এই সপ্তাহেও বাসায় বসে যেকোন ধরনের প্রেগনেন্সি টেস্ট সঠিক ফলাফল দিবে না, কারণ আপনার শরীরে হরমোনগত যেসব সম্ভাব্য পরিবর্তন ঘটছে, তা এত সামান্য যে গড়পড়তা টেস্টগুলো এটা ধরতে পারবে না। আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে আপনি এখনো গর্ভধারণ করেননি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আপনার মাসিক শুরু না হয়, তবে পরীক্ষা করুন এবং প্রথম পরীক্ষাটি বাড়িতে করুন। সাধারণত ৪র্থ সপ্তাহে বা একটি মাসিক মিস করার পরপর প্রচলিত টেস্টকিট গুলো সঠিক ফলাফল দেয়।
আপনার শরীরে যা পরিবর্তন আসবে
পরিকল্পিত গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এই সময়ে আপনি অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল জানার জন্য। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে আপনার মাসিকের তারিখ পার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। কারন এখনি যদি আপনি বাড়িতে পরীক্ষা করেন, পজেটিভ রেজাল্ট নাও পেতে পারেন। আরো কিছু সময় অপেক্ষা করুন।
গর্ভধারনের যে লক্ষনগুলো আপনি দেখতে পারেন-
- ভীষন ক্লান্তিবোধ
- ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
- খাবারে অরুচি
- স্তন নরম বোধ হওয়া
- বমি বা বমি ভাব
- ব্লিডিং বা স্পটিং
এসময় কারো তলপেটে হালকা ব্যাথা এবং স্রাবের (Discharge) পরিমান বেড়ে যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। কেউ কেউ স্রাবের সাথে হালকা স্পটিং দেখতে পান, অথবা লাল বা লালচে বা গোলাপী স্রাব খেয়াল করেন। যেটা ঠিক মাসিক নয়। শরীরে প্রজেসটরন নামক হরমোনের অভাব হলে এরকমটা হতে পারে।যদি আপনি পরিকল্পিত গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় থাকেন এবং এধরনের সমস্যা অনুভব করেন তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থতায় ঢেকে যেতে পারে।
বাচ্চার বেড়ে উঠা
ঠিক যে মুহূর্তে শুক্রানু ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়, তখনি তা ডিম্বানুটিকে নিষিক্ত করে। এই নিষিক্ত ডিম্বানুটি ধীরে ধীরে জরায়ুর দেয়ালে বসে পড়ে। শুরু হয়ে কোষ বিভাজন, আর তা থেকে দীর্ঘ নয়/দশ মাসের পরিক্রমায় পরিপূর্ন মানব সন্তান। এই সময়ে আপনার বাচ্চাটি আকার ছোট্ট একটা বলের সমান (Blastocyst)। এ থেকে একসময় প্লাসেন্টা তৈরী হবে, যা আপনার শরীরে প্রেগন্যান্সি হরমোন উৎপাদন করা শুরু করবে।
এই ছোট্ট বল যাকে কেন্দ্র করে কোষ বিভাজন শুরু হয়েছে, তার চারপাশে এমনিয়োটিক ফ্লুয়িড জমা হওয়া শুরু হবে। এটা একসময় এমনিয়োটিক স্যাকে পরিনত হবে। এ একটা পানির থলের মতো, যার ভিতরে শিশুটি বড় হতে থাকবে।
জেনে রাখুন – গর্ভসঞ্চারের সময়ই আপনার শিশুর লিঙ্গ, চুল ও চোখের রঙ- এ ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ধারিত হয়ে যায়।
এ সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস
- প্রেগন্যান্সী টেস্টিং কিটস কিনে আনুন। পরের সপ্তাহেও যদি পিরিয়ড শুরু না হয়, তবে বাড়িতে বসেই প্রথম পরীক্ষা করুন। এ পরীক্ষা দিনের যে কোন সময়েই করতে পারেন, যদিও খুব সকালে করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
- আপনার নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যান। এটি আপনাকে গর্ভকালীন পুরো সময়টাতে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে। তবে পেটে চাপ পড়ে এমন ধরনের ব্যায়াম আপাতত বন্ধ রাখুন।
- নিয়মিত ফলিক এসিড খান।
- এখনো পর্যন্ত যদি পুষ্টিকর খাদ্যাভাস শুরু না করে থাকেন, শুরু করে দিন। আপনি কি খাচ্ছেন, তার প্রভাব পুরোমাত্রায় পড়বে গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর।
- আপনার আশেপাশের এলাকায় ভালো ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ’র (Obstetrician) খোঁজ করুন।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবরিনা আফরোজ
MBBS, MPH
লেকচারার, ঢাকা কমিউনিটি মেডিসিন কলেজ