![](http://www.matritto.com/wp-content/uploads/2017/03/8-weeks-pregnant-1-300x188.jpg)
অষ্টম সপ্তাহটা অনেক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনের প্রভাবে শরীর ও মনের সব ধরনের পরিবর্তন চলছে এরই মধ্যে। ডাক্তার দেখানো হলে আল্ট্রাসাউন্ডও করা হয়েছে। সপ্তম সপ্তাহে হার্টবিট না পেলেও অষ্টম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়।প্রথমবারের মতো অনাগত সন্তানের হার্টবিট শুনে আপনি নিশ্চয়ই শিহরিত। অভিনন্দন আপনাকে!
আপনার শরীরে যা পরিবর্তন আসবে
ইতিমধ্যে অনেক শারীরিক পরিবর্তন আপনি দেখতে পাচ্ছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় আকারে ছোট জরায়ুটি বাড়ন্ত ভ্রুণটিকে জায়গা করে দিতে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এটি এখন প্রায় একটা অাঙ্গুরের সমান। জরায়ু আকারে বড় হচ্ছে বলে এসময় তলপেটে হালকা ব্যাথা অনুভব করতে পারেন।
স্তনের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। শিশুর প্রথম খাদ্য আপনার শরীরে তৈরী হচ্ছে। স্তনে রক্ত সঞ্চালণ বাড়াতে ভেরিকোস (Varicose) নামের শিরা এর চারিদিকে গড়ে উঠছে। অনেকে ত্বকের উপর থেকে এটা অনুভব করতে পারবেন। এরিওলা বাদামী থেকে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। স্তনবৃন্ত বড় হচ্ছে। এসবই বাচ্চার প্রথম খাদ্যের প্রস্তুতি। অনেকের স্তনবৃন্ত থেকে হলুদাভ একধরনের পদার্থ নিঃসৃত হতে পারে। এটি আসলে কোলস্ট্রাম (Colostrum) যা পরবর্তীতে বাচ্চা শালদুধ হিসেবে পাবে। তবে সবার ক্ষেত্রে যে এরকম হবে, তা না।
বাচ্চার বেড়ে উঠা
ভ্রুণটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে। ভ্রুণের লেজের মতো যে অংশটি গড়ে উঠেছিলো তা এসময় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। ছোট্ট শীমের বিচির আকারের ভ্রুণটি এখন প্রায় এক ইঞ্চির মতো লম্বা হয়েছে। এর ওজন হয়েছে প্রায় তিন গ্রামের কাছাকাছি। ধীরে ধীরে হাড়ের গড়ন সম্পন্ন হচ্ছে। হাড় ও হাড়ের জয়েন্ট তৈরী হচ্ছে।
হাত ও পা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আকারে। ভ্রুণের মুখের আদল তৈরী হচ্ছে। কানের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন অংশ গড়ে উঠছে। এসময় নাক, মুখ, চিবুক পরিস্কার বোঝা যাওয়ার কথা। প্রজনন তন্ত্রের গঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু এসময় তা ঠিকমতো বোঝা যাবে না।
এ সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস
- আপনি হয়ত প্রেগন্যান্সির জন্য কাপড় কেনা শুরু করেছেন। স্তনের পরিবর্তন যেহেতু ইতিমধ্যে চোখের পড়েছে এবং আগত সপ্তাহগুলোতে আরো পরিবর্তন আসবে, ম্যাটারনিটি ব্রা স্বাভাবিকের চাইতে দুই সাইজ বড় দেখে কিনুন।
- পুষ্টিকর খাবার খান। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রি-ন্যাটাল ভিটামিন খান।
- ওষুধ পত্র ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। জ্বর, সর্দি-কাশির অনেক ওষুধ, যা আপনি আগে হয়ত নিজেই খেতেন, কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে সেগুলো নিরাপদ নাও হতে পারে।
- গর্ভধারণ সম্পর্কিত পড়াশুনা করুন। আজকাল ইন্টারনেটের বদৌলতে সমস্ত কিছু হাতের নাগালের মধ্যে। যত বেশী এই বিষয়ে পড়বেন, তত বেশী নিজের সম্পর্কে অাস্থা বাড়বে।
- বাড়ীতে বিড়াল পুষলে, সেটি যে ট্রে টিতে বাথরুম করে, তা নিজে পরিস্কার করবেন না। অন্য কাউকে এই দায়িত্ব দিন।
- নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাড়িতে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। গর্ভকালীন ট্রাইমিস্টার অনুযায়ী ব্যায়াম আছে। ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। তবে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন ব্যায়াম শুরু করার আগেই।
প্রথম দিককার সপ্তাহগুলোতে যেহেতু গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে, অধিক রক্তপাত, অস্বাভাবিক ডিসচার্জ, তলপেটে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাথা- এই ধরনের যে কোন শারীরিক সমস্যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। গবেষণার দেখা গেছে প্রায় ২০ ভাগ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটে। ভ্রুণের ক্রোমসোমের যেকোন অস্বাভাবিকতা থাকলে, সেটা মিসক্যারেজ হতে পারে। এখানে মায়ের কিছু করার নেই। এই সব দিকগুলো মাথায় রাখুন।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইনফোবেবি ডট ওরজ
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor