চারপাশটা খুব দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন।
“মা,আমিও চিন্তা করছি তোমার জন্যে৷ ঠিকমতো হাত ধুচ্ছো তো? ঐ যে কে যেন বাইরে থেকে এলো,এখন কাছে যেওনা মা। তোমার আমার দুইজনের জন্যেই ক্ষতি। তুমি বেশি বেশি টেনশন নিওনা। তুমি আমি একসাথে সাবধানে থাকবো,তো সব ঠিক।”
গর্ভের সন্তানের মায়ের জন্যে চিন্তা। তাকে নিয়ে মা ভাল আছে তো? পারবে তো? পুরোটা পথ পাড়ি দিতে দু’জনে?

কার কাছে যেন শুনেছিলাম, গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে যদি টেনশন শুরু, তা আর মায়ের চুল সব পেকে সাদা হয়ে গেলেও শেষ হয়না। তারপর মাতৃত্ব যদি হয় এই করোনাকালে,মায়ের চিন্তা বলুন আর দুশ্চিন্তা, দুটোই বাঁধভাঙা।

সাধারণ যা কিছু এই করোনাকালীন গর্ভবতীকে মানতে হবে

১.পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে
২.বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে
৩.যেকোন ধরণের সমাগম যেখানে ২মি কিংবা ৬ফুট দূরত্ব রক্ষা সম্ভব নয় তা এড়িয়ে চলা
৪.পরিবারে যদি কেউ বাইরে আসা যাওয়া করেন তবে যথাসম্ভব সেই সদস্যের উচিৎ গর্ভবতীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে দূরত্ব মেনে চলা। যদি সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতায় করণীয় বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে
৫.যেকোন ধরণের ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে
৬.পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে,যা স্বাভাবিক সময়েও জরুরি
৭.নিজস্ব গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা জেনে তারপর যেতে হবে
৮.নির্দিষ্ট টীকাসমূহ শিডিউল অনুযায়ী দিতে হবে
৯.প্রচুর পানি পান করতে হবে(গর্ভকালীন প্রস্রাবের ইনফেকশন খুবই প্রচলিত সমস্যা। তা যেন না হয় যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে)
১০.বাচ্চার ও মায়ের ঘাটতি পূরণের জন্যে যেসব আয়রন-ক্যালসিয়াম ডাক্তার দ্বারা নির্দেশিত আছে,তা খেতে হবে
১১.টেস্টের সংখ্যা কিংবা ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ সীমিত করে দিলেও যেটুকু নির্দেশিত তা মেনে চলতে হবে
১২.নিয়মিত বাড়িতে প্রেসার মাপতে হবে
১৩.বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারলে তা খেয়াল রাখতে হবে কতবার হলো এবং কমছে কিনা
১৪.প্রেসার/ডায়াবেটিস/শ্বাসকষ্ট/হৃদরোগ যাদের আছে তাদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে
১৫.নিয়মিত হালকা হাঁটাচলা করতে হবে
১৬.যেকোন শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ খাবেন না।

কখন হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি

এই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এমনই ভয়ংকর যে, এই সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতের সংখ্যাকেও সীমিত করে এনেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু জানতে হবে কখন অবশ্যই যেতে হবে!

১.যদি ডাক্তার দ্বারা নির্দেশিত কোন সাক্ষাত হয়
২.গর্ভকালীন প্রথম ৬মাসের মধ্যে প্রচন্ড পেটে ব্যথা/রক্তক্ষরণ
৩.শেষ ৩ মাসে পানি ভেঙে যাওয়া/পেটে ব্যথা/রক্ত দেখা যাওয়া/বাচ্চার নড়াচড়া টের না পাওয়া
৪.করোনা আক্রান্ত হলে

মানসিক স্বাস্থ্য


গর্ভবতী মায়েরা সবসময়ই সন্তানের সুস্বাস্থ্য এবং জন্মদান সংক্রান্ত বিষয়ে চিন্তিত থাকেন। তবে এই করোনা মহামারীতে তা অনেকটুকুই বেড়েছে। বেড়েছে নিজে এবং পরিবারের আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং অস্থিরতা। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ এবং কভিড প্রতিরোধের নিয়মাবলি মেনে চলুন। প্রার্থনা করুন আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে। যথাসম্ভব মনকে ব্যস্ত রাখুন যা ভাল লাগে তাতে। বই পড়ুন, নতুন কিছু শিখুন। পড়তে পারেন প্যারেন্টিং নিয়ে, বাচ্চার মানসিক ও শারীরিক গঠন নিয়ে। করোনার কারণে শুরু হয়েছে প্রচুর অনলাইন কোর্স যা অন্যসময় করতে হলে আমাদের বাইরে বের হতে হয়, সুযোগ নিন। জেনে নিন নতুন কোন স্কিল,হতে পারে তা আপনার পেশা সম্পর্কিত কিংবা শখ কিংবা আপনার ধর্ম। পড়তে পারেন নিজের ধর্মীয় গ্রন্থ। আপনার প্রিয়জনদের সাথে সবসময় যোগাযোগ করুন। স্বামী ও পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটান।

পরিবারের করণীয়

১.গর্ভবতী মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন।
২.সাহস দিন আসন্ন সময়কে যেন তিনি নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারেন।
৩.করোনা মোকাবেলায় নিয়মাবলি মানতে সাহায্য এবং উৎসাহিত করুন।

মায়ের গর্ভকালীন সুস্বাস্থ্যের উপর বাচ্চার পরবর্তী জীবনে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল।

ভয়ের কিছু আছে কি?

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা এখনো হয়তো সিংহভাগ ব্যপারই জানিনা। যা জানি, তা প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণা অনুযায়ী, করোনা আক্রান্ত মায়ের গর্ভকালীন জটিলতার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আছে বাচ্চার অপরিণত অবস্থায়(পূর্ণ ৯মাস না হয়ে) জন্ম হওয়া, বাচ্চার হার্টবিট দুর্বল হওয়া এবং সময়ের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া বা প্রসব শুরু হওয়া। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের বাচ্চার ও করোনা হওয়ার হার প্রতি ৭জনে ৩জন। এবং তাও প্রসব পরবর্তী সময়ে বাচ্চার সংস্পর্শে আসার ফলে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এছাড়া যেসব গর্ভবতী মায়ের হৃদরোগ/ডায়াবেটিস/প্রেসার/শ্বাসকষ্ট আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি এবং তাদের ক্ষেত্রে রোগ কিছুটা তীব্র হয়।

গর্ভকালীন প্রথম ৩মাসে বাচ্চার গঠন ও বিকাশের শুরু। এসময় ক্ষতিকর কোন ওষুধ সেবনে হতে পারে গঠনগত ত্রুটি। এই সময় অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়াও গঠনগত ত্রুটির কারণ,যেমন জিকা ভাইরাস। এই ৩মাসে করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে কোন ধারণা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

জানাকে আমরা যতটা না ভয় করি, অজানাকে ভয় তার চেয়েও বেশি। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসকের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখুন। ভাল থাকুন।

ছবি কৃতজ্ঞতা: 123RF.com

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা