সহোদরের মাঝে ভালবাসা

যেই সন্তানকে জান, কলিজা, সোনামণি বলে ডাকতেন, হঠাৎ করে নতুন একজন আসায় তাকেও যখন ওই নাম ধরে ডাকবেন তখন বড়জনের মনে স্বাভাবিক ভাবেই জেলাসি তৈরি হবে। তাই ওর সামনে ছোটজনকে এসব নামে ডাকতে সাবধান থাকবেন। ডাকলেও একজনকে বড় সোনামণি একজনকে ছোট সোনামণি এভাবে ডাকবেন।

বড় জনকে আগেই শেখাবেন, “নতুন বাবু তোমায় অনেক ভালোবাসবে”, “তোমায় ভাইয়া/আপু ডাকবে”, “তোমার সাথে খেলবে।” ওর মনে ছোটজনের প্রতি যেন ভালোবাসা জন্মায় সেই চেষ্টা করবেন। ছোটজনকে শেখাবেন, “ভাইয়া/আপু তোমায় কত ভালোবাসে”, “তোমার সাথে খেলার জন্য ওয়েট করে”। মোদ্দা কথা একজনের আড়ালে অন্যজনের কাছে তার নামে ভালো ভালো কথা বলবেন।

২ জনের খেলনা বা জামাকাপড়ের জায়গা আলাদা থাকবে। যার যার ড্রয়ার বা ড্রেসারে নাম লিখা থাকবে। একজন আরেকজনের জিনিস তার পার্মিশন ছাড়া নিতে পারবে না। যেমন ছোটজনের যদি বড়জনের খেলনা নিতে হয়, আগে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে, “আমি কি এটা দিয়ে খেলতে পারি?” যদি পার্মিশন না দেয় তো ঠিক আছে। সব সময় শেয়ার করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। একজনের খেলার সময় আরেকজনও একই খেলনা দিয়ে খেলতে চাইলেও অনুমতি নিতে হবে, “আমি কি তোমার সাথে খেলতে পারি?” অন্যজন যদি সেই মুহুর্তে দিতে না চায় তবে তাকেও বলতে হবে, “না, আগে আমার খেলা শেষ হোক”। দুজনকেই শেখাতে হবে, মারামারি নয়, কথা বলতে হবে।

সরি বলা শেখাতে হবে। আপনার ছোট বাচ্চা বড়জনকে মারছে? তাকে সরিয়ে নিন ওই জায়গা হতে। শান্ত কন্ঠে বোঝান, এটা কতটা খারাপ কাজ। অন্যকে আঘাত করতে হয়না। ওকে প্রমিজ করতে বলুন যে আর মারবে না। যতক্ষন প্রমিজ না করবে, ততক্ষণ খেলতে যেতে পারবে না। যদিও ওই প্রমিজ তারা ভাংগবেই ভবিষ্যতে, তবুও তাকে দিয়ে এটা করাতে হবে। এরপর তাকে গিয়ে সরি বলতে হবে যাকে মেরেছে তাকে। সরি বলতেই হবে, এটা কে বাধ্যতামূলক করুন। এরপর যেখানে মেরেছে সেখানে চুমু দিয়ে দিতে বা আদর দিয়ে দিতে বলুন। মিল হয়ে যাবে ওদের।

দুজনের মাঝে ঝামেলা হচ্ছে? আগেই যাবেন না। দেখুন ওরা নিজেরা মেটাতে পারে কিনা। যদি মারামারির দিকে টার্ন নেয় ঝগড়া তখন যাবেন। আলাদা করে ওদের কথা /অভিযোগ শুনুন। কথা বলতে দিন ওদের। ওদের কথা শেষ হলে এবার জিজ্ঞাসা করুন ওরা কি চায় আসলে। দুজনের কেউই সমাধান না জানলে আপনি সমাধান দিন। ওটা যদি ওদের পছন্দ না হয় তবে ওরা খেলতে পারবে না আর। তখন ওরা সন্ধি করে নেবে।

সব সন্তানকে আলাদা সময় দিন। যেমন, আপনার এক সন্তান বাইরে হাটতে যেতে চাচ্ছে, তাকে তার বাবার সাথে বাইরে পাঠান, আরেকজন আপনার সাথে খেলতে চাচ্ছে, তার সাথে বসে খেলুন। প্রত্যেকের পছন্দের মূল্য দিন। সবার এক জিনিস করতে ভালো লাগেনা, বাচ্চাদেরও তাই। আপনি ও ওদের বাবা পালা করে ওদের আলাদা আলাদা সময় দেবেন, আর সেটা যেন কোয়ালিটি টাইম হয়।

টুইন বাচ্চাদের যে মারামারি, তা স্বাভাবিক দ্বন্ধ। তাতে হিংসা বা জেলাসি কম থাকে। অনেকেই ভাবেন টুইনদের আলাদা রাখা সম্ভব নয়। তাদের জন্য বলছি টুইনদের ও আলাদা রাখা যায়। ওরা যখন মারামারি শুরু করবে প্রচন্ড, আলাদা রুমে সরিয়ে ফেলুন। বাবা একজনকে নিয়ে সময় দেবে মা আরেকজনকে। কিছুক্ষণ একা থাকলে ওরা বোরিং ও ফিল করবেনা, আর কিছু সময় পর অন্যজনকে দেখলে মারামারির কথা ভুলে যাবে। টুইনরাও কিন্তু বোর হয় সারাক্ষণ একসাথে থাকতে থাকতে, এটা মা বাবা বোঝেনা।

Sibling rivalry কখনোই সম্পুর্ন দূর করা সম্ভব নয়, তবে তা কমিয়ে আনা, unhealthy অবস্থায় যেন না যায়, একজনের সাথে অন্যজনের শত্রুতা বা মারামারি পর্যায়ে যেন না যেতে পারে সেজন্যই এতো সব Rules মেনে চলা দরকার। কারন সবাই চাই sibling দের সম্পর্ক যেন মিষ্টি মধুর হয়, তিক্ততাপূর্ন নয়।

শেষ কথাঃ বাচ্চাদের সম্পর্ক ঠিক রাখার সময় আবার স্বামী স্ত্রী মারামারি ঝগড়াঝাটি লাগিয়ে দেবেন না। তাহলে কিন্তু সব চেষ্টা জলেই যাবে।

Ummey Salma Koli
Working on Early childhood development
Toronto, Canada

ছবি কৃতজ্ঞতা: ফ্রিপিক

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা