথবা ফ্রোজেন ফ্রেশ খাবার বেছে নিন।
- খাবার ধুয়ে, চামড়া ছাড়িয়ে, খোসা ছাড়িয়ে নিন।
রান্নাঃ
খাবারের সর্বোচ্চ ভিটামিন এবং মিনারেল নিশ্চিত করতেঃ
- শাকসবজি এবং ফল-মূল খুব অল্প পরিমাণ পানিতে সেদ্ধ করে নিবেন। এমন ভাবে পানি নিন, যাতে পানি শুকিয়ে যায়, ফেলে দিতে না হয়।
- মাংশ, মাছ (কাঁটা ছাড়া) পানিতে সেদ্ধ করে নিন। সেই পানিটাই (ব্রোথ) পিউরী করতে কাজে লাগান।
- সবজি বা ফলের ক্ষেত্রে পানি বেশী দিয়ে দিলে, ফেলে দেবেন না। তা পিউরী তৈরিতে ব্যবহার করুন।
সংরক্ষণঃ
রেফ্রিজারেটরে এবং ডীপ ফ্রিজে পিউরী অথবা অব্যবহৃত খাবার তাৎক্ষনিক সংরক্ষণ করুন।
পিউরী | রেফ্রিজারেটর | ডীপ ফ্রিজ |
শাকসবজি এবং ফল-মূল | ৩ দিন | ৬ মাস |
মাংশ, মাছ এবং ডিম | ২ দিন | 2 মাস |
খাবার কিভাবে ডীপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন?
- পিউরী পুরোপুরি ঠাণ্ডা হতে দিন এবং বরফ রাখার মোল্ডে ছোট ছোট ভাগে রাখুন।
- ঢাকনা দিন এবং ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখুন।
- এরপর পুরোপুরি জমে যাওয়ার পর মোল্ড থেকে কিউবগুলো বের করুন এবং ফ্রিজিং ব্যাগে (বক্স বা জিপ লগে রাখতে পারেন) খাবার গুলো রাখুন। ব্যাগের উপরে খাবারে নাম ও প্রস্তুতের দিন লিখে রাখুন।
খাওয়ানোর আগে আগে ডীপ ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় করে নিন। অথবা বড় বাটিতে গরম পানি নিয়ে তার উপর ছোট বাটিতে খাবার নিয়ে খাবারটা গরম করে নিন। মাইক্রোওয়েভে বাচ্চাদের খাবার গরম না করাই ভালো।
খাবারের সময়-
- সবসময় বাচ্চাকে খাবার দেয়ার আগে সে খাবারের তাপমাত্রা চেক করে নিবেন।
- বাকি পিউরী যেটা বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছিলেন, কিন্তু এখনি আর খাওয়াবেন না, সেটা যদি বাচ্চার মুখের সংস্পর্শে আসে, তবে সেটা আর না খাওয়ানোই ভালো। সেজন্য এক বারে বেশী খাবার গরম না করে, অল্প করে করাই ভালো।
৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুর খাবার
যখনি বাচ্চাকে দেয়া শুরু করবেন, নীচের খাবারগুলো থেকে চেকলিষ্ট বানিয়ে নিন (এক একটা খাওয়া দেয়া হলে, টিক মার্ক দিন), যাতে কোন খাবারে এলার্জিক রিয়েকশন হলে আপনি সেটা মনে রাখতে পারেন।
১। মাংশ এবং তার বিকল্প (আয়রনে পরিপূর্ন)
- মুরগীর মাংশ
- গরুর মাংশ
- খাসির মাংশ
- কবুতরের মাংশ
- টার্কি
- কলিজা
- স্যামন মাছ
- রুই বা অন্য যে কোন মাছ।
২। বাদাম এবং ডাল জাতীয় খাবারঃ
- মুগ/ মসুর ডাল
- পিনাট বাটার
- টফু
- সয়া
- মটর ডাল
- লাল কিডনি বিনস
- ব্ল্যাক বিনস।
৩। শস্য জাতীয় খাদ্যঃ
- আয়রন সমৃদ্ধ বেবি সিরিয়াল
- বার্লি
- গম
- ওটস
- ভাত
- অন্যান্য…
অন্যান্য শস্য (যা আয়রন সমৃদ্ধ নয়)
- রুটি
- পাসতা বা নুডলস
- কিনোওয়া
৩। ফল-মূল এবং শাক-সবজিঃ
সবজিঃ
- গাজর
- পেঁপে
- মিষ্টি কুমড়া
- মিষ্টি আলু
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- টমেটো
- বরবটি
- লাউ
- বীট রুট
- ব্রকোলি
- ঝিঙ্গা
- মাশরুম
- এসপারাগাস
- পেঁয়াজ
- রসুন
- মটরশুঁটি
অন্যান্য…
ফলঃ
- আপেল
- কমলা
- নাশপাতি
- আঙ্গুর
- তরমুজ
- আম
- এভকাডো
- স্ট্রবেরী
অন্যান্য…
৪। দুধ এবং তার বিকল্প
- পনির
- দই
- গরুর দুধ (নয় মাসের আগে নয়*)
অন্যান্য…
* হেলথ কানাডা’র তথ্য অনুসারে ৯-১২ মাসের মধ্যে কেউ চাইলে পাস্তুরিত গরুর দুধ দিতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ মন্ট্রিয়াল ডায়েট ডিসপেনসারি
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আর্লি স্টার্ট ডট কম এবং বু বেবে ডট কম।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care