গর্ভস্থ সন্তান ছেলে হয়ে থাকলে গর্ভধারিণী মধ্যম থেকে চরম মাত্রার বিভিন্ন জটিলতার মুখে পড়তে পারেন, নতুন এক গবেষণা থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া পাঁচ লক্ষাধিক শিশুর উপর গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছান গবেষকরা। তাদের মতে, বাচ্চার লিঙ্গ বাচ্চা ও মায়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

এডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবিনসন গবেষনা ইন্সটিটিউটের গবেষক ডক্টর পেট্রা ভার্বাগ বলেন, “গর্ভস্থ বাচ্চার লিঙ্গের সাথে গর্ভকালীন জটিলতার সরাসরি সম্পর্ক আছে

ছেলে বাচ্চারা সাধারণত মেয়ে বাচ্চার চেয়ে আগে জন্ম নেয়, যার ফলে এইসব নবজাতকরা বেশি শারীরিক সমস্যায় পড়ে। এছাড়াও ছেলে বাচ্চা ধারণ করা মহিলারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রিএকল্যাম্পশিয়া, ও উচ্চমাত্রার রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে গবেষকরা জানান।

এরকমটা কেন হয় তার সদুত্তর গবেষকদের কাছে নেই, তবে ভার্বাগ জানান, সম্ভবত এটা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকবে

মিয়ামির নিকোলাস চিলড্রেন হাসপাতালের নিওনেটলজিস্ট ড. কিউরোব সান্তানা রিভাসও এই ফলাফলকে সত্যায়ন করেছেন। তিনি তার হাসপাতালে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের পার্থক্যের এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। উল্লেখ্য, এই গবেষনায় তিনি জড়িত ছিলেন না।

গবেষনার এই ফলাফল আগের কিছু গবেষনার ফলেরও সত্যায়ন করছে। পূর্ববর্তী কিছু গবেষনায় দেখা গেছে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল গর্ভকালীন জটিলতার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে। প্লাসেন্টা গর্ভস্থ ভ্রুনের পুষ্টির যোগান দেয়। তাই এটি কিভাবে গঠিত হচ্ছে এবং কাজ করছে তার সাথে জটিলতা সরাসরি জড়িত। ড. ভার্বাগ জানান, ছেলে বা মেয়ে বাচ্চার প্লাসেন্টায় পার্থক্য আছে।

১৯৮১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ড. ভার্বাগের দল ৫৭৪,০০০ এর বেশি অস্ট্রেলিয়ান বাচ্চার জন্ম পরীক্ষা করে দেখে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান। মেয়ে সন্তানের তুলনায় ছেলে সন্তানের অপরিণত অবস্থায় (২০ থেকে ২৪ সপ্তাহ) জন্ম হবার সম্ভাবনা ২৭ ভাগ বেশি। এছাড়াও ৩০ থেকে ৩৩ সপ্তাহে জন্ম নেবার ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি এবং ৩৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহে জন্মানোর সম্ভাবনা ১৭ভাগ বেশি।

আমেরিকার স্ত্রী রোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিষয়ক কলেজের মতে পরিণত গর্ভধারণ হলো ৩৯ থেকে ৪১ সপ্তাহে জন্ম নেয়া সন্তানেরা।

অপরিণত সন্তান জন্মদানের পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও ছেলে ধারণকারী মায়েদের জন্য ৪ শতাংশ বেশি। এছাড়াও সাড়ে ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভধারীনির প্রিএকল্যম্পশিয়ায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গবেষনার ফল যাই হোক না কেন, এটা একধরনের সম্পর্ক ইঙ্গিত করছে, একে কার্যকারণ হিসেবে নেয়াটা ভুল হবে। এবং মা হতে চাওয়া বা সন্তানসম্ভবা নারীদের এতে আতংকিত হবারও কিছু নেই বলে গবেষকরা জানান।

এমন ফলাফলের পরও এসব বিশেষজ্ঞরা সন্তান নিতে চাওয়া বা সন্তানসম্ভবা মার জন্য আগের উপদেশ বহাল রেখেছেন। তা হলো পরিমিত পুষ্টিগুনের খাবার গ্রহন করা এবং সন্তান ধারনের আগে শরীরের ওজন যথাযথ হওয়া।

এমনকি অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও সন্তানসম্ভবা নারীর হতাশ হবার কিছু নেই। তিনি ভাল খাবার গ্রহণ, ধুমপান বা অন্যান্য খারাপ অভ্যাস ত্যাগের মাধ্যমে শারীরিক ফিটনেস অর্জন করে গর্ভকালীন জটিলতা কমিয়ে আনতে পারেন“, . ভার্বাগ জানান।

এই গবেষনার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এটা বলা যায় যে আগামীদিনের কোন একসময়ে নারীদের জন্য গর্ভকালীন উপদেশ ও চিকিৎসা সন্তানের লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন রকম হবে, গবেষকরা এমনটাই ধারণা করছেন।

সূত্র: ওয়েবএমডি

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা