বাচ্চাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছর এমন একটা সময়, যে সময়টাতে শারীরিক, মানসিক, আবেগগত পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুতই ঘটতে থাকে। এসময়টাতে বাচ্চার খাওয়া-ঘুম সমস্ত কিছু রুটিনের মধ্যে ফেলে নিয়মকানুন তৈরী করে দিতে পারলে, বাচ্চার জন্য যেমন সহজ হয়, বাবা-মায়ের জন্যও তাই। সুপারন্যানী হিসেবে পরিচিত জো ফ্রষ্ট তার “হাউ টু গেট দ্যা বেষ্ট ফ্রম ইউর চিল্ড্রেন” বইতে বাচ্চাদের নিয়ম শৃঙ্খলা শেখানোর ক্ষেত্রে ১০ টা মূল নিয়মের কথা বলেছেন, যেটা থেকে বাবা-মায়েরা উপকৃত হতে পারেন। এই নিয়মগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উঠে এসেছে বিভিন্ন পারিবারিক পর্যবেক্ষন থেকে, তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে না।
১। প্রশংসা এবং পুরস্কারঃ
বাচ্চাদের জন্য অন্যতম পুরস্কার হলো তাদের প্রতি অখন্ড মনোযোগ, প্রশংসা এবং ভালোবাসা। বাচ্চারা খেলনা, চকলেট বা মিষ্টান্ন নয়, বরং এই জিনিসগুলোই বেশী চায়।
২। ধারাবাহিকতাঃ
যখনই যে নিয়ম বাবা-মা শুরু করবেন, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। বড়দের ক্লান্তি বা বাচ্চার না চাওয়া যেন সেই ধারাবাহিকতার ব্যাঘাত না ঘটায়। নিয়মকানুনের ক্ষেত্রে শুধু মা নয় বরং বাবা সহ পরিবারের অন্যদের একমত হতে হবে। বাচ্চাকে বোঝাতে হবে, নিয়ম মাত্রই নিয়ম, এর বাইরে যাওয়া যাবে না। একমাত্র ধারাবাহিকতাই এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে পারে।
৩। রুটিনঃ
বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই রুটিন মেইনটেইন করতে হবে। ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া, গোসল, ঘুমানো এইসব কাজের জন্য নির্ধারিত সময় থাকবে। কখনো কখনো একটু আধটু এদিক-সেদিক হতে পারে, কিন্তু ঠিকমতো রুটিন পালন করলে বাবা-মা, বাচ্চা দুইপক্ষের জন্যই সুবিধা।
৪। সীমানা নির্ধারনঃ
বাচ্চাদের জানা থাকা উচিত তাদের আচার আচরনের ক্ষেত্রে লিমিট কতটুকু। তার মানে তার কোন আচরন গ্রহনযোগ্য আর কোনটি নয়। বাবা-মায়ের উচিত নিয়ম কানুন তৈরী করে দিয়ে বাচ্চাকে বলা তারা আসলে কি চান তার কাছ থেকে।
৫। নিয়ম-শৃঙ্খলাঃ
আচরনের ক্ষেত্রে এই লিমিট ঠিক রাখা সম্ভব, যদি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে বাচ্চাকে রাখা যায়। এর মানে এই বিষয়ে বাবা-মায়ের ভালো ও কঠোর নিয়ন্ত্রন থাকতে হবে। হতে পারে এটা কতৃত্বশীল কন্ঠস্বরে বাচ্চাকে বলা অথবা বাচ্চাকে আগে থেকে ওয়ার্নিং দেয়া। বকাবকি করা ছাড়াও বাচ্চাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর বেশকিছু কৌশল আছে।
৬। সতর্ক করে দেয়া
বাচ্চাদেরকে দুইভাবে সতর্ক করা যায়। একটা হলো বাচ্চাকে ক্রমাগত বলতে থাকা কখন কি করতে হবে, কোন কাজের পর কোন কাজটা আসবে। আরেকটা হলো বাচ্চাকে খারাপ আচরনের জন্য সতর্ক করে দেয়া। এত বাচ্চা তার আচরন শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
৭। ব্যাখ্যা করাঃ
ছোট বাচ্চারা বুঝতেই পারে না তারা বাবা-মায়েরা তাদের কাছ থেকে কেমন আচরন আশা করেন, যতক্ষন না তারা গোটা বিষয়টা বাচ্চার কাছে ব্যাখ্যা করেন। এই ব্যাখ্যা করার ধরন অবশ্যই সহজ এবং বয়স উপযোগী হতে হবে। সাথে সাথে তাকে এটাও বোঝাতে হবে, কেন বাবা-মা চাইছে বাচ্চা ডিসিপ্লিনড হোক।
৮। বাধা
বাচ্চারা খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়ম শৃঙ্খলা পছন্দ করবে না। ট্যানট্রাম দেখাবে, রাগ-জেদ দেখাবে। এসময়গুলোতে আসলে এদেরকে পালটা রাগ দেখানো বা চিৎকার করা কাজের কিছু না। বাবা-মাকে কৌশলি হতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা বাচ্চার কথামতো চলবেন ব্যাপারটা এরকম না, বরং বাচ্চাকেই তাদের কথামতো চলতে শিখতে হবে।
৯। দায়িত্বঃ
কিছু কিছু কাজের দায়িত্ব বাচ্চাদের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। বাবা-মায়েরা ছোট মনে করে অনেক কিছুই বাচ্চাদের করার সুযোগ দেন না, কিন্তু বয়স উপযোগী কিছু দায়িত্ব যদি তাদের দেয়া হয়, তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠে। বাচ্চাদেরকে পরিবারের কাজে অংশগ্রহন করার সুযোগ দিলে, সোশাল স্কিল ডেভেলপ করে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের তাদের বয়সের চাইতে বেশী প্রত্যাশা রাখা ঠিক নয়।
১০। বিনোদনঃ
পরিবারের প্রত্যেকের জন্য কোয়ালিটি টাইম মেইনটেইন করাটা জরুরী। নিয়ম কানুনের ভেতরে থেকেও বিনোদন সম্ভব। বাচ্চাকে ঘুমানোর আগে একটু গল্প শোনানো কিংবা আরেকটু বেশী সময় তার সাথে কাটানো, এগুলো হয়তো কঠোর রুটিনের ভেতরে পড়ে না, কিন্তু এগুলো কোয়ালিটি টাইম নিশ্চিত করে। বাবা-মা নিজেদের মধ্যে, বাচ্চার অন্য ভাই বোনদের সাথে প্রত্যেকে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারছে কিনা, এটা নিশ্চিত করা জরুরী।
মূলঃ “হাউ টু গেট দ্যা বেষ্ট ফ্রম ইউর চিল্ড্রেন”- জো ফ্রষ্ট
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ডিজিটাল ফটোগ্রাফি স্কুল ডট কম
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care