একটি নবজাতকের জন্মের পরের সময়টি কতই না দ্রুত পার হয়ে যায়! যেনো চোখের পলকে ছোট্ট বাচ্চাটি পরিবর্তিত হতে থাকে, বদলে যেতে থাকে তার গঠন ও আচরণ!

ছোট্ট নবজাতকের চোখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্‌ তায়ালার অপার কুদরতের কথা চিন্তা হয়- মাত্র কয়েক ফোঁটা তরল থেকে পূর্ণ একটি মানবশিশু জন্মের প্রক্রিয়া তৈরি করে রেখেছেন তিনি! তৈরি করে রেখেছেন শিশুটির রিযিক ও আয়ুষ্কাল ! সুবহান আল্লাহ্‌!

এই ব্যাপারটি নিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত- “সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ( শুক্র হিসেবে) জমা থাকে। তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড, তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন গোশত পিণ্ড আকারে থাকে। তারপর আল্লাহ্‌ একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য- এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেন, কোন ব্যাক্তি জাহান্নামিদের আমাল করতে থাকে। এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত বা এক গজের তফাৎ থাকে। এমন সময় তাকদির তার উপর প্রাধান্য লাভ করে আর তখন সে জান্নাতিদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যাক্তি জান্নাতিদের আমাল করতে থাকে, এমনকি তার  ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত বা দু হাত তফাৎ থাকে। এমন সময় তাকদির তার উপর প্রাধান্য লাভ করে আর অমনি সে জাহান্নামিদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।” (বুখারি ও মুসলিম) 

পুরো প্রেগ্নেন্সিতে বাবা-মা দুজন ভিন্নভাবে গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা লাভ করে। প্রত্যক্ষ এই অভিজ্ঞতা লাভের পরেও নবজাতকের এমন অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো সচরাচর আমাদের চোখে ধরা পড়ে না, এমন ১০টি তথ্য তুলে ধরছি। পড়ে দেখুন তো, আপনার বাচ্চার সাথে মিলে যায় কিনা!

১। নবজাতকদের মাথার খুলিতে একটি নরম অংশ আছে । এটা বাচ্চার বয়স দুই বছর হবার আগে শক্ত হয়না। মাথার খুলিতে এই নরম অংশ থাকার ফলে, বাচ্চা জন্মের সময় প্রসব নালা দিয়ে বের হবার জন্য মাথার খুলি সুবিধাজনক আকৃতি নিতে পারে।

২। বাচ্চারা গর্ভকালীন অবস্থাতেই শুনতে পায়। এসময় যেহেতু বাবা মায়ের কণ্ঠ বেশি শোনে, তাই জন্মের পরেও তাদের কণ্ঠ চিনতে পারে। এর জন্যই গর্ভবতী মা-কে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও উত্তম কথা শোনার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

৩।  এম্বিলিকাল কর্ড বা নাড়ীর গড় দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি। ফলে, নাড়ী কাটার আগেও বাচ্চাকে দুধ পান করানো যায়। এর বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, একটু দেরি করে নাড়ী কাটা যায় এবং খুব দ্রুত বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই বাচ্চার জন্য উপকারী।

৪। নবজাতকের গাল স্পর্শ করলে সে স্পর্শের দিকে ঘুরে মুখ খোলে ও দুধ খেতে চায়। একদম ছোট বাচ্চারা চোখ বন্ধ রেখেও মায়ের বুক খুঁজে নিতে পারে এভাবেই।

৫।  নবজাতকের প্রথম কয়েকবারের মল দেখতে আঠালো আলকাতরার মতন, যাকে মেকোনিয়াম বলে।  তাকে যদি ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুই বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, তাহলে কিছুদিনের মাঝেই মল পাতলা ও হলদেটে হয়ে আসে।

৬। নবজাতক বাচ্চারা দেখতে পায় তবে প্রথম কয়েক মাস তারা হয়তো কোনো বস্তু দৃষ্টি দিয়ে অনুসরণ করতে পারেনা।

৭। একজন নবজাতকের দৃষ্টি কেবল ২০-৩০ সেমি পর্যন্ত প্রসারিত। তার মানে সে মায়ের কোলে শুয়ে দুধ খাওয়ার সময় মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখতে পারে। এই তথ্য থেকে আরও বোঝা যায়  মা ও সন্তানের মাঝে কি প্রগাঢ় সম্পর্ক তৈরি হয় এই সময়টায়! 

৮। নবজাতকদের চোখে কোন দৃশ্যমান পানি থাকে না। তারা কান্না করে ঠিকই, কিন্তু তাদের বয়স কয়েক মাস হওয়া পর্যন্ত সেই কান্নায় পানি দেখা যায়না!

৯। সাধারনত, নবজাতকদের চোখের রঙ কালো বা ধূসর রঙের হয়। কিন্তু এটা ক্ষণস্থায়ী। তাদের বয়েস কয়েক মাস হবার পর চোখের রঙ নির্ধারিত হয়, প্রায় একই সময়ে তাদের চোখে পানি আসে।

১০। নবজাতক বাচ্চারা প্রথমদিকে নিজের মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করার ব্যাপারটা সমন্বয় করতে পারেনা। যদি তাদের নাক বন্ধ করে দেয়া হয়, তবে শ্বাস গ্রহণের জন্য তাকে অবশ্যই কান্না করতে হবে, যেহেতু স্বাভাবিক ভাবে মুখ খুলে শ্বাস নেয়ার ব্যাপারটা তখনো সে রপ্ত করতে পারেনি। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে এটা ঠিক হয়ে যায়।

একজন অভিভাবক হিসেবে নিজের সন্তানদেরকে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে দেখা কতোটা সৌভাগ্যের ব্যাপার এটা অভিভাবক মাত্রই জানে। আল্লাহতায়ালার হিকমাহ ও কুদরাতের কথা জেনে শেষ করা যাবে না!

[মূল লেখকঃ আইশা আল হাজার। মূল লেখাটি পাবেন এখানে। ]
(মূল লিখা থেকে উৎসাহিত ও ঈষৎ পরিবর্ধিত )

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা