সিরিজ ইনডেক্স
১. প্রথম পর্ব
২. দ্বিতীয় পর্ব
৩. তৃতীয় পর্ব
৪. চতুর্থ পর্ব
৫. পঞ্চম পর্ব
প্রল্যাপ্স কি এবং কেন তা বুঝার জন্য পেলভিক ফ্লোর সম্পর্কে আগে জানা প্রয়োজন। পেলভিক ফ্লোর আমাদের শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত পেশী গুলোর একটা। এই পেশি অনেকটা hammock বা বেসিনের মত যা আমদের শরীরের জননেন্দ্রীয় সমূহ, অন্ত্র, মুত্রথলি, রেকটামকে নিজ স্থানে ধরে রাখে।
নারীদের জন্য এই মাসলকে একটা বাস্কেটের তলদেশ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এর দৃঢ়তা কমে গেলে পেলভিক অঙ্গগুলো স্থানচ্যুত হয়ে যেতে পারে। প্রস্রাব/পায়খানা ধরে রাখার সক্ষমতা কমে যেতে পারে (urinary/fecal incontinence)। হতে পারে আরও অনেক ধরনের উপসর্গ।
কি কি ধরনের প্রল্যাপ্স হতে পারে?
১। ব্লাডার বা মুত্রথলি ( cystocele)
২। জরায়ু (uterine prolapse)
৩। পায়ু (rectocele)
৪। ক্ষুদ্রান্ত্র (enterocele)
এছাড়াও মূত্রনালী, ভ্যাজাইনার ভেতরের দেয়ালও প্রল্যাপ্সড হতে পারে। প্রথম দুটি সবচেয়ে কমন। যে কারো দুই বা ততোধিক অঙ্গের একসাথে প্রল্যাপ্স হতে পারে। এছাড়া পায়ুপথেও প্রল্যাপ্স হয়ে থাকে, সে আলোচনা ভিন্ন।
প্রল্যাপ্সের স্টেজ/ধাপ
যেকোন অঙ্গের প্রল্যাপ্স চারটা স্টেজে থাকতে পারেঃ
Grade 1/ Mild: অঙ্গ অল্প কিছুটা স্থানচ্যুত হলে
Grade 2/ Moderate: ভ্যাজাইনার মুখের কাছে চলে আসলে
Grade 3: হাটা চলা বা ভারী কাজ করলে বা নিচে প্রেসার (যেমনঃ হাঁচি, কাশি বা হাঁপানী হলে ইত্যাদি) দিলে আংশিক বেরিয়ে আসলে
Grade 4: সম্পূর্ন বেরিয়ে গেলে
প্রল্যাপ্সের নির্ভুল ধরন আর গ্রেডিং কেবলমাত্র ডাক্তারের পক্ষে রোগীকে দেখে করা সম্ভব।
প্রল্যাপ্সের কারণ
প্রল্যাপ্সের কারন গুলো দেখলে আমরা বুঝবো যে শুধুমাত্র নর্মাল ডেলিভারি হওয়া মা নয় বরং সব নারীর জন্যই এটা সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। প্রল্যাপ্সের আছে কিছু মূল কারণ এবং কিছু শারীরিক অবস্থা প্রল্যাপ্স ত্বরান্বিতকরণে ভূমিকা রাখে। মূল কারণগুলোর মাঝে আছেঃ
- জিনগতভাবে কিংবা জন্মগতভাবে শরীরের মাংসপেশীর শিথিলতা
- বাধাপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রসব
- প্রসবের সময় পারিপার্শ্বিক অংগে ইনজুরি/ক্ষয়ক্ষতি
যেসব অবস্থা প্রল্যাপ্সকে আরো ত্বরান্বিত করে,সেসবঃ
১। লেবার আর ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি
২। স্থুলতা
৩। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য
৪। দীর্ঘমেয়াদী কাশি
৫। জরায়ু অপসারণ বা hysterectomy
৬। মেনোপোজ
উপরের প্রথম কয়েকটি কারণেই পেল্ভিক ফ্লোরের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রেসার পড়ে। যার ফলে মূল কারণগুলোর সাথে এগুলো প্রল্যাপ্স হওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেয়।
পেলভিক ফ্লোরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে-এটি ডায়াফ্রাম, পেটের পেশিসহ অন্যান্য কোর মাসলের সাথে মিলে শরীরের স্ট্যাবিলিটি ঠিক রাখে, মেরুদন্ডকে সাপোর্ট দেয়। পেটের ভেতরের বাতাসের চাপ স্থিতিশীল রাখাও এ পেশীগুলোর কাজ।
অভ্যাসবশত আমরা অনেকেই দাঁড়ানো, বসা বা অন্যান্য কাজে শারীরিক ভারসাম্য মেনে চলিনা। সঠিকভাবে শ্বাস নিইনা। কোর মাসলকে শক্তিশালী রাখার এক্সারসাইজ করিনা।
এই অভ্যাসগুলোর কারনেও পেলভিক ফ্লোরের উপর অনেক প্রেসার পড়ে আর তা দুর্বল হয়ে দৃঢ়তা হারাতে থাকে।
তথ্যসূত্র
- The Sexual Medicine Society of North America (SMSNA)
- Advanced Gynecology
- TEXTBOOK OF GYNAECOLOGY (DC DUTTA)
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor