গর্ভধারণ নয়মাসের এক দীর্ঘ যাত্রা। শারীরিক নানা পরিবর্তন আর মানসিক টানাপোড়নে একেক মেয়ের জন্য গর্ভধারণের গল্প একেক রকম। এ যেন গুটিপোকা থেকে প্রজাপতিতে পরিণত হওয়া। প্রতিদিনের শরীর আর মনের এই পরিবর্তনগুলো কম-বেশী সবার হয়। এগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে, নিজের সাথে মিলিয়ে নেয়া অনেকটাই সহজ হয়। গর্ভধারণের পুরো সময়কে মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যায়- প্রথম ট্রাইমিষ্টার (Trimester), দ্বিতীয় ট্রাইমিষ্টার এবং তৃতীয় ট্রাইমিষ্টার। প্রথম ১ থেকে ১৩ সপ্তাহ নিয়ে প্রথম ট্রাইমিষ্টার।
প্রথম সপ্তাহ
প্রথম দিককার সপ্তাহগুলো চলে যায় আদৌ প্রাণের সঞ্চার হলো কিনা, তা বুঝতে। সর্বশেষ মাসিকের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য প্রসবের দিন (Due Date) গণনা করা হয়। এক্ষেত্রে শেষ মাসিকের প্রথম দিনটিকে বিবেচনা করা হয় এবং এই দিনের পর থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গর্ভসঞ্চার হয়। অনেকে, যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করেননি, এমনকি করলেও তাদের এই সময়গুলো টের পাবার আগেই চলে যায়। অনেকে প্রথমবার মাসিকের তারিখ চলে গেলেও ভাবতে থাকেন, বোধহয় কোনো কারণে দেরি করে পিরিয়ড শুরু হচ্ছে হয়ত।
আপনার শরীরে যা পরিবর্তন আসবে
গর্ভধারণের কোনও পরিস্কার লক্ষণ এ সময় দেখা যায় না। তবে কারও কারও দূর্বল লাগতে পারে; ঘনঘন বাথরুমে যাওয়ার দরকার হতে পারে। দ্রুত মেজাজ হারানো (Mood Swing) শুরু হতে পারে। এ লক্ষণগুলো অনেকটা স্বাভাবিক সময়ে মাসিক হওয়ার আগে এবং মাসিকের সময়ে হরমোনগত উঠানামার কারনে ঘটে থাকা পরিবর্তনের মতোই বলে অনেকে এগুলো আলাদা করে ভাবেন না।
অনেকের পিরিয়ড নিয়মিত হয় না বা একদম ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগিয়ে রাখা তারিখের সাথে মেলে না। সাধারণত পিরিয়ডের সাইকেল ২৮ দিনের। তবে কম বা বেশী হতে পারে। কারও আবার অনিয়মিত পিরিয়ডে এক/দুই মাস পরপরও হয়। খুব পরিস্কার কোন লক্ষণ বোঝা না যাওয়ার কারণে, আরও কিছু সময় অপেক্ষা করার প্রয়োজন।
এসময় গর্ভধারণ হলে, বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও শারীরিক পরিবর্তনের শুরু হয়ে যায় ভেতরে ভেতরে। হরমোনের পরিবর্তন, সকালে বমিভাব (Morning Sickness), সবকিছুতে ক্লান্তি শুরু হলো বলে। তবে প্রত্যেকটি মেয়ের শরীরের গড়ন আলাদা। এ পরিবর্তগুলোও তাই এক একজনের শরীরে একেকভাবে আসে। প্রথম থেকেই যদি খাদ্যাভাস স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ না হয়, তবে জটিলতাগুলো পরে ভালোভাবেই চেপে বসার আশঙ্কা থেকে যায়।
বাচ্চার গড়ে উঠা (Development)
সফল গর্ভধারণের এই সময়টিতে বাচ্চাটি এখনও একটা ডিম্বানুমাত্র। ডিম্বানুটি ওভারী থেকে বের হয় গর্ভনালির (Fallopian Tube) ভেতরে ভ্রমণরত থাকে। তবে ঠিক কোন সময়টিতে গর্ভসঞ্চার হবে, সেটি বলা মুশকিল। ডিম্বানুটি একসময় শুক্রানুর সাথে মিলিত হবে, জরায়ুর দেয়ালে বসে যাবে। এরপর কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ভ্রুণটি (Fetus) আকারে বড় হতে হবে থাকবে। তাই প্রথম সপ্তাহের এ সময়টিতে আপনি ঠিক গর্ভবতী নন, কারন গর্ভসঞ্চারের ব্যাপারটি আপনার মাসিক শেষের দুই সপ্তাহ পর ঘটে থাকে। তবে ডাক্তাররা সম্ভাব্য প্রসবের দিন হিসাব করার জন্য সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিনটিকে বিবেচনা করেন।
এই সপ্তাহের টিপস
- শেষের একটি কিংবা দুইটি মাসিকের শুরু এবং শেষ সময় লিখে রাখুন।
- জন্মপূর্ব (Pre-natal) মাল্টি-ভিটামিন খাওয়া শুরু করুন, যা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিনের জোগান দেবে। বিশেষ করে ফলিক এসিড এই সময় ভীষণ প্রয়োজনীয়।
- খাদ্যাভাসের দিকে নজর দিন।
- ক্রনিক অসুখ (ব্লাড প্রেসার, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) থাকলে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যত্নবান হোন।
- প্রিনেটাল কোর্সে ভর্তি হয়ে নিন। এতে প্রেগনেন্সির বিভিন্ন পরিবর্তন কখন হবে, কেন হচ্ছে এবং কীভাবে এসব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। কোর্সের বিস্তারিত জানুন এখানে।
সম্পাদনা: মাহফুজ মানিক
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবরিনা আফরোজ
MBBS, MPH
লেকচারার, ঢাকা কমিউনিটি মেডিসিন কলেজ