সন্তানের জন্য কীভাবে উত্তম দুয়া করতে পারি? সন্তানের জন্য মা বাবার দুয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কবুল করেন। এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের দুয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কবুল করেন, এই সুযোগ উত্তমভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়?
৪০ হাদিসের মাঝে একটি হাদিস আছে মায়ের পেটে বাচ্চার বেড়ে ওঠা নিয়ে, প্রতি ৪০দিন অন্তর ফিরিস্তা আল্লাহকে বলতে থাকেন বাচ্চা এখন কোন হালতে আছে। এই হাদিস পড়ার পর মনে হয়েছে, সন্তান যখন গঠন হতে থাকে তখনই তার জন্য দুয়া করার সবচেয়ে উত্তম সময়! কিংবা সন্তান গর্ভে আসার আগে যখন সন্তান চেয়ে আমরা দুয়া করি তখনই সুযোগ সব কিছু আদায় করে নেওয়া রব্বে কারীমের কাছ থেকে।
হাদিসটি-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ اللَّهَ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ، يَا رَبِّ عَلَقَةٌ، يَا رَبِّ مُضْغَةٌ. فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهُ قَالَ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى شَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالأَجَلُ فَيُكْتَبُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ ”.
আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মাতৃগর্ভের জন্য একজন মালা’ইকা নির্ধারণ করেছেন। তিনি (পর্যায়ক্রমে) বলতে থাকেন,
“হে রব! এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে।”
“হে রব! এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে।”
“হে রব! এখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে।”
অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন জিজ্ঞেস করেন : “পুরুষ, না স্ত্রী? সৌভাগ্যবান, না দুর্ভাগা? রিজিক ও বয়স কত?”
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন : তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেয়া হয়। *
আমি আমার সন্তানের জন্য দুয়া করতাম অনেক কিছু চেয়ে। চাওয়ার কোনো শুরুও নাই শেষও নাই। চাইতাম আর চাইতাম। সারাদিন উঠাবসায় শুধু চাইতাম।
“ইয়া লাতিফ, ইয়া কারিম, ইয়া রাহিম, ইয়া রাজ্জাক, ইয়া হাইয়ু ইয়া কায়ুইম, ইয়া জুল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রব্বি, তোমার রাসুলের আহলিয়া আর কন্যাদের মত নাসিব, ঈমানী জজবা, সবর, শোকর, ইবাদাত, পবিত্রতা, মর্যাদাওয়ালা আউলাদ দাও। শহিদি মর্যাদাপ্রাপ্ত সাহাবিদের মত শারীরিক ও মানসিক শক্তিওয়ালা আউলাদ দেও।
শারীরিক ও মানসিক সম্পূর্ণ সুস্থতা দাও, প্রতিটা অংগের পরিপূর্ণতা দাও ও আজীবন সুস্থতা দাও, পর্যাপ্ত উচ্চতা, সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্য দাও(এখানে আরও বিস্তারিত চাইতাম, যেমন ঘন সুন্দর চুল, সুন্দর গঠনের চোখ, নাক, কান, ঠোঁট, গাল, নখ, লম্বা-পাতলা আঙুল ইত্যাদি)। সব ধরনের বিপদআপদ, পরীক্ষা ও অসুস্থতা থেকে মুক্ত রাখো আজীবন। শয়তান, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, শিরক, রিয়া, অহংকার, কুফুরি থেকে আজীবন পানাহ দেও, মানুষের বদ নজর, হাসাদ, নামিমা, গিবত থেকে পানাহ দাও। অভাব ও গরিবি হালত থেকে পানাহ দেও, খাইর ও বরকতময় সম্পদের অধিকারি দাও। রাগ, বদ মেজাজি, নিকৃষ্ট আখলাক, তর্কবাজি থেকে পানাহ দেও এবং উত্তম আখলাক, আদবি বানাও, বিচক্ষণ, বুদ্ধিদীপ্ত বানাও, আলসে ও বোকা হতে পানাহ দাও। পরোপকারী ও দ্বীনের দায়ী বানাও, জামানার ঈমাম বানাও, দ্বীনের খাদেম বানাও।
উত্তম জীবনসঙ্গী মিলিয়ে দেও ও তার নাসিবে যা যা চাচ্ছি, তা তা তার সন্তানের নাসিবেও দেও। তার জীবনসঙ্গীর নাসিবেও দাও। বরং আমার চাওয়া থেকেও আরও উত্তম দেও। তাকে বাধ্য ও চক্ষুশীতলকারি সন্তান বানাও। তাকে ও তার আউলাদদেরকে মাদিনাবাসী বানাও। তাকে ও তার আউলাদদেরকে বাকীতে দাফন হওয়ার নাসিব দাও। তাকে ও তার আউলাদদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসে মাকামে মাহমুদের পাশে মাজলিস দেও ও তোমার দিদার দেখার নাসিব দাও।
বাচ্চা পেটে আসার আগে বা পেটে আসার পর, রুহ আসার আগে, যখন আল্লাহ আল্লাহ লিখেন তার নাসিব, আমার মন বলে ঐ সময় এইসব দুয়া করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজ গুনে তা কবুল করলে সন্তানের জন্য এর থেকে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।
*[সহিহ বুখারী- ৩১৮]
সাথে জেনে নেই আরেকটি জরুরী বিষয়।
সন্তান আল্লাহ তা’আলার দেওয়া একটি অমূল্য নিয়ামত। এই নিয়ামতের মূল্য যে কত বেশি তা কেবল তারাই বুঝবেন যারা এ থেকে বঞ্চিত। আর যাদেরকে এই নিয়ামত দিয়ে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তারা কিছুটা হলেও সেই মূল্য অনুভব করতে পারেন। ইসলাম একটি পূর্ণাংগ জীবনবিধান হিসেবে নবজাতক সন্তানের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য বেঁধে দিয়েছে। নবজাতককে স্বাগত জানাতে ইসলামের ৫টি বিধান কি কি তা লিংকে ক্লিক করে পড়ুন এবং মানার চেষ্টা করুন।