বাচ্চার ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন

বিভিন্ন বয়সে বাচ্চাদের ডেভেলপমেন্টের ধরন বিভিন্ন রকম হয়। জন্মের পর প্রথম দিন থেকে শুরু করে এক এক সময়ে বাচ্চার এক একটা নতুন জিনিস শেখা নিয়ে নতুন বাবা-মায়েরা খুব শিহরিত থাকেন। এই বুঝি বসতে শিখলো, এই দাঁত বের হলো, দাঁড়াতে শিখলো এখন কিংবা হাঁটতে।

এই বেড়ে উঠার মাইলস্টোনগুলো খেয়াল করলে একটা বাচ্চা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কিনা, সেটা বোঝা যায়। তবে যেটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এক একটা বাচ্চার বেড়ে উঠার ধরন এক এক রকম। কেউ হয়ত আগে হাঁটল বা কেউ দেরীতে কথা বলল। এগুলো নিয়ে মন খারাপ করার বা চিন্তিত হবার কিছু নেই। তবে সব বাচ্চার জন্য কিছু কমন ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন (Developmental Milestone) থাকে। এখানে এক থেকে দুই বছর বয়সী বাচ্চার ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন কি হওয়া উচিত, তাই দেখবো।

 

ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন (Development Milestone) কি?

নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে গড়পড়তায় বাচ্চারা নতুন যেসব দক্ষতা অর্জন করে, তাই ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন। যেমন হাসতে শেখা, হাত তালি দেয়া, বসা, দাঁড়ানো, কথা বলা ইত্যাদি। সাধারনত ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন দেখে বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক অগ্রগতি বিচার করা হয়।

বয়স যখন এক থেকে দুই বছর

  • এক বছর বয়সী বাচ্চা আত্মবিশ্বাসের সাথে হাঁটতে পারে। এমনকি দৌড়াতেও পারে। তার আশেপাশে কি হচ্ছে, সে ভালোমতো খেয়াল করবে। নতুন মানুষ আর জিনিস আবিস্কার করবে। আয়নায় এবং ছবিতে নিজেকে চিনতে পারবে। বড়দের বা বড় বাচ্চাদের নকল করার চেষ্টা করবে।
  • বাচ্চা তার নিজের পরিচিত মানুষ ও জিনিসের নাম শুনলে আইডেন্টিফাই করতে পারবে এবং সাধারন নির্দেশনা (Simple Instruction) বুঝবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে (যেমনঃ বল নিয়ে আসো, পানির বোটলটা কোথায়, চল যাই)। বাচ্চা কোন কিছু (সোফা, চেয়ার) বেয়ে উঠা শিখবে।
  • এক শব্দ বিশিষ্ট শব্দ বলার চেষ্টা করবে। ১৮ মাস বয়সের মধ্যে বেশ কিছু এক শব্দ বিশিষ্ট শব্দ বলার কথা। ২৪ মাসের মধ্যে ছোট বাক্যাংশ বা ছোট ছোট বাক্য বলবে।
  • এই বয়সী বাচ্চার “বিচ্ছেদ ভীতি” (Separation Anxiety) প্রবল থাকে। সারাক্ষন মায়ের সাথে থাকতে চায়। ২ বছরে গিয়ে এটা আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
  • বাচ্চা নিজের হাতে খেতে চাইবে। কাপড়, মোজা নিজে পড়তে না পারলে, চেষ্টা করতে চাইবে। কাপড় পড়ানোর সময় সহযোগিতা করবে।
  • বাচ্চা পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করা শিখবে। কোন কিছু চাইলে ইশারায় বোঝাবে। বড় খেলনা বা জিনিস নিয়ে হেঁটে বেড়াতে চাইবে।
  • বাচ্চা সক্রিয়ভাবে খেলায় অংশগ্রহন করতে পারবে। বল ছুঁড়ে মারা, পিছন পিছন ছুটে যাওয়া, খুব সহজ ছবিওয়ালা পাজল ব্লক মেলানোর চেষ্টা করা, একটার উপর আরেকটা ব্লক বসানোর চেষ্টা করা-এগুলো করা শুরু করবে। এছাড়া যেকোন ব্যাগ/বাক্স থেকে জিনিস বের করে খালি করা আবার ঢুকানো পছন্দ করবে।
  • বাচ্চার অনুকরন প্রিয়তা ভালোমতো বোঝা যাবে। সে প্রায়শঃই বড়দের অনুকরন করতে চাইবে। যেমন খেলনা ফোনে কথা বলার ভান করা, রান্নার চামচ নাড়া। পুতুলকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, আদর করা। নিজের কাজ নিজে করতে চাইবে।
  • সাধারনত এই সময়ের মধ্যে বাচ্চারা পরিচিত লোকজনকে চেনার লক্ষন দেখাবে। একই সাথে অপরিচিত লোক দেখলে লজ্জা পাবে।

কখন চিন্তিত হবেন?

  • এক বছরের মধ্যে হামাগুঁড়ি না দিলে বা ১৮ মাসের মধ্যে না হাঁটলে।
  • সাধারন নির্দেশনা বুঝতে না পারলে।
  • কথা বা কাজ নকল না করলে।
  • প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসের ব্যবহার না বুঝলে (চামচ, গ্লাস)।
  • ১৮ মাসের মধ্যে অন্তত ছয়টি শব্দ এবং ২৪ মাসের মধ্যে দুই শব্দ বিশিষ্ট বাক্য না বলতে পারলে।
  • আগে শেখা দক্ষতা ভুলে গেলে।

বাবা-মায়ের করনীয়

  • বাচ্চাকে সময় দিন। বাচ্চার সাথে প্রচুর কথা বলুন। বই পড়ে শোনান। বিভিন্ন জিনিস ধরে ধরে নাম বলে দিন।
  • শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের নাম বলুন এবং বাচ্চাকে বলতে উৎসাহ দিন।
  • বাচ্চাকে নতুন জিনিস আবিস্কার করতে সাহায্য করুন ।
  • বাচ্চার সাথে খেলুন। সে যাতে তার পুতুলের সাথে খেলে, খাওয়ায়, আদর করে- এগুলোতে উৎসাহ দিন।
  • বাচ্চাকে নিজ হাতে খেতে আগ্রহী করে তুলুন। চামচ ধরতে দিন। নিজে পানি খেতে দিন।
  • বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে যান। সম্ভব হলে খোলা জায়গায়। অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলার সুযোগ করে দিন।
  • নতুন যাই দক্ষতা সে শিখুক, আপনি যে খুশি হয়েছেন বা চমকে গেছেন , সেটা তাকে দেখান, তাকে সাপোর্ট করুন, প্রশংসা করুন। এতে সে আগ্রহ বোধ করবে।
  • বাচ্চাকে মনোযোগ দিন। শুধুমাত্র হাতে গ্যাজেট (ফোন বা ভিডিও গেইম) দিয়ে বসিয়ে রাখবেন না। দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইম (টিভি, ল্যাপটপ, ফোন, ট্যাবলেট, ভিডিও গেইম) না দেয়াটাই সবচাইতে ভালো।
  • ধৈর্য্য ধরুন। বাচ্চার আবেগের সাথে নিজের ধৈর্য্যকে সমন্বয় করে নিন।
  • বাচ্চার নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। বাসায় বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখুন। সুইচ কাভার দিয়ে ঢেকে দিন। ধারালো ছুরি-কাঁচি, ওষুধ, পরিস্কারক ক্যামিকেল নিরাপদ জায়গায় রাখুন।

ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোনগুলো সাধারনত আগে পরে করে বেশীরভাগ বাচ্চাই অর্জন করে। এগুলো সম্পর্কে বাবা-মায়ের জানা থাকা ভালো। দুই একটা ব্যাপারে দেরি হলে বেশী দুঃশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবেন না। তবে দুইয়ের বেশী ব্যাপার অনুপস্থিত দেখলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

কৃতজ্ঞতাঃ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা