সদ্যোজাত সন্তানের সাথে আপনার বন্ধন সুদৃঢ় করার দারুণ উপায় হলো তার ত্বকের উপযোগী কোন তেল দিয়ে তাকে মালিশ করা। তেল মালিশ করা আপনার শিশুর নরম ত্বকে পুষ্টি জোগায়। আমাদেরকে সবসময়ই বলা হয়েছে প্রাকৃতিক তেল বাচ্চার জন্য নিরাপদ। যখন শিশুর ত্বকের যত্নের কথা আসে, তখন “প্রাকৃতিক” সবসময় নিরাপদ নয়

পুরো বিশ্বে অনেক বাবা মায়ের প্রথম পছন্দ জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল (Olive oil)। অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে যদি বাচ্চার ত্বক শুষ্ক, ফাটা বা ত্বকে একজিমা ভাব থাকে।

অলিভ অয়েলের উপাদান ও প্রভাব

অলিভ অয়েলে বেশ কয়েক ধরণের চর্বি থাকেঃ

  • ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • লিনোলিক এসিড
  • ওলেয়িক এসিড

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকে প্রদাহকে (inflamation) প্রশমিত করতে সাহায্য করে এবং লিনোলিক এসিড ত্বকের প্রাকৃতিক আবরণকে উন্নত করতে পারে, কিন্তু এটি পরিমাণে কম থাকে। অন্যদিকে অলিভ অয়েলে ওলেয়িক এসিড পরিমাণে বেশি থাকে। এটা শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্ক সকলের জন্য ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েলকে ক্ষতিকারক করে তোলে। 

  • ওলেয়িক এসিড ত্বকের উপরে থাকা প্রাকৃতিক তেলকে পাতলা করে ফেলে, যা ত্বককে শুষ্ক এবং রুক্ষ করে তোলে।
  • ওলেয়িক এসিড প্রদাহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা একজিমা প্রবণ ত্বকের অবস্থার আরও খারাপ করতে পারে।
  • ওলেয়িক এসিড ত্বকের ভেতর ক্ষতিকারক পদার্থের প্রবেশ আরও সহজ করে দেয়।

অলিভ অয়েলের ক্ষতির দিক

মানুষের ত্বকে কিছু প্রতিরোধী ব্যবস্থা থাকে, যেগুলোর কারণে ক্ষতিকর উপাদান ত্বকে প্রবেশ করতে পারেনা এবং একই সাথে এগুলো ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে। অলিভ অয়েলের থাকা ওলেয়িক এসিড সেই প্রতিরোধকে পাতলা করে তোলে, যার ফলে ত্বক সহজে আদ্রতা হারায়। এবং ধীরে ধীরে বাচ্চার নরম ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে একজিমার দিকে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে অলিভ অয়েলের বাহ্যিক ব্যবহার (external use) বড়দের সুস্থ স্বাভাবিক ত্বকেও ক্ষতি করতে পারে। সেখানে বাচ্চাদের নরম ত্বক আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে তা বলা বাহুল্য। 

তাই অনিয়মিতভাবে মাঝেমধ্যে বাচ্চার নরম ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। উপকারী ফ্যাট এর পাশাপাশি অলিভ অয়েলে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন ই আছে, প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট আছে।

২০১৬ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া যায় কোন তেল ছাড়া মালিশ করার চাইতে বাচ্চাকে যখন অলিভ অয়েল বা সূর্যমুখী তেল দিয়ে মালিশ করা হয় তখন তাদের ত্বক ভালোভাবে আদ্রতা পায়। একই গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে যে অলেয়িক এসিড নামের উপাদানের কারণে ত্বকের ব্যারিয়ার পাতলা হয়ে বাচ্চার ত্বক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই নিয়মিত ভাবে এই তেল ব্যবহার করা অনুচিত।

শিশুর ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহারের ঝুঁকি

গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ টানা ৪ সপ্তাহ অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে তাদের ত্বকে লাল ভাব দেখতে পাওয়া যায়। কারণ অলিভ অয়েল তকের লেয়ার গুলো পাতলা করে ফেলতে বা ভেংগে ফেলতে পারে।

যদি বড়দের ত্বকেই এমন কিছু হতে পারে তাহলে বাচ্চাদের নরম ত্বক আরও ক্ষতির সম্ভাবনায় থাকে। বিশেষত বাচ্চার ত্বকে যদি একজিমা থাকে। জেনে রাখা ভালো শতকরা ২০ ভাগ বাচ্চার ২ বছরের কম বয়সে কখনো না কখনো একজিমা হয়ে থাকে। 

২০১৯ সালের একটা গবেষণায় পাওয়া যায় শুধুমাত্র অলেয়িক এসিড যদি ত্বকে ব্যবহার করা হয় তবে ত্বকের লাল্ভাব এবং জ্বালা আরও বেড়ে যায়। অলিভ অয়েলে অলেয়িক এসিড একটু বেশি মাত্রায় থাকে।

অলিভ অয়েলের নিরাপদ ব্যবহারবিধি

অলিভ অয়েল খুবই উপকারী যখন এটা খাওয়া হয়। ত্বকের বাহ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মিত নয় বরং অল্প পরিমাণে অনিয়মিত ব্যবহার করা যাবে। এবং আপনার বাচ্চার ৬ মাস পূর্ণ হলে শক্ত/সলিড খাবারের সাথে অল্প পরিমাণে আপনি অলিভ অয়েল মিশিয়ে দিতে পারেন। খাবার হিসেবে অলিভ অয়েলের উপকারীতা অনেক এবং বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। 

শিশুর জন্য অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন। কারণ এটাতেই সবচেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে। ক্যামিকেল যুক্ত অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন না।

১ বছরের আগে বাচ্চার ত্বকে যদি ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই খুব অল্প পরিমান ব্যবহারের দিকে জোর দিবেন। অতিরিক্ত ব্যবহার কখনোই সুখকর ফলাফল বয়ে আনেনা। 

বাচ্চার ত্বকে তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করতে চান তবে সব সময় এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা

মুসলিম মননে ধর্মীয় দিক থেকে অলিভ অয়েলের একটি বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে। অলিভ ফল বা অলিভ অয়েল খাওয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করা মানব শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। বাহ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মিত নয় বরং রয়ে সয়ে ব্যবহার করাই নিরাপদ। আমাদের শরীরের যেকোনো চাহিদা বা ঘাটতি পুরনের ক্ষেত্রে খাওয়ার মাধ্যমে কোন কিছু গ্রহণ করাই সবচেয়ে কাম্য এবং নিরাপদ।

তথ্যসূত্রঃ

১. https://www.babycentre.co.uk/x1044400/can-i-use-olive-oil-to-massage-my-baby

২. https://www.healthline.com/health/baby/olive-oil-massage-for-baby#The-takeaway-

৩. https://www.johnsonsbaby.co.uk/healthcare-professionals/baby-skincare-faqs/olive-oil

৪. https://muslimhands.org.uk/latest/2020/03/benefits-of-olive-oil-in-islam-quran-and-hadith

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা