সিরিজ ইনডেক্স
১. প্রথম পর্ব
২. দ্বিতীয় পর্ব
৩. তৃতীয় পর্ব
৪. চতুর্থ পর্ব
৫. পঞ্চম পর্ব
প্রেগ্ন্যান্সির পরে প্রায় ৫০% নারী প্রল্যাপ্সের কোনো না কোনো উপসর্গে ভোগেন। অনেকের ভুল ধারনা যে নর্মাল ডেলিভারিই এর একমাত্র কারন। কিন্তু ডেলিভারির পদ্ধতি নয় বরং প্রেগন্যান্সির কিছু বিষয়-ই প্রল্যাপ্সের ঝুঁকি বাড়ায়।
যে বিষয়গুলো সাধারণত প্রল্যাপ্স হওয়াতে কাজ করে,সেগুলো নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত জানবোঃ
গর্ভকালীন শারীরিক অবস্থা
নরমাল বা সিজারিয়ান দুক্ষেত্রেই প্রল্যাপ্স হতে পারে যদিও নরমাল ডেলিভারিতে প্রল্যাপ্সের সম্ভাবনা বেশি। প্রেগন্যান্সিতে শরীরের পেশি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি রিল্যাক্স থাকে, পেটের পেশি অনেক প্রসারিত হয়। এ সময়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন পেলভিক ফ্লোরের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই ডেলিভারি যেভাবেই হোক না কেন, প্রল্যাপ্সের সম্ভাবনা রয়েই যায়। বিশেষ করে যারা প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই ওভার ওয়েট তাদের ক্ষেত্রে রিস্ক আরও বেশি।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কন্সটিপেশন প্রেগন্যান্সির একটা কমন সমস্যা। এক্ষেত্রে টয়লেট করার সময় পেলভিক ফ্লোরে প্রচুর চাপ দেয়ার কারনে প্রল্যাপ্স হতে পারে।
ভুল দেহভঙ্গি (Posture)
আমরা দৈনন্দিন জীবনে সঠিক posture না মানায় এমনিতেই পেলভিক ফ্লোরে চাপ পড়ে। প্রেগন্যান্সিতে এর সাথে যুক্ত হয় পেটের অতিরিক্ত ওজন। সব মিলিয়ে পেল্ভিক মাসল অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।
ওজন
প্রেগন্যান্সীতে অনেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওয়েট গেইন করেন, বা বাচ্চাও অনেক সময় বেশি বড় হয়ে যায় যা রিস্ক বাড়ায়।
প্রসবাবস্থা (Labor)
লেবারের সেকেন্ড স্টেজ যদি দীর্ঘক্ষন হয় তাহলে পেলভিক মাসল খুব বেশি সময় ধরে প্রসারিত হয়। মাকে spontaneous পুশের বদলে guided পুশ করতে বাধ্য করা, মায়েরও লেবারের পুশিং স্টেজ সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারণা না রাখা প্রল্যাপ্সের সম্ভাবনা বাড়ায়।
প্রসবকালীন বহিঃসহায়তা (Assisted delivery)
- ভ্যাকুয়াম/ ফরসেপ এসিস্টেড ডেলিভারি প্রল্যাপ্সের রিস্ক কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।
- টানাটানি করে প্ল্যাসেন্টা ম্যানুয়ালি ডেলিভার করা ইউটেরাইন প্রল্যাপ্স ঘটাতে পারে।
সিজারিয়ান সেকশন
সি সেকশন শরীরের প্রধান মাংসপেশীর একটা বড়সড় অপারেশন। এর ফলে পেটের পেশিতে দুর্বলতা তৈরি হয় যা কাটিয়ে ওঠার জন্য core strengthening এক্সারসাইজ করা জরুরি। পেটের পেশির দুর্বলতায় পেলভিক অর্গানগুলো বেশিমাত্রায় পেল্ভিক ফ্লোরে চাপ দেয়। যার কারনে প্রল্যাপ্স হয়।
প্রসবপরবর্তী যত্নের অভাব
প্রসবপরবর্তী বেশ কিছু দিন শরীরের দশ মাসের ধকল কাটিয়ে ওঠার সময়। পেশি, হরমোন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সময়। কিন্তু অনেকে বাধ্য হয়ে আর অনেকে না জানার কারনে immediately স্বাভাবিক হাটাচলা, কাজকর্মে ফিরে যান। এই সময়ে পেলভিক মাসল অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে। তাই একে যথাযথ সেবা আর বিশ্রাম না দিলে প্রল্যাপ্স হয়।
হরমোনগত কারণ
ব্রেস্টফিডিং পিরিয়ডে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। এই হরমোন শরীরের পেশি আর লিগামেন্টগুলোকে টানটান রাখতে সাহায্য করে। এর কমতির কারণে পেলভিক মাসলও কিছুটা রিল্যাক্সড থাকায় প্রল্যাপ্সের সিম্পটম বেশি অনুভুত হয়।
প্রেগন্যান্সির ফলে প্রল্যাপ্স হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের জন্য জরুরি হল প্রেগন্যান্সী আর পোস্টপার্টাম পিরিয়ডে প্রল্যাপ্স ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ধারণা রাখা।
আশার কথা হল যথাযথ যত্নের মাধ্যমে প্রসবের পর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সিম্পটম অধিকাংশেই কমিয়ে আনা যায় ইন শা আল্লাহ।
তথ্যসূত্র
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor